কুলাউড়া সংবাদদাতা :: | মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নের এক প্রবাসীর স্ত্রী ২ সন্তানসহ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সোমবার ১০ জানুয়ারি দুপুরে শহরের কমিশনার মার্কেটে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর স্বামীকে প্রবাসে পরিকল্পিতভাবে হত্যা এবং সেই হত্যাকারীর স্বজনরা প্রাণে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এবং তিনি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে ২ সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িসহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানান।
উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের পূর্বভাগ গ্রামের বাসিন্দা মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে নিহত আমিরুল ইসলাম সিমু চৌধুরীর স্ত্রী মোছা. রোজিনা আক্তার দুই সন্তান সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, তাঁর স্বামী কাতার প্রবাসী আমিরুল ইসলাম সিমু চৌধুরী দীর্ঘদিন কাতারে চাকরীতে কর্মরত ছিলেন। তিনি দোহায় যে বাসায় বসবাস করতেন সেখানে তার চার মামাতো ভাই উজ্জল, খায়রুল, আজহারুল ইসলাম ও খছরু একই সঙ্গে বসবাস করতেন। পরিকল্পিতভাবে তাঁর স্বামীকে কাতারে ঘরের ভেতর একই গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস আলীর চারপুত্র উজ্জল, খায়রুল, আজহারুল ইসলাম ও খছরু মিলে গত বছরের ০৪ এপ্রিল হত্যা করে। স্বামীর ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর খোঁজ নিতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন রোজিনা। ঘটনার ৭ দিন পর স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ ফোনে জানান উজ্জল গংরা। স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ গোপন রেখে ৭ দিন পরে তাদেরকে জানানোর জন্য সিমুর পরিবার সন্দেহ করছেন ওরা চার ভাই মিলে সিমুকে হত্যা করে। তখন করোনাকাল থাকায় তারা হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। মৃত্যুর ৯ দিন পর নিহত সিমুর লাশ দেশে পাঠান উজ্জল ও তার ভাইয়েরা।
এদিকে ১৩ এপ্রিল কাতার থেকে দেশে লাশ আসার পর আমরা লাশের ময়নাতদন্তের জন্য তাদেরকে অনুরোধ করলেও তারা তা না করে দ্রুত লাশ দাফনের ব্যবস্থা করে ফেলে। বাড়িতে তিনি মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে একাকিত্বভাবে অসহায় অবস্থায় পড়ায় তাদের কোন কথা কর্ণপাত করেনি উজ্জলের পরিবার। ওইদিন স্থানীয় চেয়ারম্যান জনাব আলী ও চানঁপুর গ্রামের নাসির উদ্দিনসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিগনের সম্মুখে একটি অঙ্গিকারনামা করে তার স্বামীর লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। অঙ্গিকারনামায় লেখা ছিল মৃত্যুর ৪০ দিন পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আলী ও ইউপি সদস্য মখদ্দছ আলীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে উচিত বিচার করে দিবেন। পরবর্তীতে ২৩ জুলাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আলীর সভপতিত্বে এক বৈঠকে রোজিনা ও তার দুই শিশুকে তাদের ভরণ-পোষন বাবত নগদ ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে অন্যান্যের মাঝে আব্দুল মতিন, সাদেক আলী মহরী, মামুন আহমদ, আজিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী, নজরুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, ওয়াতির আলী, ক্বারী তাজ উদ্দিন, আব্দুল খালিক, বাবু আহমদ, জুবের আহমদ ও কাউছার আহমদ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অদ্যাবদি সেই টাকা পরিশোধ করেনি উজ্জলের পরিবাররা। কিছুদিন আগে উজ্জলদের নিকট আত্বীয় শায়েদ মিনহাজ সিদ্দিকী পল্লব ও নাসির উদ্দিন একলক্ষ টাকার চেক নিয়ে রোজিনা আক্তারের কাছে গেলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। বর্তমানে নাবালক দু’টি সন্তান ফাহমিদা আক্তার চৌধুরী (১৫) ও রিয়াদুল ইসলাম চৌধুরী (১০) কে নিয়ে বিধবা রোজিনা আক্তার অসহায়ত্ব দিনযাপন করছেন। শুধু তাই নয় উজ্জলের আত্মীয় স্বজনরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এতে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। তিনি সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য বাবার বাড়িসহ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি বর্তমানে স্বামীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন।
এদিকে হুমকির বিষয়ে প্রবাসী উজ্জ্বলের আত্মীয় শাহেদ মিনহাজ, নাসির উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান মুকুল, আব্বাস আলী, জাবেদ মিনহাজ সিদ্দিকিকে অভিযুক্ত করে গত ২৬ ডিসেম্বর কুলাউড়া থানায় নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। তখন কুলাউড়া থানার এ এস আই আবু তাহের সরেজমিন বিষয়টি তদন্ত করেন।
স্বামী হত্যার ঘটনায় সরকার ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা সহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন নিহত প্রবাসীর স্ত্রী রোজিনা আক্তার।
প্রবাসী উজ্জলের চাচাতো ভাই নাসির উদ্দিন জানান, বিষয়টি আমাদের পারিবারিক। প্রবাসে পিটিয়ে হত্যার কোন ঘটনা ঘটেনি। সিমু চৌধুরীর লাশ দেশে আসার পর আমি এই ধরনের কোন দায়িত্বও নেইনি। আমি এসব কিছু জানিনা। আমার ভাতিজা-ভাতিজি যারা এতিম হয়েছে সেই ছোট ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ ছোট ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ আমরা পর্যায়ক্রমে দেখবো। এনিয়ে কেউ যদি গেইম খেলে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।
স্থানীয় চেয়ারম্যান জনাব আলীর সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করাতে তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
শালিশি বৈঠকের মধস্থতাকারী উভয় পক্ষের নিকট আত্বীয় কর্ণেল শায়েদ মিনহাজ সিদ্দিকী পল্লবে সাথে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ থাকার তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় বলেন, নিহত প্রবাসী আমিরুল ইসলাম সিমু চৌধুরীর স্ত্রী বিষয়টি আমাদের জানালে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠাই তাদের বাড়িতে। এখন যদি প্রতিপক্ষরা প্রবাসীর স্ত্রীকে কোন ধরণের হুমকি দিয়ে থাকে তাহলে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Posted ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি ২০২২
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.