বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট
ঢাকা: ষোল আনা বাঙালিয়ানার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ মৃৎশিল্প। যাতে মিশে আছে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। প্রাচীন এ শিল্পটি এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক সমৃদ্ধ। সিরামিক আর প্লাস্টিকের যুগেও টিকে আছে দাপটের সঙ্গে মাথা উঁচু করে।
গৃহসজ্জা থেকে অফিস সাজানো, বাঙালিয়ানার ছাপ ফেলতে প্রাই আশ্রয় নেয়া হয় মৃৎশিল্পটির। এতে একদিকে যেমন নান্দনিকতার প্রকাশ ঘটে, আবার ব্যবহারকারীর রুচির পরিচয়ও পাওয়া যায়। রাজধানীতে যে কয়েকটি জায়গায় মৃৎশিল্প সামগ্রী পাওয়া যায় তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জনহল এলাকার দোয়েল চত্ত্বর অন্যতম।
দোয়েল চত্ত্বরের সড়ক লাগোয়া ফুটপাতে মৃৎশিল্পের দোকান আছে ৫২টি। যেখানে মাটির তৈরি পণ্যগুলোর দাম আকার, মান ও নকশা অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। ছোটগুলোর দাম ২০ থেকে ৩০০ টাকা। বড়গুলো ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
আছে কাঠের তৈরি নানা সামগ্রী। দাম সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে, সৌখিন ব্যক্তিরা অর্ডার দিয়ে যেসব বানিয়ে নেন সেগুলোর দাম অনেক সময় ২০/৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বলছিলেন ৩০ বছর ধরে মৃৎশিল্পের ব্যবসা করা দোয়েল মৃৎশিল্প অ্যান্ড হ্যান্ডি ক্রাফটসের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “এগুলোতো সৌখিন জিনিস। মৌলিক চাহিদা পূরণের পর টাকা থাকলে মানুষ এসব কেনে। আগে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক লোক আসতো। এখন আর বিদেশিরা তেমন আসে না। তবে আমাদের যদি একটা স্থায়ী জায়গা থাকতো তাহলে খুব সুবিধা হতো, অনেকে কাজের অর্ডার দিতো। এখন তো অর্ডার তেমন পাই না। কারণ, তারা আমাদের ওপর ভরসা রাখতে পারেন না। মনে করেন, দোকান থাকে কিনা। এছাড়া, স্থায়ী জায়গা থাকলে আমরা বিদেশেও অনেক জিনিস রপ্তানি করতে পারতাম।”
মাটির দোকানের দোকানী বাদল মিয়া বলেন, “২৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। এখন ব্যবসা মোটামুটি ভালো। যেহেতু প্রতিযোগিতা অনেক বেশি তাই পণ্যের মানও অনেক ভালো করতে হয়। আমার দোকানে দিনে ২ থেকে ৫ হাজার টাকার বিক্রি হয়।”
কোথা থেকে এসব জিনিস আনেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তারা সাভার, কুমিল্লা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাল সম্প্রদায়ের তৈরি করা এসব পণ্য ঢাকায় এনে বিক্রি করেন।
তবে তারও আক্ষেপ স্থায়ী জায়গা নিয়ে। বলেন, “সরকার যদি আমাদের একটা স্থায়ী জায়গার বন্দোবস্ত করে তাহলে খুব উপকার হয়। স্থায়ী জায়গার জন্য আমরা অনেকদিন থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি। এখানে আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। বৃষ্টি আসলে অনেক জিনিস নষ্ট হয়ে যায়।”
কথা হয় সেগুনবাগিচা থেকে টব কিনতে আসা গৃহিণী রোকেয়া রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এসব জিনিস ব্যবহারের একটা সুবিধা হলো, ব্যবহার করতে করতে যদি রঙ উঠে যায় তাহলে সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘষে আবার রঙ করা যায়। তাই ঘর সাজাতে মাটির তৈরি এসব জিনিসের ওপরই আমার ঝোঁকটা বেশি।”
এখানে মাটির গহনা কিনতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তাহমিদা এবং সুরভি। এ ধরনের গহনা কেনার কারণ জিজ্ঞাসা করতে চারুকলায় পড়া তাহমিদার ভাষ্য, বাহারী ডিজাইনের মাটির গহনা তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায়, দেখতেও খুব সুন্দর। একইসঙ্গে এগুলো আমাদের ঐতিহ্য বহন করে। তাই আমি বেশির ভাগ সময়ই মাটির তৈরি গহনা পড়ি।
দোয়েল চত্ত্বরের এসব দোকানে পাওয়া যায় ছোট বড় ফুলদানী, ল্যানসেট, ঝুলন্ত পাখির বাসা, নকশি ঘণ্টা, টব, মাটির বাসন, প্লেট, মগ, ঘটি-বাটি, কয়েল স্ট্যান্ড, আগরদানী, কলমদানী, প্রদীপদানী, গয়নার সেটসহ শোপিসের হরেক জিনিস। সেইসঙ্গে পাওয়া যায় চমৎকার নকশার টেরাকোটা। যা এখন অনেকে ব্যবহার করছেন টাইলসের বিপরীত হিসেবে।
সংবাদমেইল২৪.কম/এনবি/এসএস/এসডি
Posted ১২:৪৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.