
বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০১৭ | প্রিন্ট
ফটো:-বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হাওরপাড়ের গ্রামগুলো টিউবওয়েল আর টয়েটেল। তাই বাধ্য হয়ে মানুষবে অর্ধ ডুবন্ত টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি ছবিটি হাওর পাড়ের ভুকশিমইল এলাকা থেকে তোলা।
মৌলভীবাজারে বন্যা কবলিত এলাকায় ভেঙ্গে পড়েছে বেশিরভাগ গ্রামের স্যানিটেশন ব্যবস্থা। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অসংখ্য টিউবওয়েল ও টয়েলেট।
পানিতেই করতে হচ্ছে পকৃতিকর্ম, আর দূর থেকে পানি এনে কিংবা বানের জলই ব্যবহার করছেন নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে। ফলে ডায়রিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন দূর্গতরা।
টিউবওয়েল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে দুর্গত বেশির ভাগ এলাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের লোকজন যায়নি বলে অভিযোগ করলেন ভুক্তভোগীরা।
তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের দাবী জনবল সংকটের কারনে টিউবয়েল ও স্যানিটেশন উন্নয়ন কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। ফলে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দুর্গতরা।
সরেজমিন হাওর পাড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মৌলভীবাজারে পাঁচটি উপজেলায় ৩৫০টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব এলাকায় একটু রোদ কিংবা আবহাওয়া অনকূলে থাকলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে অবার বৃষ্টি হলেই বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি হয়।
হাওড়পাড়ের বেশিরভাগ গ্রামেই অসংখ্য কাঁচা টয়লেট ও টিউবওয়েল পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। ফলে ভেঙ্গে গেছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বানের পানিতেই দূর্গত এলাকার মানুষজনকে পকৃতিকর্ম করতে হচ্ছে। আবার সেই বানের পানিই ব্যবহার করছেন নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে। ফলে ডায়রিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কেউ কেউ খাবের পানি নৌকা দিয়ে দূর সংগ্রহ করছেন। ফলে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব দেখা দিয়েছে প্রকট ভাবে। ভুক্তভোগী এসব মানুষের অভিযোগ টিউবয়েল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা মেরামত করতে দুর্গত বেশির ভাগ এলাকায় যায়নি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের লোকজন ।
মৌলভীবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় হাওরপাড়ের ১১ শত টিউবওয়েল আংশিক ও পুরোপুরি নষ্ঠ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২২০ টি টিউবওয়েল পুরোপুরি নষ্ঠ এবং ৮৮০ টি টিউবওয়েল আংশিক নষ্ঠ হয়েছে। আর টয়েলেট নষ্ঠ হয়েছে ৮৫ শতাংশ।
মৌলভীবাজারের ৫ উপজেলার মধ্যে বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলায় স্যানিটেশন ব্যবস্থার বেশি ক্ষতি হয়েছে। আর এই তিন উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। জেলার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৬৯টি পদের বিপরীতে আছেন ৩৬ জন। তিন জন উপ সহকারী প্রকৌশলী অতিরিক্ত দায়িত্বে থেকে ৭ উপজেলার কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
হাওরপাড়ের ভুকশিমই ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম, সালমা বেগম, হাফিজুন নেছা, ভাটেরা ইউনিয়নের খামাউরা গ্রামের আখলিবুন নেছা, মরম আলী, কবির মিয়া জানান, বন্যায় আমাদের সবকিছু নিয়ে গেছে। বাড়ীতে পানি উঠে ডুবে গেছে টয়েলেট আর নষ্ঠ হয়েছে টিউবওয়েল। বানের পানিতেই করতে হচ্ছে প্রকৃতিকর্ম। আর সেই পানিই ব্যবহার করছি নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে। ফলে ডায়রিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে খাবারের পানি দূর থেকে যে বাড়ীতে টিউবওয়েল ভালো আছে সে বাড়ী থেকে নৌকা দিয়ে সংগ্রহ করি।
হাওরপাড়ের ভুকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির, ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম জানান, হাওর পাড়ের বাড়ীগুলোতে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে টয়েলেট আ টিউবওয়েল। তাই মানুষকে বাধ্য হয়ে পানিতেই পকৃতিকর্ম করতে হচ্ছে। আবার সেই পানি ব্যবহারের ফলে ডায়রিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আমরা কোন বরাদ্ধ পাইনি। উপজেলা পরিষদে এ নিয়ে আলাপ করেছি। বরাদ্ধ পেলেই স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী জানান, আমরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছি। ক্ষতিগ্রস্থ টিউবওয়েল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ আসলে কাজ করা হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব উদ্দিন আহমদ বলেন, আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ টিউবওয়েল মেরামত কাজ চলছে । ইতিমধ্যে প্রায় ৭০% টিউবওয়েল মেরামত করা হয়েছে। তবে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্থ টিউবওয়েল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ আসলে কাজ করা হবে। আর আমাদের জনবল সংকট তাই কাজ করতে একটু দেরী হচ্ছে।
সংবাদমেইল২৪.কম/এজেএল/এনআই
Posted ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.