
সংবাদমেইল অনলাইন : | রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২০ | প্রিন্ট
নাগরিকত্ব আইন সংশোধন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও এর কোনো প্রয়োজন ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি আমিরাত সফর করে আসা শেখ হাসিনা গালফ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন। মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদপত্রটির অনলাইন সংস্করণে শনিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে ভারতের সংসদে পাস হয় সিএএ। সংসদে বিলটি পাসের সময় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ‘ধর্মীয় নির্যাতনের’ শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিতে এ আইন করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ দেশান্তরী হয়নি বলে জানিয়ে আসছে ঢাকা।
একদিকে সিএএ, অন্যদিকে আসাম রাজ্যে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশের কারণে ভারত থেকে অনেকে বাংলাদেশে চলে আসছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর ছড়ায়।
তবে এনআরসি প্রকাশের পর ভারত থেকে কেউ বাংলাদেশে আসছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে উল্টো অভিবাসন হচ্ছে না (কেউ আসছে না)। বরং ভারতের জনগণ নানা সমস্যার মধ্যে আছে।’
সিএএ পাস এবং দেশজুড়ে এনআরসি কার্যকর করার ঘোষণা দেয়ার পর ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সেই বিক্ষোভ রক্তপাতেও গড়িয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এনআরসি কার্যকর হলে যেসব ভারতীয় মুসলিম তাদের নাগরিকত্বের নথিপত্র দেখাতে পারবেন না, তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা (এখনো) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সিএএ এবং এনআরসিকে বাংলাদেশ সবসময় ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই দেখে আসছে। ভারত সরকারও বারবার বলে আসছে যে, এনআরসি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এমনকি গত অক্টোবরে আমার নয়াদিল্লি সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যক্তিগত আমাকে একই কথা বলে নিশ্চিত করেছেন।’
বিস্তৃত ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানে যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা সংকট
শেখ হাসিনার মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ সুসম্পর্ক রয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের শুরু মিয়ানমারে। তাদের কাছেই এর সমাধান রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। এখন পর্যন্ত দুবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় সেখানে যেতে চায়নি। ফলে আমাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমার আসলে প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য ১০ লাখের বেশি শরণার্থীদের বোঝা বহন করতে পারবে না। এই সমস্যা থাকলে আমাদের দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত।
কার্বন নিঃসরণ
কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনায় পরিবেশবাদীদের শঙ্কা প্রকাশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের ক্ষতি করবে না। বাংলাদেশ এখন আড়াই শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদন করে। আমরা এটা ২৫ শতাংশে উন্নীত করবো। শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব বেশি কার্বন নিঃসরণ করে না। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছুটা কার্বন ব্যবহার করতে পারা উচিত বাংলাদেশের। উন্নয়ন রুপরেখা বাস্তবায়ন করতে এটা জরুরি।
নতুন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ২৯টি কয়লা খনি তৈরির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে থাকা ৪ কোটিরও বেশি মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ভাঙনেরও ঝুঁকি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রথম কয়লা খনি তৈরির ২২ বছর হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো পরিবেশের ক্ষতি দেখিনি আমরা। আমি ব্যক্তিগতভাবে দিনাজপুরে গিয়ে সেই কেন্দ্র সফর করে এসেছি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। এত বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা সামাল দিতে এমন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ’৯৫ শতাংশ জনগণ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু মানুষ বাড়ছে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। ফলে চাহিদাও বাড়ছে। মোবাইল, কম্পিউটার থেকে শুরু করে ডিজিটাল ক্লাসরুমে এখন বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন।’
প্রাকৃতিক গ্যাসের অভাব
অতীতে বাংলাদেশ বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দশক আগেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল উৎস ছিল গ্যাস। কিন্তু আমাদের গ্যাস কমে যাচ্ছে। তাই কয়লা, তরল জ্বালানি ও পরমাণু শক্তির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। নেপাল, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে জলবিদ্যুতের চুক্তি করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশে ২ দশমিক ৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। দেশজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ৫৩ লাখ সোলার প্যানেল। এছাড়া ছাই বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণ
বাংলাদেশ বারবার প্লাস্টিক নিষিদ্ধের কথা বলে আসছে। ২০০২ সালে একবার পলিথিন নিষিদ্ধ করাও হয়েছিল। এখনো উপকূলীয় অঞ্চলে হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখনও শতভাগ পলিথিন ব্যবহার বন্ধে সফল হয়নি। মূলত কম টাকায় বিকল্প তৈরি করা যায়নি এখনো। তবে পরিস্থিতি পাল্টেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমাদের কাছে বিকল্প আছে। এখন ভুট্টা নিয়ে বায়োগ্রেডেবল ব্যাগ তৈরি করেছি আমরা। এ ছাড়া পাট দিয়েও ব্যাগ তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। আমি এর নাম দিয়েছে সোনালি ব্যাগ। আমাদের পাট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন এটা কমদামে বাজারজাত করা হয়।
Posted ৩:৫০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২০
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.