বিশেষ প্রতিনিধি :: | বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট
বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ’ পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। নির্ধারিত কাজের মেয়াদ উর্ত্তীন্ন হয়ে গেলে পূণরায় সরকার সেই কাজের মেয়াদ বাড়িয়েছিলো ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ কোম্পানির সাথে। কিন্তু সেই মেয়াদও অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় সাম্প্রতি রেল মন্ত্রনালয় ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের সাথে চুড়ান্তভাবে চুক্তি বাতিলের সিন্ধান্ত নেয়। চুক্তি বাতিলের খবর পেয়ে পূণরায় নব-উদ্যমে কাজ শুরু করেছে ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’ প্রতিষ্টান।
জানা যায়, ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর’ দীর্ঘ ৫২ কিলোমিটার রেললাইন পূর্ণবাসন বাস্তবায়নের কাজ পায় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি স্বাক্ষর করলেও নির্ধারিত মেয়াদের এক বছর পরও ২৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্প কাজের ধীর গতি, গাফিলতি আর দীর্ঘ সময় ধরে কাজ বন্ধ রাখায় রেলমন্ত্রণালয় যখন চুক্তি বাতিলের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই সংস্কার কাজে তৎপর হয়ে উঠেছে ওই ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ব্রিটিশ আমলে ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকা ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর’ রেলপথটি ছিল এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম ভরসাস্থল। কিন্তু ঘনঘন দুর্ঘটনা ও আর্থিক লোকশানের কারণে ২০০২ সালে গুরুত্বপূর্ণ এ রেলপথটিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় তৎকালীন বিএনপি জোট সরকার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে রেলপথ পুনঃস্থাপন প্রকল্প অনুমোদন পায়। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেবে। ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের পুরোটাই ডুয়েলগেজ লাইন করা হবে। এরমধ্যে ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনের কাজ হবে। ওই বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদির বাংলাদেশ সফরকালে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়ে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ ২০১৮ সালের মে মাসে পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের মে মাসে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু কাজের ধীরগতি আর নানা গাফিলতিতে এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ সম্পন্ন করে মাত্র ১৪-১৫ ভাগ। গত অক্টোবরে নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও ছয়মাস।
রেলওয়ে সূত্র জানা যায়, গত বছরের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখায় এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত কাজ শুরুর তাগিদ দেওয়া হয়। এতেও দৃশ্যমান কাজ না হওয়ায় ৯ নভেম্বর ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ঢাকা অফিসে ভারতীয় হাইকমিশনের রেলওয়ে উপদেষ্টা ও ঠিকাদারের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ নভেম্বর কাজ চলমান না থাকায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাবে অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি করোনার অজুহাতসহ নানা বাহানা তুলে ধরে। এতকিছুর পরও কাজ শুরু না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি বাতিলের মত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সরেজমিনে এই রেলপথের লাইন ও ব্রিজের অসমাপ্ত নির্মাণ কাজসহ বিভিন্ন স্থানে কাজ চলতে দেখা গেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, প্রায় ৬-৮ মাস ধরে কোন কাজ চলতে দেখেননি। গত ১০-১২দিন ধরে রেললাইনের কাজ পূণরায় শুরু করেছে শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা বলেন, বারবার কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণকে নির্দেশনা দেয়া হলেও তারা গুরুত্বই দিচ্ছে না। ফলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এরপরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে করা নির্মাণ চুক্তি বাতিলের বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে, ইআরডি এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া একমত পোষণ করেছে। সবশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ প্রকল্পের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় সভা আহ্বান করা হয়েছে।
ভারতীয় রেল নির্মাণ কোম্পানী ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ কোম্পানীর চিফ প্রজেক্ট ম্যানেজার জোবায়ের আহমদ কাজ বন্ধ ও চুক্তি বাতিলের খবর স্রেফ গোজব দাবী করে বলেন, করোনা প্রভাবে ৭ থেকে ৮ মাস কাজ বন্ধ থাকার পর চলিত বছরের ৬ জানুয়ারী থেকে পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৭০-৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শ্রমিক প্রজেক্টে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ি আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই শতভাগ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
কুলাউড়া রেলওয়ের উদ্বর্তন সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) জুয়েল হোসাইন জানান, ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর’ রেলপথের কাজে দ্বীরগতির কারনে শুনেছি রেল মন্ত্রনালয় কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানীর সাথে চুক্তি বাতিলের আলোচনা চলছে। শেষতক চুক্তি বাতিলের বিষয়টি কি হলো আমার জানা নেই। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে আবার কাজ শুরু করেছে তারা।
Posted ১২:৫৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.