
নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১ | প্রিন্ট
স্বপ্নের বোরো ধান সফলভাবে ঘোলায় তোলা শেষে আনন্দ উৎফুল্য মনে আছেন হাওর পারের লোকজন। বোরো ধান নিয়ে দীর্ঘ ক্লান্তি শেষে নিঝুম মনে কিছুদিন থাকলেও এখন স্থানীয় লোকজনরা হাওরের পানি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশংকা করছেন। এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর পারের কৃষক,জেলে থেকে শুরু করে স্থানীয়রা বর্ষা মৌসুম এলেই যাতায়াতের জন্য পড়েন মহাবিপাকে। তাই এ অঞ্চলের অধিকাংশ লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র সম্ভল হয়ে উঠে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা। তাই হাওরে পানি বাড়লে নৌকার কদরও বাড়ে। এসময় নৌকা দিয়ে মাছ ধরা থেকে শুরু করে গরু,ছাগলের জন্য খাদ্য সংগ্রহ,হাটবাজার থেকে মালপত্র পরিবহন,এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত ও চাকরিজীবি-স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠে এই নৌকা। বৈশাখের শুরুতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলেও এবার অনেকটা পিছিয়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় হাওর অনেকটা এখনো শুকনো। কিন্তু গত কিছুদিন থেকে মুষলধারে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় হাকালুকি হাওরে পানি অনেকটা টুইটুম্বর। তাইতো ভাটি অঞ্চলের লোকজন নতুন নৌকা তৈরি ও পুরুনো নৌকা চলাচলের উপযোগী করার জন্য কারিগর দিয়ে মেরামত শুরু করছেন। তবে নৌকার কারিগর সংকট থাকায় অনেকে চড়া দাম দিয়েও নৌকা মেরামত ও তৈরি করতে হচ্ছে।
সরেজমিন হাওর ঘুরে দেখা যায়, হাওরের পানি ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করায় ভাটি অঞ্চলের অধিকাংশ লোকজনের বাড়ির উচু জায়গায় কারিগর দিয়ে নতুন নৌকা তৈরি করছেন। কেউবা আবার তাদের পুরুনো (ঝিলে ডুবন্ত) নৌকা উচু জায়গায় তুলে পানিতে ভাসানোর জন্য শেষমেষ ঝালাই করে নিচ্ছেন।
হাওর অঞ্চলের ভুকশিমইল ইউনিয়নের মদনগৌরী এলাকার নজমুল হোসেন,মহেষগৌরী গ্রামের জামাল আহমদ,শাহাপুর এলাকার জায়েদ আলী,ফজলু মিয়া,সাদিপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া, জলালপুরের অসখ দাস,রিংকু বর্ধন,ভাটেরা ইউনিয়নের বেরকুড়ি এলাকার রোকন মিয়া, সাহেদ আলী জানান,বর্ষা মৌসুম এলে হাওরের নিম্নাঞ্চল পানিতে একেবারে ডুবে যায়। তখন তাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা হচ্ছে নৌকা। তাই তারা হাওরের বোরো ধান তুলেই ব্যস্থ হয়ে পড়েন নৌকা মেরামতের জন্য। তাঁরা জানান, এবার একটু দেরিতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ায় হাওরে পানি ধীরে ধীরে বর্তমানে কিছুটা বাড়ছে। তাই এখন থেকে নৌকা তৈরি ও মেরামতের হিড়িক পড়েছে। তাঁরা আরো জানান, হাওর অঞ্চলে বর্ষাকালে নৌকার কদর সবসময় থাকলেও আগের মতো কারীগর পাওয়া যায় না। যারা রয়েছেন তাদের মজুরীর চাহিদা অনেক বেশি। তাই নৌকার কারিগর সংকট থাকায় অনেকে চড়া দাম দিয়েও নৌকা মেরামত ও তৈরি করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে।
হাকালুকি হাওর এলাকার ভুগতেরা গ্রামের মখছদ আলী(৬০) ও জলালপুর গ্রামের নৌকার কারিগর ভানু দাস(৫৫) বয়সের ভারে এই কারিগররা কিছুটা হেলে পড়লেও নৌকা তৈরিতে তাঁরা যেনো বিদ্যুৎ গতিতে কাজ করছেন। আলাপকালে তাঁরা বলেন, একসময় এ অঞ্চলে শত শত নৌকার কারিগর ছিলো। কিন্তু কালের বিবর্তনে অনেক কারিগর এ পেশা ছেড়ে দিয়ে কেউ পাড়ি জমিয়েছেন প্রবাসে আবার কেউবা শুরু করেছেন ব্যবসা বানিজ্য। আবার কেউ বাপ-দাদার এই আদি পেশাকে ধরে রাখতে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে হাকালুকি হাওর পারে ১০-১৫ জন কারিগর এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁরা আরো জানান, বর্তমানে বড় একটি নতুন নৌকা তৈরি করতে ২০-২৫ হাজার টাকা এবং ছোট নৌকা তৈরি করতে ১০-১২ হাজার টাকা তাদের নিতে হয়। কিন্তু কেউ এরচেয়ে কম মজুরী দিলে তাদের (পোষায় না) ক্ষতি হয়। একটি বড় নৌকা তৈরি করতে মাসদিন ও ছোট নৌকা তৈরি করতে প্রায় ১৫ দিন সময় লেগে যায়। এছাড়াও নৌকা তৈরির কাঠ কুমা ও জারইল গাছ আগে থেকে গ্রাহকরা দিলে তা সিজন করতে প্রায় এক মাস লেগে যায়। আগেরকার সময়ে বর্ষা মৌসুম এলে হাওরে প্রতিমাসে ২০-২৫ টি নৌকার কাজ করতে পারতেন। কিন্তু এখন তা কমে যাওয়ায় ও কারিগর না থাকায় ০৮-১২ টি নতুন নৌকা তৈরি করতে পারেন এই কারিগর। তবে তাঁরা আরো বলেন, একসময় এই হাওরঞ্চলে আগের মতো সেই পাল তুলা নৌকার পদভারে মুখরিত হবে হাকালুকি।
Posted ১০:০৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.