শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১

আপনারা ভিআইপি আর আমরা অবহেলিত ট্রেন যাত্রী

সাইদুল হাসান সিপন | শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট  

আপনারা ভিআইপি আর আমরা অবহেলিত ট্রেন যাত্রী

তখন বাজে বেলা প্রায় ১২ টা (৪ সেপ্টেম্বর) । সিলেটের উদ্দেশ্যে যাতায়াতের জন্য কুলাউড়া রেল স্টেশনের ১ নং প্লাটফর্মে অসুস্থ আম্মাকে নিয়ে অপেক্ষা করছি পারাবত ট্রেনের। এসময় স্টেশনের মাইকে ঘোষণা আসলো ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পারাবত ট্রেনটি অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ২ নং প্লাটফর্মে এসে পৌঁছাবে, যাত্রী সাধারণকে ওই প্লাটফর্মে গিয়ে প্রস্তত হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষারত শতাধিক নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ যাত্রীরা দুইটি রেল লাইন পার হয়ে ২ নং প্লাটফর্মে অবস্থান নেন। কিন্তু দীর্ঘ আধা ঘন্টা অপেক্ষা করেও ট্রেনের কোন খবর পাওয়া যাচ্ছিলো না। ১ নং প্লাটফর্মে বসার সুযোগ, বৈদ্যুতিক পাখা থাকায় মানুষ অপেক্ষা করলেও বিরক্ত কিছুটা কম করতো। কিন্তু ২ নং প্লাটফর্মে এই সময়টা ছিলো মানুষের জন্য অত্যন্ত কষ্টের এবং ভোগান্তির।

বিবেকের তাড়নায় গেলাম স্টেশন মাস্টারের রুমে। জিজ্ঞাসা করলাম পারাবত ট্রেনের আসার সময় সম্পর্কে। উনি অবলিলায় বললেন, ট্রেনটি লংলা রেলস্টেশন (কুলাউড়ার পূর্ববর্তি রেল স্টেশন) ছাড়েনি। নিজের পরিচয় গোপন রেখে সাধারণ মানুষের মতো করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার ফিরে আসলাম ২ নং প্লাটফর্মে। স্টেশন মাস্টারের ভাবগম্ভির্যতা আমাকে কিছুটা বিব্রত করছিলো। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ফিরে আসলাম। তবে একটা বিষয় লক্ষ করলাম স্টেশনের জিআরপি, নিরাপদ বাহিনী, স্টেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী অনেক ব্যস্ত সময় পার করছেন। যে যার মতো করে দৌড়ঝাঁপ করছেন। যদিও যাত্রীদের ভোগান্তির ব্যাপারে কারও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।


বেলা ১ টা বাজে। হঠাৎ দেখলাম সিলেট থেকে তিনটি ট্রেনের ট্রলি কুলাউড়া রেল স্টেশনের ১ নং প্লাটফর্মে এসে থামে। (পরে জানলাম ওই ট্রলিতে রেলওয়ে সিলেটের আঞ্চলিক কয়েকজন কর্মকর্তা আসলেন।) স্টেশনের সকল স্টাফ যে যার মতো উনাদের নিয়ে খুব ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন।

আমি সহ কয়েক শতাধিক যাত্রীদের তখন আর বুঝতে বাকি নেই যে, কয়েক শতাধিক ট্রেন যাত্রীদের দুইটি লাইন অতিক্রম করে দুই নম্বর প্লাটফর্মে কেনো আসতে হয়েছে। এবং প্রায় এক ঘন্টা পূর্বে দুই নম্বর প্লাটফর্মে কেনো অল্প কিছুক্ষণ বলে ঘোষণা দিয়ে ১ নাম্বার প্লাটফর্ম খালি রাখা হয়েছে। আরও জানতে পারলাম এখানে অনেকেই নতুন অফিসার।


একজন সাধারণ ট্রেন যাত্রী হিসেবে আমার প্রশ্ন, রেল বিভাগে এতো বড় বড় অফিসার হিসেবে আপনাদের নিয়োগ কেনো হয়েছে? আমরা যতদূর জানি, ট্রেনের যাত্রীদের সেবা দিতেই আপনারা নিয়োগ পেয়েছেন।

তাহলে শুধুমাত্র আপনাদের বরণ করতে গিয়ে কেনো কয়েক শতাধিক ট্রেন যাত্রীরা এই ভোগান্তির শিকার হলো? কেনো ১ নং থেকে ২ নং প্লাটফর্মে স্থানান্তর করা হলো? আপনারা তো সবাই উচ্চ শিক্ষিত, তবে কেন মানুষের এই দুর্ভোগে আপনারা নিশ্চুপ? আপনারা সুবিধা নিতে গিয়ে কেন এই বৃদ্ধ, নারী, শিশুদের কষ্ট দিলেন? আপনারা যে ভিআইপি তকমা গায়ে জড়িয়ে একটি প্লাটফর্ম খালি করলেন, সেই তকমা এখানকার শতাধিক মানুষের টিকেটের টাকায়, ট্যাক্সের টাকায় সেটা কেনো মনে ভাবছেন না?


এক ঘন্টা পর পারাবত ট্রেন আসলো কুলাউড়া স্টেশনে। আমরা কষ্ট করে ট্রেনে যাত্রা শুরু করলাম। ওদিকে খবর আসলো, ফেঞ্চুগঞ্জে ‘জালালাবাদ ট্রেন’ এর দু’টি চাকা লাইনচ্যুত। ওখানে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হলো।

কর্তৃপক্ষের কাছে দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার ক্ষুদে বার্তা এই যে, আমরা শান্তি, নিরাপদ এবং সুন্দরভাবে ট্রেন যাত্রা করতে চাই। আমাদের কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকায় আপনারা ভিআইপি তকমা লাগিয়েছেন এই বোধদয় যেন আপনাদের সবসময় থাকে। ট্রেন যাত্রীদের অবহেলিত মনে না করে তাঁদের সম্মান প্রদর্শণ করুন।

লেখক :: মৌলভীবাজারে কর্মরত একজন সাংবাদিক

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ২:২৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত