মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০

স্বল্পমূল্যে ইট দেওয়ার কথা বলে ১৩৭ জন ব্যক্তির কাছ থেকে ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ-

কুলাউড়ায় ৮ প্রতারণা মামলার পলাতক আসামি মানিক বর্ধন আটক

কুলাউড়া সংবাদদাতা :: | সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট  

কুলাউড়ায় ৮ প্রতারণা মামলার পলাতক আসামি মানিক বর্ধন আটক

কুলাউড়ায় ৮টি প্রতারণা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী সেই প্রতারক মানিক বর্ধনকে আটক করেছে পুলিশ।

শুক্রবার ২১ অক্টোবর রাত ১১টায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক মানিককে আটক করা হয়। আটককৃত মানিক বর্ধন কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের মধ্য হিংগাজিয়া গ্রামের ভূপেন্দ্র বর্ধনের ছেলে।


সামপ্রতি কম দামে ইট দেওয়ার নামে ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ নিয়ে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

থানা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুছ ছালেকের নেতৃত্বে এসআই অপু কুমার দাস গুপ্ত, এএসআই আরিফুল ইসলাম ও মো. রুমান মিয়া সঙ্গীয় ফোর্সসহ শেরপুরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে মানিককে গ্রেপ্তার করেন। ওসি আব্দুছ ছালেক জানান, গ্রেপ্তারকৃত মানিকের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা ও ওয়ারেন্টের অভিযোগ রয়েছে। সে দীর্ঘদিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপনে ছিল। শুক্রবার রাতে তাকে আটক করে শনিবার ২২ সেপ্টেম্বর সকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে পাওনাদাররা তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে এনআইঅ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারায় সিআর মামলা নং-১৪৮/২০, ১৫৩/২০, ১৪৩/২০, ১৫৪/২০, ১৭৩/২০, ৩৮১/২০, ২৫/২১, ১৯৯/২২, ৩৪০/২০ দায়ের করেন। পরে তাঁর বিরুদ্ধে ৮টি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।


স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটককৃত মানিক বর্ধন উপজেলার ব্রাহ্মণবাজারস্থ ইট ব্যবসায়ী নজিবুর রহমান ওরফে মোহাম্মদ আলীর মালিকানাধীন মেসার্স এমএনএইচ ব্রিকস ফিল্ডের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের নিকট কাঁচা ইট বিক্রি করে প্রায় ১৩৭ জনের কাছ থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ওই ব্যক্তিদের ইট বা টাকা না দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে পলাতক হন। এদিকে প্রতারণার অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এম এন এইচ ব্রিকস্ ফিল্ডের মালিক নজিবুর রহমান (মোহাম্মদ আলী) ও ব্যবস্থাপক মানিক বর্ধনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছিলেন, গত ১০ বছর ধরে স্বল্প মূল্যে ইট দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ধাপে কুলাউড়ার প্রায় ১৩৭ জন মানুষের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় ইট না দিয়ে নানান টালবাহানা শুরু করেছিলেন নজিবুর রহমান ও মানিক বর্ধন। বর্তমানে মানিক বর্ধন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও ইট ভাটার মালিক নজিবুর রহমান প্রকাশ্য এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অনেক ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে কয়ছর রশীদ, মুহিবুর রহমান জাহাঙ্গীর, আজাদ আলী, আবুল কাসেম উসমানী, জসিম উদ্দিন, রুবেল আহমদ ও জালাল উদ্দিনসহ ১৫-২০ জন ব্যক্তি বলেন, ওই সময় তাদের সাথে স্বল্পমূল্যে ইট দেয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ইট ভাটার মালিক নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যারকারণে আজও অবধি ভুক্তভোগীরা তাদের টাকাগুলো ফেরত পাননি।


কয়ছর রশীদ ও জসীম উদ্দিন বলেন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিভিন্ন ধাপে ভাটার মালিক নজিবুর রহমান ও ব্যবস্থাপক মানিক বর্ধন তাদের কাছ থেকে এক কোটি ১৬ লাখ টাকা, চুনু মিয়ার কাছ থেকে ৪১ লাখ, মুহিবুর রহমান জাহাঙ্গীর তিন লাখ ৫০ হাজার, আব্দুস সালাম ৭ লাখ, ইউসুফ আলী ৩০ লাখ, আবুল কাশেম ওসমানী এক লাখ ৫০ হাজার, সমোজ মিয়া ১ লাখ ৯২ হাজার, তজম্মল আলী ১ লাখ ২৬ হাজার, আজাদ আলী ১ লাখ ৬০ হাজার, মসুদ আহমদ ৩ লাখ ৫০ হাজার, রুবেল আহমদ ৯ লাখ, গিয়াস আহমদ ৪ লাখ ৫০ হাজার, ওসমান আলী ৩ লাখ, নাজমা বেগম ১ লাখ, খুশবা বেগম ৩ লাখ, মিছবা বেগম ৩ লাখ ৭০ হাজার, লোকমান মিয়া ৬ লাখ ৬০ হাজার, মতিন মিয়ার ৫ লাখসহ ১৩৭ জন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। বিনিময়ে সবাইকে ভাটার ব্যবস্থাপক মানিক বর্ধনের স্বাক্ষরিত একটি রশিদ দেওয়া হয়েছিল। ভুক্তভোগীরা তাদের পাওনা টাকার জন্য ভাটার মালিক নজিবুর রহমান ও যাদের মাধ্যমে ইট কেনার জন্য টাকা দেয়া হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

ইট ভাটার ব্যবস্থাপক গ্রেপ্তারকৃত মানিক বর্ধনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তিনি ওই ভাটার ব্যবস্থাপক মাত্র। আর নজিবুর রহমানসহ আরো দুইজন ইট ভাটায় অংশীদার আছেন। আমার মাধ্যমে সকালে-বিকালে এসে ভাটার মালিক নজিবুর রহমান টাকা নিয়েছেন। মানুষের কাছ থেকে কম দামে ইট দেয়ার জন্য অগ্রিম টাকা নিয়ে এখন আমি পড়েছি বেকায়দায়।

এ ব্যাপারে ইট ভাটার মালিক নজিবুর রহমান মোহাম্মদ আলী শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, বর্তমানে ইটভাটার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, একসময় ছিল। ২০১৬ সালে আমার ইট ভাটাটি মানিক বর্ধনের কাছে লিজ দিয়েছি যার চুক্তিপত্র আমার কাছে আছে। ব্যবস্থাপক মানিকের কাছ থেকে সব টাকা আপনি নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, ভাটার ব্যবস্থাপক মানিক বর্ধন সবকিছু জানেন। তার সাথে গ্রাহকরা লেনদেন করেছেন।

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ১২:৪২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০২২

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত