শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১

চরম সঙ্কটে ফেসবুক

অনলাইন ডেস্ক : | মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট  

চরম সঙ্কটে ফেসবুক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মানুষের কল্যাণ ও নিরাপত্তার চেয়ে মুনাফাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মীর দেওয়া কয়েক হাজার পৃষ্ঠার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমনটাই দেখা গেছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি নিজের পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীও প্রতিনিয়ত কমছে। শুক্রবার ১৭টি মার্কিন সংবাদ প্রতিষ্ঠান প্রকাশিত এক যৌথ প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য ফেসবুক পেপারস।’ মার্কিন কংগ্রেসে ফেসবুকের সাবেক কর্মীর দেওয়া সাক্ষ্যই ওঠে এসেছে ফেসবুক পেপারসে।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেসবুকের ‘কল্যাণকর’- ধারণাটি বদলে গেছে এবং তা নিয়েই পুরো বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। রয়েছে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দ্বন্দ্ব। আর ক্ষতিকর তথ্যের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং সেগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি মহৎ উদ্দেশ্যকে বরাবরই এড়িয়ে চলে এবং প্রকৃত ক্ষতিকর বিষয়কে পাশ কাটিয়ে বরং অনেক সময় নিজেরা সমস্যা তৈরি করে। গভীর সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া বা উপেক্ষা করার অনেক উদাহরণ পেয়েছেন ফেসবুক পেপারসের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণকারীরা। খবর এএফপি ও সিএনএনের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসবের দায় চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের ওপর বর্তায়। জাকারবার্গ কোম্পানিতে একক কর্তৃত্ব খাটান। ফেসবুক দিয়ে তিনি তথ্য সংগ্রহ করে প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে ছড়িয়ে দেন।
সাইরাকাস ইউনিভার্সিটির যোগাযোগের অধ্যাপক জেনিফার গ্রিগিয়েল কয়েক বছর ধরে ফেসবুক পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত এসব কিছুর জন্য জাকারবার্গই দায়ী, যিনি কোম্পানির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি সব সময় কোম্পানির উন্নতি করে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে নিজের ক্ষমতা বাড়াতে চেয়েছেন।
জাকারবার্গ কোম্পানিতে বিভিন্ন কৌশলে নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করে রেখেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। কোম্পানির বেশিরভাগ ভোটিং শেয়ার নিজের দখলে রেখেছেন এবং তার চারপাশের সেইসব বোর্ড অব ডিরেক্টর রেখেছেন, যারা তার কথার বাইরে কোনো কথা বলে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আমেরিকা ও ইউরোপে ফেসবুক ব্যবহারকারী বাড়ছে না। শুধু তাই নয়, কোম্পানিটি নিজের গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে গুরুত্ব হারাচ্ছে। কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের পরিষ্কার কোনো পথও দেখতে পারছে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে ফেসবুক সম্পর্কে তরুণ-যুবারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারা বলছে, এটা পুরান হয়ে গেছে। যদিও ফেসবুক বলছে, এখনো কিশোর-কিশোরীরা ব্যাপকভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছে। তবে টিকটক ও স্ন্যাপচার্টকে নিজেদের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে ফেসবুক।
এদিকে আমেরিকা ও ইউরোপের বাইরে ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে ফেসবুক। আর সেখানেই সমস্যাটা তৈরি হয়েছে বেশি। কারণ সেসব দেশ সম্পর্কে, তাদের ভাষা সম্পর্কে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তেমন জানে না। স্থানীয়ভাবে ঘৃণা বা গুজব ছড়ানো রোধ কিংবা সহিংসতা রোধে কর্মী ও প্রযুক্তি না দিয়েই তারা ব্যবহারকারী বাড়িয়েছে। ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের কথা বলা যায়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনে ফেসবুকের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু ফেসবুক এইসব স্বীকার না করে, গুরুত্ব না দিয়ে বা প্রতিরোধ না করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। তারা কেবল লাভের ব্যাপারে ভেবেছে। আর এতে করে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি, মানবপচার, এমনকি কিশোর কিশোরীদের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। মুনাফার প্রশ্নে এসবকে সব সময় পাশে সরিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। কীভাবে সর্বোচ্চ মুনাফা করা যায় তাই শুধু ভেবেছে।
সোফি ঝাং নামে ফেসবুকের সাবেক এক ডেটা সায়েন্টিস্ট বলেছেন, ফেসবুক মানুষের জন্য বিশ্বকে ভালো জায়গা হিসেবে নির্মাণ করে দিচ্ছে-এই বিষয়টির ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের শতকরা কতজন কর্মী বিশ্বাস করে তার উপর নিয়মিত জরিপ করে।
তিনি বলেছেন, তিনি যখন যোগ দিয়েছিলেন তখন প্রতিষ্ঠানের ৭০ ভাগ কর্মী সেটা বিশ্বাস করতো। আর ২০২০ সালের শরতে দুই বছরের বেশি সময় পর যখন তাকে চাকরিচ্যুত করে প্রতিষ্ঠানটি তখন সেই হার ছিল ৫০ শতাংশ। যদিও প্রতিষ্ঠানটি তাদের সেই হার এখন কত শতাংশ তা বলেনি।
এদিকে ফেসবুক পেপারস প্রতিবেদন প্রকাশের পর কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সঙ্কটে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি কাউন্সিল অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ হাজার হাজার পৃষ্ঠার তথ্য এবং কংগ্রেসকে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মকর্তা ফ্রান্সেস হাউগেনের আইজীবীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এই ১৭টির মধ্যে সিএনএন একটি।
সিএনএনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ফেসবুকের একটি দল কীভাবে মানুষের মধ্যে মতভেদ ও সহিংসতা তৈরি করে এবং ভাষা ইংরেজি নয় এমন দেশের কনটেন্ট কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া মানব পাচারকারীরা এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে কীভাবে মানুষকে নির্যাতন করে। প্রায় মাসব্যাপী ফেসবুক সম্পর্কে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে তারপর প্রকাশ শুরু হয়। এর আগে হাউগেনের ফাঁস করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জার্নালে ‘ফেসবুক ফাইলস’ নামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে মেয়েদের ওপর ইনস্টাগ্রামের প্রভাবসহ অন্যান্য বিষয়গুলো উদ্বেগজেনক বলেছিল। আর তা নিয়ে ফেসবুকের নিরাপত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রধান আন্টিগোন ডেভিসকে সিনেটে সাব-কমিটির শুনানিতে উপস্থিত হতে হয়েছিল। হাউগেন নিজেও এই সাব-কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যতে হাউগেন বলেন, ফেসবুকের পণ্য শিশুদের জন্য ক্ষতিকর, ভয়াবহ বিভাজন ধরে রাখে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়। সাব কমিটির সদস্যরা জাকারবার্গকেও তলব করেছেন।
এদিকে শুক্রবার ফেসবুকের আরও একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিটির কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনিও হাউগেনের মতো একই অভিযোগ করেছেন। তবে ফেসবুকের মুখপাত্র এক বিবৃবিতে সিএনএনকে বলেছেন, হ্যাঁ এটা আমাদের ব্যবসা এবং আমরা মুনাফা করি। কিন্তু মানুষের কল্যাণ বা নিরাপত্তার বিনিময়ে তা করি সেটা ভুল।-সমকাল

Facebook Comments Box


Comments

comments

advertisement

Posted ২:০১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত