শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১

কুলাউড়া মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট  

কুলাউড়া মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি করার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের মধ্য অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ স্বজনপ্রীতি প্রাধান্য পেয়েছে। চলতি বছরে ১ জানুয়ারী পাঠ্যপুস্তক দিবসে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বই বহন খরচ বাবদ টাকা মাধ্যমিক স্কুলগুলোকে দেয়ার কথা থাকলেও না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ।


এছাড়া জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ কুলাউড়া উপজেলা কমিটি সরকারি বিধি মোতাবেক ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করার কথা। কিন্তুু সরকারী নিয়মের তোয়াক্কা না করে শিক্ষা অফিসার ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেছেন। কমিটিতে পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আহবায়ক, কুলাউড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে সদস্য, ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষকে সদস্য, আলী আমজদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষকে সদস্য, কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সদস্য, নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কো-অপ্ট সদস্য, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে সদস্য সচিব করে কমিটি করা হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পদাধিকার বলে সদস্য করার কথা থাকলেও তাকে করা হয়েছে কো-অপ্ট সদস্য। উপজেলার মধ্যে সেরা ফলাফলের ভিত্তিতে একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত করার কথা কিন্তু সেখানে তিনি দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কমিটিতে সদস্য করেছেন।


অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সাল ও চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক দিবসে সরকার কর্তৃক উপজেলার ৩৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়। বইগুলো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত বহন বাবদ প্রত্যেক বছর একটি থোক বরাদ্ধ আসে। কিন্তুু উপজেলার সবক’টি মাধ্যমিক স্কুল সেই বরাদ্ধ থেকে একটি টাকা এখনো পাননি। সবটাকা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার নিজে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ছুঁড়ছেন মাধ্যমিক প্রধান শিক্ষকগণ।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কুলাউড়ায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৮বছর থেকে সরকারী নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করেই তিনি স্বীয় পদে কুলাউড়ায় কর্মরত রয়েছেন। সপ্তাহে অফিস করেন দুই থেকে তিনদিন। চাকরী করেন কুলাউড়ায় আর বসবাস করেন মৌলভীবাজারে। প্রতি সপ্তাহে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা দাপ্তরিক কাজের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে আসেন। কিন্তুু অফিসে এসে দেখতে পান শিক্ষা অফিসারের চেয়ার আছে, অফিসার নেই। এভাবে দীর্ঘদিন থেকে কাজের সুবিধা নিতে আসা বিভিন্ন শিক্ষকদের নানা ভোগান্তি ও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এ নিয়ে কুলাউড়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও অন্যান্য শিক্ষকরা তাঁর এমনসব কর্মকান্ডে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। সবাই বলতেছেন কোন খুঁটির জোরে মোঃ আনোয়ার দীর্ঘদিন থেকে কুলাউড়ায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন।


কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে কুলাউড়া সোনালী ব্যাংকে একটি হিসাব খোলা হয়। বরাদ্দকৃত টাকাগুলো সেই ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা হবার কথা। কিন্তুু মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোন বরাদ্দ আমরা পাইনি। যারফলে আমরা বিদ্যালয় তহবিল থেকে টাকা খরচ করে বইগুলো উপজেলা থেকে বিদ্যালয়ে বই বহন খরচ যোগান দেয়া হয়। আর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে আমরা দাপ্তরিক কাজের জন্য গেলে শিক্ষা অফিসারকে পাইনা। এতে যেমন উপজেলা মাধ্যমিক অফিসের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে তেমনি সাধারণ শিক্ষকগণও শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ারের বিভিন্ন নিয়ম বহির্ভূত কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। তবে উপজেলায় বেশি সময় ধরে চাকুরী করার সুবাধে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সঠিক নয়। দুই বছর আগে বই বহন বাবদ বিদ্যালয়ের নামে নামে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়েছে। সমগ্র উপজেলায় চলতি বছরে প্রায় ১ লাখ ১৭হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। বরাদ্দকৃত অর্থ আমাদের ব্যবস্থাপনায় খরচ হয়ে গেছে, এরমধ্যে যতসামান্য কিছু অর্থ বিদ্যালয়ের জন্য রয়েছে। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে কমিটি গঠনে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারী বিধি মোতাবেক এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে আমার কোন কর্তৃত্ব নেই।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুল ওদুদ বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ওই অর্থ বই বহন ব্যবস্থাপনার খরচ বাদে অবশিষ্ট অর্থ বিদ্যালয়গুলোতে দেবার কথা, কেন দেয়া হয়নি সেটা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জিজ্ঞেস করবো। চলতি বছরের অভিযোগটি আমি খতিয়ে দেখবো।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আবুল লাইছের কাছে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ কমিটি বাস্তবায়ন করে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। নিয়মের মধ্যে দিয়ে কমিটি হবার কথা। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ৩:১১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৯

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত