শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: জুড়ীতে নৌকার ভরাডুবি যেসব কারণে

জুড়ী সংবাদদাতা :: | রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট  

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: জুড়ীতে নৌকার ভরাডুবি যেসব কারণে

জুড়ী উপজেলা ‘নৌকার ঘাঁটি’ হিসেবেই পরিচিত। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহব উদ্দিনের নির্বাচনি এলাকার একটি এই উপজেলা। সদ্য সমাপ্ত দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এখানেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এতে হতাশ দলের নেতাকর্মীরা। ৫ ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতেই হেরেছেন নৌকার প্রার্থীরা। দুটিতে ডুবেছে দলীয় কোন্দলে। দুটি হেরেছে বিএনপির (স্বতন্ত্র) প্রার্থীদের কাছে। উপজেলার পশ্চিমজুড়ী, জায়ফরনগর, গোয়ালবাড়ি ও পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরাই পরাজিত হয়েছেন। শুধু সাগরনাল ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ের মুখ দেখতে পেরেছেন।

‘নৌকার ঘাঁটিতে’ ভরাডুবির কারণ নিয়ে নেতাকর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয়দের মধ্যে চলছে চুল চেরা বিশ্লেষণ। আবার আলোচনায় উঠেছে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী না দেওয়া, বিদ্রোহী দমাতে ব্যর্থতা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর (বিদ্রোহী ও বিএনপি) পক্ষে কোনো কোনো নেতার গোপন আঁতাতের বিষয়টিও।


এ ছাড়া বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থীদের নৌকাবিরোধী প্রচারণাও ভরাডুবির কারণ হিসেবে দেখছেন দলটির একাধিক নেতা। গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) সরেজমিনে জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় ভোটার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। জুড়ী উপজেলা হাসপাতাল এলাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভোটার বলেন, ‘ভাই আমরা হাছা মাতলে তো সমস্যা। আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝে আগর লাখান একতা নাই। আড়ালে আওয়ামী লীগ নেতারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাতছইন। আর সামনে পড়লে ভালা মাতছইন। আর টেখা খাইয়া বড় বড় নেতা হখলে ভালা প্রার্থী না দিয়া দুর্বল প্রার্থী দিছন। এর লাগি চাইর ইউনিয়নে নৌকায় বাঁশ খাইছে। আমরা নেতা হখলর কান্দা কাছায় ঘুরছি; অউ হুনছি ভাই।’বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মুমিত আসুক চত্বর এলাকায় কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। নৌকার ভরাডুবির প্রসঙ্গ তুলতেই পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ সমর্থক সুজন আহমদ বলেন, ‘নৌকা জিতব কেমনে? যারা নৌকা জিতাইতা তারাউ ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহী ও বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছইন। দিনে সামনে আইয়া নৌকার পক্ষে ভাষণ দিছইন, আর রাইতে আঁতাত করছইন আরেকজনের লগে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাধারণ ভোটার। নৌকায় ভোট দেই। জুড়ীতে এবার নৌকা ডুবছে আওয়ামী লীগ নেতাদের কারণেই। তারাই নৌকা ডুবাইছন। আমরা শুরু থাকি পরিস্থিতি বুঝছি। এইরকম কোনতা এই বার অইব। কিন্তু আমরা তো সাধারণ সমর্থক। আমরার কথা তো আর বড় বড় নেতারা হুনতা নায়।’সুজন আহমদের মন্তব্যের প্রতিধ্বনী শোনা গেলো জায়ফরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতার কথায়ও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বিএনপির (স্বতন্ত্র) প্রার্থীর সঙ্গে দলের বড় বড় নেতাদের ব্যবসা আছে। সঙ্গত কারণে তারা ওই প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন। তারা শুধু মিটিং-মিছিলে পদ বাঁচাতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি ছিল। শুধু ওই প্রার্থীই নন, অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষেও কাজ করেছেন বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতা।’

পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন শ্রীকান্ত দাস। তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আনফর আলীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। আলাপকালে এই পরাজিত প্রার্থী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো আর আওয়ামী লীগ রইছে না। আমরার মাঝে কিছু মানুষ আমারে অত্যন্ত সুকৌশলে ডুবাইছে।’


পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আব্দুল কাদির। এই ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ওবায়দুল ইসলাম রুহেল জয়ী হয়েছেন। দ্বিতীয় হয়েছেন আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী সালেহ উদ্দিন আহমদ। পরাজয়ের কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আব্দুল কাদির বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভেতরে নৌকা বিরোধী আছে। প্রচুর টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে। একেক জন এক কোটি, দুই কোটি টাকা ব্যয় করছে।’

গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন শাহাব উদ্দিন লেমন। তিনি এখানে পরাজিত হয়েছেন স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী আব্দুল কাইয়ুমের কাছে। শাহাব উদ্দিন লেমনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।


জায়ফরনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন জায়েদ আনোয়ার। তিনি এখানে তৃতীয় হয়েছেন। এখানে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী মাসুম রেজা। দ্বিতীয় হয়েছেন হাবিবুর রহমান। আলাপকালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জায়েদ আনোয়ার বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে এখন মুখ খুলতে চাচ্ছি না। মন্ত্রীর কাছে বিচার দিয়ে বিচারের অপেক্ষা করবো। প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবো।’

জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিঙ্কু রঞ্জন দাস বলেন, ‘পরাজয়ের কারণটা অনুসন্ধান করছি। এখন এই বিষয় নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।’

জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী বাছাইয়ে ঘাটতি ছিল। ভালো প্রার্থী পাওয়া যায়নি। আর যারা নৌকার টিকিট পেয়েছেন, তারা ভালোভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেননি। মাঠের সঙ্গে, নেতাকর্মীদের সঙ্গেও সমন্বয় ভালোভাবে করতে পারেননি। দলের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের এড়িয়ে গেছেন প্রার্থীরা। মূল্যায়ন করেননি। এছাড়া ভালো প্রার্থীরাই বিদ্রোহী হয়েছেন।’

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত