শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১

কুলাউড়ায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ’র অভিযোগ স্কুল দফতরির বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৪ জুন ২০২১ | প্রিন্ট  

কুলাউড়ায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ’র অভিযোগ স্কুল দফতরির বিরুদ্ধে

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণের টাকা আত্মসাত করেছে কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের নন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি রুবেল আহমদ। এমন অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক কৃপাময় চক্রবর্তী বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না বললেও অভিভাবকরা উনার উপরও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এদিকে বিষয়টি সমাধানের জন্য উত্তেজিত অভিভাবকরা দফতরি রুবেলকে হণ্যে হয়ে খুঁজছেন।

জানা যায়, করোনা মহামারীর মধ্যে সরকার গত তিন মাসে এক কোটি শিক্ষার্থীদের মায়ের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির টাকা পাঠানো হয়েছে। একইভাবে গত সপ্তাহে টাকা আসে কুলাউড়ার নন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মায়ের মোবাইলেও। জনপ্রতি শিক্ষার্থী ৯শত টাকা করে পায়। তবে প্রতারক রুবেল অভিভাবকদের পিন নাম্বার ব্যবহার করে সেই টাকা উত্তোলন করে নেয়। অধিকাংশ অভিভাবকরা যখন উপবৃত্তির টাকা তুলতে নগদ সেন্টারে যায় তখন তাঁরা দেখতে পান তাদের একাউন্টের টাকা উত্তোলন হয়ে গেছে। পরে খুঁজ জানতে পারেন স্কুলের দফতরি সেই টাকা কৌশলে পিন নাম্বার ব্যবহার করে আগেই তুলে নিয়ে গেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে কিছু সংখ্যক অভিভাবকদের কাছে সাড়ে ৪শত টাকা করে ফেরত দেয় রুবেল। পরিস্থিতি সামলাতে অন্যান্য অভিভাবকদের টাকা ফেরত দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় বলে জানান একাধিক অভিভাবক। নন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৮৪জন শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পান বলে জানা যায়। তবে রুবেল কতজনের টাকা আত্মসাত করেছে তা এখনো জানা যায় নি।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গতকাল রোববার বিকেলে প্রায় অর্ধশতাধিক অভিভাবক রুবেলকে খুঁজতে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন। ওই সময় প্রধান শিক্ষক কৃপাময় চক্রবর্তীসহ দুইজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ রুবেল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্যরা রুবেলকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন বলে বের হয়ে যান। উত্তেজিত অভিভাবকরা টাকার সমাধান চাইলে প্রধান শিক্ষক সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। অভিযুক্ত রুবেলকে খুঁজতে তার বাড়ি ও কুলাউড়া সরকারি হাসপাতালে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সেটা বন্ধ পাওয়া যায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের নির্দিষ্ট মোবাইলে ‘নগদ’ একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করানো হয়। যাদের সিম ছিলো না তারা তাৎক্ষনিক নতুন সিম ক্রয় করে ‘নগদ’ রেজিষ্ট্রেশন করেন। ওই সময় দফতরি রুবেল কৌশলে ‘নগদ’ এর পিন নাম্বার সংগ্রহ করে রাখে। অনেক অভিভাবকের পুরনো সিম থাকলেও দফতরি রুবেল জোরপূর্বক নতুন সিম ক্রয় করায়। আরও জানা যায়, যাদের ‘নগদ’ একাউন্টে টাকা এসেছে অথচ পিন নাম্বার নাই তাদের ঘরে গিয়ে বিভিন্ন প্রতারণার কৌশল নিয়ে ওই মোবাইল থেকে টাকা নিজের একাউন্টে সেন্ড করে রুবেল। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, তাদের মোবাইলে কোন টাকা আসে নি। বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানালে তিনি কোন সদুত্তর দেননি।

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক কৃপাময় চক্রবর্তী জানান, অনেক অভিভাবক আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছি। চেয়ারম্যান আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টি তিনি সমাধান করে দিবেন।


স্থানীয় বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ সুইট বলেন, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি জেনেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবে তবে আগে অভিভাবকদের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য রুবেলকে বলা হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুলাউড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে রুবেলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগী অভিভাবকরা লিখিত অভিযোগ দিলে যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ১০:৫৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৪ জুন ২০২১

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত