
আশরাফুল ইসলাম জুয়েল,সংবাদমেইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ০৭ মার্চ ২০১৯ | প্রিন্ট
একাদশ জাতীয় সংসদের এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন গণফোরাম থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ।
দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি কোন তোয়াক্ষা না করেই তিনি আজ ০৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় স্পীকার শিরীন শারমিনের কাছে এই শপথ গ্রহণ করেন।
এদিকে সুলতান মনসুর শপথ গ্রহণ করায় তাঁর নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনে বিএনপির নেতাকর্মী ও অনেক প্রবাসী নেতাও ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য লিখে পোস্ট করেছেন। আবার তাঁর এই শপথ গ্রহণ করা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ নেই। তবে কেউ কেউ তাঁর এই শপথ গ্রহণকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
আরব আমিরাতের আল ইয়াহার বিএনপির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম শামীম লিখেন, এগুলি হল (আমাদের) বিএনপির ভূলের ফসল, যারা বিএনপিকে কুলাউড়ায় প্রতিষ্ঠিত ও শক্ত করেছিলেন উনাদের অভিশাপের ফসল।
ট্রাক চালক ইসহাক মিয়া বলেন, উন্নয়নের জন্য এমপি’র প্রয়োজন, কাজেই কুলাউড়ার উন্নয়নের জন্য উনার শপথ নেয়া দরকার।
কৃষক মনু মিয়া বলেন, এতকিছু বুঝি না প্রতীক দেখে উনাকে ভোট দিয়েছি, তিনি শপথ নিয়ে আমাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করি।
ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানা চৌধুরী সুলতান মনসুরের শপথ নেয়ার বিষয়ে ফেসবুকে লিখেছেন “বঙ্গকন্যা জন নেত্রী শেখ হাসিনার সামনে নাকে খত দিয়ে শপথ নিলেন খন্দকার মোসতাকের আত্মার আত্বীয় সুলতান মনসুর”।
উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন বলেন, কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নিবে কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রদল সেই সিদ্ধান্ত চলবে।
উপজেলা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয় যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল আলম ভূইয়া খোকন সুলতান মনসুর শপথ নেয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সাবেক ছাত্রনেতা ও প্রবাসী বিএনপি নেতা নিজামুর রহমান টিপু তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেন, মাননীয় স্পিকার আমরা কি উনার নামের সাথে জাতীয় বেঈমান ও আন্তর্জাতিক মীর জাফর বিশেষন যোগ করতে পারি..?
পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সুরমান আহমেদ বলেন, কেন্দ্রিয় বিএনপির ভুলের খেসারত আজ কুলাউড়া বিএনপি দিচ্ছে। তবে আমরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবোনা।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোক্তাদির মনু বলেন,সুলতান মনসুরকে যেহেতু কুলাউড়ার জনগন ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন সেহেতু উনার শপথ নেয়া উচিত।
উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, কুলাউড়ার রাজনীতি বিচিত্র রাজনীতি, নেতাও বিচিত্র। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের মতে তাঁর পক্ষে আমরা কাজ করেছি। তিনি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ডিঙ্গিয়ে শপথ নিয়েছেন। এটা আমরা আশা করিনি।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সারোয়ার আলম বেলাল বলেন, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে মা খালেদার মুক্তির আশায় আমরা উনার সাথে ছিলাম। কিন্তু সুলতান মনসুর কেন্দ্রকে ডিঙ্গিয়ে শপথ নেয়া উনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা দলের সিদ্ধান্তের উপর আস্থাশীল।
বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী বলেন, দলের সিদ্ধান্তে উনাকে ভোট দিয়েছি এখন দল যে সিদ্ধান্ত নিবে সেই সিদ্ধান্তে থাকবো।
পৌর কাউন্সিলার ও যুবদল নেতা মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী খোকন বলেন, সুলতান মনসুর শপথ নেওয়ায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কেউ যাবোনা।
রাউৎগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা আব্দুল জলিল জামাল বলেন,জনগনের স্বার্থে শপথ নিয়েছেন। কিন্তু আমি দলীয় সিদ্ধান্তে অটুট থাকবো।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান খাঁন বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যাবো না। শপথ নেয়া উনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির অপরাংশের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, ঐক্যপ্রক্রিয়ার শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন সুলতান মনসুর। কিন্তুু তিনি খালেদার মুক্তি ও বৃহত্তম কোন স্বার্থের অগ্রগতি না দেখিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেয়ায় তিনি আদর্শ বিচ্যুত হয়েছেন। তাঁর উচিত ছিলো সেই আদর্শ ধরে রাখার।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ের মানুষ। সুলতান মনসুরের বিষয়ে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নিবে তা সমর্থন করবো। তিনি যদি ভায়োলট করে শপথ নেন তাহলে সে দায় কুলাউড়া বিএনপি নিবে না।
কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির অপরাংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র জয়নাল আবেদীন বাচ্চু বলেন, আওয়ামীলীগ তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলো, আমরা তাকে সেখান থেকে তুলে জেল, জুলুম মাথায় নিয়ে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলাম। কিন্তু তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেওয়ায় আবার ডাস্টবিনে চলে গেলেন।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট আবেদ রাজা বলেন, সুলতান মনসুর বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সাথে জাতীয় বেঈমানী করেছেন। কুলাউড়া বিএনপি তাঁর গণবিরোধী পদক্ষেপকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। তাঁর এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাই।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট যেখানে শপথের পক্ষে নয় সেখানে সুলতান মনসুর ব্যক্তিগতভাবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেওয়ায় মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি ঘৃন্যভাবে তা প্রত্যাখ্যান করছি।
এদিকে সুলতান মনসুরের শপথ গ্রহণ করাকে সাধুবাদ জানিয়ে ছাত্রদল নেতা মুহাম্মদ বুরহান উদ্দিন তাঁর ফেসবুকে লিখেন, কুলাউড়ার ৯৯.৯৯% বিএনপি সমর্থক খুশি সুলতান মনসুর শপথ করায়! একজন সুলতান মনসুর শপথ না নিলে কুলাউড়ায় বিএনপির উপর ইতিহাসের নির্মম অধ্যায় রচিত হতো। সুলতান মনসুরের আসনটি শূন্য হলে কি জাতীয় পরিস্থিতি পাল্টে যেত… অভিনন্দন দেশবন্ধু।
Posted ৮:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ মার্চ ২০১৯
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.