কুলাউড়া সংবাদদাতা :: | বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের শরীফপুর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন চার্জশিটভুক্ত মামলার প্রধান আসামী, ছাত্রদলের নেতা হাবিবুর রহমান শিপু। যিনি মামলায় কিছুদিন জেলহাজতেও ছিলেন। সেই ছাত্রদল নেতা শিপু সম্প্রতি শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ায় এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাবিবুর রহমান শিপু স্থানীয় শরীফপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলেন। ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ে পদ পাওয়া নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে নিজের ফেসবুকে নিয়মিত পোস্ট দিতেন শিপু এবং নিজেও ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী ছিলেন। পরবর্তীতে নিজের অবস্থান শক্ত করতে বিভিন্ন স্থানে নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিতেন। গত বছরের ১৫ মে রাতে শরীফপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা, ন’মৌজা খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সদস্য ও সমাজকর্মী মো. আবুল হোসেনের ওপর পূর্ব বিরোধের জেরে হাবিবুর রহমান শিপুর নেতৃত্বে তার সহযোগিরা হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে। ওই মামলার (নং-১৪, ১৭/০৫/২০২১ ইং) চার্জশিট ভুক্ত প্রধান আসামীও হলেন হাবিবুর রহমান শিপু। শিপু নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিলে স্থানীয় শরীফপুর ইউপি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মোবারক আলী ও সম্পাদক মুহিবুর রহমান গত বছরের ১৭ মে দলীয় প্যাডে আবুল হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং হামলার সাথে জড়িত প্রধান অভিযুক্ত শিপু তাদের দলের কোন কর্মী বা নেতা নন বলে জানান। শিপুসহ হামলার সাথে জড়িতদের ছাত্রদল নেতা ও ছাত্রশিবিরের সক্রিয় কর্মী বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রেস রিলিজে। এরপর শিপু স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সুপারিশে সম্প্রতি শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের শরীফপুর ইউনিয়ন শাখার সভাপতির পদ ভাগিয়ে নেন।
স্থানীয় একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, শিপু ছাত্রদলের রাজনীতি করতো। এলাকায় তাঁর চলাফেরা সন্ত্রাসী ও উৎশৃঙ্খল স্বভাবের। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির বিষয়টি স্থানীয় নেতাকর্মীদের দৃষ্টিগোচর হলে শিপু দলের কোন কর্মী বা নেতা নন এ বিষয়ে একটি দলীয় প্রেস রিলিজ দেওয়া হয়।
১৩ ফেব্রুয়ারি শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কুলাউড়া শাখার আহ্বায়ক ফয়জুর রহমান ফয়েজ ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সায়েম আহমদ কয়েছ স্বাক্ষরিত একটি প্যাডে হাবিবুর রহমান শিপুকে সভাপতি করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট শরীফপুর ইউনিয়ন কমিটি প্রকাশ করেন। যা স্থানীয় পদ প্রত্যাশীদের কাছে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। তাঁদের দাবি, শিপু ছাত্রদল থেকে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কমিটিতে সভাপতি হওয়ায় দলের নাম ভাঙিয়ে অপরাধের রাজত্ব সৃষ্টি করবে। দল নয় তাঁর মূল উদ্দেশ্য নিজের অবস্থান শক্ত করার লক্ষ্য। এজন্য সে কিছু নেতাকর্মীকে দিয়ে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কমিটিতে সভাপতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে শরীফপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মোবারক আলী মুঠোফোনে বলেন, শিপু ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মী নয়। এমনে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আসা-যাওয়া আছে। শুনেছি সে ছোটবেলায় ছাত্রদলের রাজনীতি করতো তবে কোন পদ-পদবীতে ছিলনা বলে আমার মনে হয়না। এখন দেখলাম সে শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের সভাপতি হয়েছেন।
এ ব্যাপারে হাবিবুর রহমান শিপু মুঠোফোনে বলেন, আমি ছাত্রদলের কোন পদ পদবীতে নেই, থাকলে প্যাডে আমার নাম থাকতো। এদিকে শরীফপুর ইউপি ছাত্রলীগের ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ ৭ জন নেতার স্বাক্ষরিত প্যাডে আপনি ছাত্রলীগের নেতা বা কর্মী নন আপনি ছাত্রদল নেতা এমন প্রশ্নের জবাবে শিপু বলেন, আমি ছাত্রলীগের কোন পদে নেই। দুই তিন বছর ধরে আমি আওয়ামীলীগের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। ছাত্রলীগের নেতারা যখন বিবৃতি দিয়েছিলেন তখন আমি সামনে ছিলাম না। তারা যেটা ভালো মনে করছে সেটা করেছে। বিস্তারিত জানতে হলে আপনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি-সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ বিষয়ে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কুলাউড়া শাখার আহ্বায়ক ফয়জুর রহমান ফয়েজ মুঠোফোনে বলেন, আমাদের দলের সদস্যসহ অনেক শোভাকাঙ্খী জানিয়েছেন যে, শিপু একসময় ছাত্রদলের রাজনীতি করতো। সে আমাদের জানিয়েছিলো ছাত্রদলের নেতাদের সাথে সম্পর্ক বেশি, সবসময় চলাফেরা করতো। তবে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সুপারিশে তাঁকে শরীফপুর ইউনিয়ন কমিটিতে সভাপতি পদ দিতে হয়েছে। বর্তমানে সে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে।
Posted ৪:০৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.