
ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট
ঝালকাঠি: ঝালকাঠির নবগ্রাম, গাভারামচন্দ্রপুর, পোনাবালিয়া, বাসণ্ডা ও কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ৩৬ গ্রামে সবজি চাষ করে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছে নারীরা।
শুধু শীতকালেই নয় বছরের ১২ মাস সবজি চাষ করে এখানকার প্রায় চার হাজার নারী তাদের সংসার চালান। স্থানীয়ভাবে কান্দিতে সবজি চাষকে বলা হয় লতা কৃষি। নারীদের ফলানো এই সবজি হাটে নিয়ে বিক্রি করছেন পুরুষরা।
শীতকালীন সবজি লাউ, কুমড়া, জালি, মূলা, শালগম, ফুলকপি, বরবটি, করলা, সীম, আলু, বোম্বাই মরিচ, কচু, পালং ও লালশাকসহ এমন কোনো সবজি নেই যা এসব গ্রামে উৎপাদিত হয় না। বিষমুক্ত এসব সবজি আবাদ করে লাভবান হওয়ায় ধান আবাদ ছেড়েই দিয়েছেন চাষিরা। কান্দিতে সবজির পাশাপাশি আখ, আমড়া, পেঁপে ও পেয়ারার আবাদ করেও লাভবান হচ্ছেন তারা।
তবে কিছু সড়ক চলাচলের অনুপযোগী এবং সেতু না থাকায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। কারণ উৎপাদিত সবজি সরাসরি সড়ক পথে ঝালকাঠি সদরে নিয়ে যেতে পারছেন না তারা। তাই বাধ্য হয়েই বাড়িতে বসে পাইকারদের কাছে বা পাশেই ছোট কোনো হাটে কম মূল্যে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওর সুদের জালে জড়িয়ে পড়ায় এসব চাষি ব্যাংকঋণ নিতে পারছেন না। তাই কৃষক বান্ধব এই সরকারের কৃষিঋণের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
তাদের অভিযোগ, চাষীদের জন্য সরকারি বরাদ্দ কৃষি সামগ্রী ও উপকরণ থেকে বঞ্চিত তারা। এলাকা ভিত্তিক চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের পছন্দের কিছু ব্যক্তি সরকারি এসব সুবিধা পেয়ে থাকে।
নবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ কাফুরকাঠি গ্রামের চাষি রনজীৎ ও সন্ধ্যা রাণী বলেন, ‘‘আমাদের নিজেদের জমি না থাকায় অন্যের জমিতে কাজ করে ফসল ফলাই। বিনিময়ে মালিকের কাছ থেকে পাওয়া পারিশ্রমিক দিয়েই চলছে সংসার।’’
একই গ্রামের চাষি সুধীর চন্দ্র বড়াল বলেন, ‘‘আমরা বাৎসরিক লিজ নিয়ে জমিতে সবজি আবাদ করছি। এনজিও থেকে সুদে টাকা এনে এই কাজ করায় লাভের বেশির ভাগই তারা হাতিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি।’’
শতদশকাঠি গ্রামেরসুকেশ হালদার বলেন, ‘‘এ বছর ১০ কাঠা জমিতে করলা আবাদ করে ইতোমধ্যেই ১৭ হাজার টাকা পেয়েছি। আরো ৩০ হাজার টাকা মূল্যের করলার ফলন পাবো বলে আশা করছি। তবে এগুলো ঝালকাঠি সদরে গিয়ে বিক্রি করতে পারলে আরো লাভবান হতাম।’’
দক্ষিণ কাফুরকাঠি গ্রামের কাজল হালদার বলেন, ‘‘আমি কান্দি কুপিয়ে আলু ও কচু লাগাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ এলাকার জমি নিচু থাকার কারণে কোথাও ধানের আবাদ করা হয় না। তাই কান্দিতেই বারো মাস সবজি আবাদ করছি। নিজেদের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় সুদে টাকা এনে আমাদের আবাদ করতে হচ্ছে। ব্যাংকে গেলে জমির পর্চা বা দলিলসহ বিভিন্ন কাগজ লাগে। আমাগো জমি না থাকায় এসব কাগজ দিতে পারি না বলেই সুদে টাকা আনতে বাধ্য হচ্ছি।”
ডুমুরিয়া গ্রামের সুরেন হালদার বলেন, ‘‘স্থানীয় হাটের পাইকারদের কাছে আমরা জিম্মি। কারণ আমাদের এ এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌকা। তাই বাগান থেকে নৌকায় সবজি নিয়ে হাটে গেলে পাইকারদের দরেই দিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছি। যদি সড়ক পথে এসব সবজি শহরে নিয়ে যেতে পারতাম তাহলে দাম বেশি পেতাম।’’
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ মো. আবু বকর সিদ্দিক জানান, ঝালকাঠির প্রত্যন্ত এলাকায় শীতকালীন সবজি চাষ একটি দৃষ্টান্ত। চাষের শুরুর দিকে নারী-পুরুষ উভয়ে মিলে কাজ করেন। পরে পুরুষরা বাজারজাতকরণে এবং নারীরা পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন। সবমিলিয়ে জেলার ৩৬টি গ্রামের প্রায় চার হাজার নারী এ কৃষি কাজে সফল। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের যাবতীয় পরামর্শ এবং সাধ্য মতো সহযোগিতা করা হয় বলেও জানান তিনি।
সংবাদমেইল২৪.কম/এমএস/এনএস
Posted ৫:২৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.