মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ- রয়েছে ৫টি মামলা

কুলাউড়ায় মন্দিরের মহারাজের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি :: | সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২ | প্রিন্ট  

কুলাউড়ায় মন্দিরের মহারাজের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও দুর্নীতির  অভিযোগ

কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের সিটিএস নামক মন্দিরের ধর্মযাজক বা গুরু মহারাজের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, অর্থআত্মসাতসহ ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও নারীপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কথিত এই মহারাজের বিরুদ্ধে দেবোত্তর সম্পত্তি আইনে, সাইবার পিটিশন আইন এবং সিআরসহ ৫টি মামলা চলমান রয়েছে। বর্তমানে গা ঢাকা দেয়া এই মহারাজকে নিয়ে স্থানীয় হিন্দু (সনাতনী) সমাজের লোকজনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

কুলাউড়া উপজেলাসহ মন্দিরে আগত লোকজন এই গুরুমহারাজকে যতি মহারাজ হিসেবে চেনেন। পাসপোর্ট অনুযায়ী তার প্রকৃত নাম প্রদীপ বিশ্বাস। ভারতের কলকাতা নদিয়া পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা (পাসপোর্ট নং জেড ২৬০৮১৫৮) এই ব্যক্তি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ভারত থেকে এসে ২০০৮ সালে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের পুসাইনগরে শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর দেবালয় নামক একটি মন্দিরকে জাল দলিলমুলে এবং নিজেকে পুসাইনগরের বাসিন্দা উল্লেখ করে মন্দিরের নাম পরিবর্তণ করে সিটিএস মন্দির হিসেবে নাম দেন।


কথিত এই গুরুমহারাজ অতি অল্প সময়ে বিশাল ভক্তকুল গড়ে তুলেন। সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীরা সরল বিশ্বাসে মন্দিরে মোটা অঙ্কের অনুদান দিতে থাকেন। কোটি কোটি টাকা অনুদান নিয়ে গড়ে তুলে দ্বিতল বিশিষ্ট মন্দির। মন্দিরে ৩টি দানবাক্স বসানো হয়। সেই সাথে তার ভক্তকুলের কাছে ১৮শ দানবাক্স বিলি করেন। সব মিলিয়ে আসতে থাকে কাড়ি কাড়ি টাকা। সবক’টি দানবাক্সের চাবি এই গুরুমহারাজের কাছে। তিনি খুলে গ্রহণ করেন দানবাক্সের তালা আর গ্রহণ করেন তাতে রক্ষিত টাকা পয়সা। মোটা অঙ্কের টাকায় বদলে যেতে থাকে গুরুমহারাজের চালচলন। মন্দিরে আসলে কিছু অবস্থান করে বেশিরভাগ সময় শিষ্যদের বাড়িতে সিলেট শহরে কাটান। রাজধানী ঢাকার তাতীবাজারের গঙ্গা টাওয়ারের ৫ম তলায় সিটিএস মন্দিরের আরেকটি কার্যালয় স্থাপন করেন। সেই অফিসের মাধ্যমে অসীম কুমার নন্দী ও অর্জুন পাল নামক ২ ব্যক্তির সহযোগিতায় হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে টাকা পাচার শুরু করেন। ২০১৩ সালে মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিচালনায় কোন কমিটি নেই, আয় ব্যয়েরও কোন হিসাব নেই। ফলে প্রতি মাসে মন্দিরের আয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা এই গুরুমহারাজ আত্মসাত ও ভারতে পাচার করেছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

মন্দিরের জমির জাল দলিল সম্পাদন ও মন্দিরের নাম পরিবর্তণ করায় মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতে স্বত্ব মামলা (নং ০১/২০২২) চলমান আছে। উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের দুর্জয় দেব বাদি হয়ে গুরু মহারাজ ওরফে যতি গোস্বামী মহারাজকে প্রধান করে ১১ জনের নামোল্লেখ করে সিলেট (জেলা ও দায়রা জজ) সাইবার ট্রাইবুন্যালে মামলা (নং ২০/২০২২) দায়ের করা হয়েছে। গুরুমহারাজের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বাদীসহ মন্দিরের বর্তমান অধ্যক্ষ, মন্দিরের ধর্মপ্রাণ ও সজ্জনদের বিরুদ্ধে অশ্লীণ আশোভন ধর্মদ্রোহী বক্তব্য ও ছবি প্রচার করে ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত এবং হুমকি প্রদানের অভিযোগ করেন। এছাড়াও মন্দিরের পার্শ্ববর্তী হরিহরপুর গ্রামের উত্তম কুমার রায় বাদি হয়ে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে (সিআর মামলা নং ৭০/২০২২), হরিহরপুর গ্রামের সুজন দাস বাদী হয়ে (সিআর মামলা নং ৬৬/২০২২) এবং মাধাই রায় বাদী হয়ে (সিআর মামলা নং ৯৭/২০২২) দায়ের করা হয়। আদালতের দায়েরকৃত মামলাগুলো পিবিআই’র তদন্তাধীন রয়েছে।


এদিকে ভারতীয় নাগরিক প্রদীপ বিশ্বাস ওরফে যতি গোস্বামী মহারাজ কথিত গুরু মহারাজ কোটি কোটি টাকা ভারতে পাচার এবং তাকে আইনের আওতায় আনার দাবিতে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার ফাউন্ডেশনের আইন ও সালিশ বিষয়ক যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. মাসুদুল হক একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও দুদকের চেয়ারম্যান বরাবরে। অপরদিকে মহারাজের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন শ্রী শ্রী গোরাঙ্গ মহাপ্রভুর দেবালয়ের ভক্তবৃন্দ।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন ঢাকা, সিলেট, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহিলারা এসে ৫-১০ দিন মন্দিরে অবস্থান করেন। রাতে মন্দিরে নারীদের নিয়ে গুরু মহারাজ প্রমোদ লীলায় মত্ত থাকেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনা চলছে। ওই গুরুর কিছু নারী শিষ্য গুরুর অপকর্ম ঢাকতে এবং মন্দিরে নিয়ে আসতে বিভিন্ন জায়গায় নানা কল্পকাহিনী সাজাচ্ছেন বলে তারা জানান।
এব্যাপারে জানতে সরেজমিন মন্দিরে গেলে বর্তমান অধ্যক্ষ দামোদর মহারাজ জানান, এই মন্দির পরিচালনায় কোন কার্যকরি কমিটি নেই। স্থানীয় লোকজনের সাথে যতি গোস্বামী মহারাজের মধ্যে যেসব মামলা চলমান আছে, এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমি ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত। এসব বিষয় যতি গোস্বামী মহারাজ ভালো বলতে পারবেন।


এদিকে যতি গোস্বামী মহারাজ বা কথিত গুরুমহারাজ ভারতীয় একজন নাগরিক এবং একাধিক মামলার কারণে আত্মগোপনে থাকায় অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর সাথে যোগযোগ করা ও বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

গুরুমহারাজের স্থানীয় ভক্ত ডা. ননী গোপাল জানান, গুরু মহারাজ সিলেটে অবস্থান করছেন। তবে তিনি কোথায় থাকেন তা বলতে পারবেন না। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার চাইলে তিনি বলেন মহারাজের অনুমতি নিয়ে মোবাইল নাম্বার দেয়া যাবে কি না? তিনি পরবর্তীতে জানাবেন।#

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ৪:১১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত