
অনলাইন ডেস্ক : | রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের মধ্যে যে ৩৭ জনের মরদেহ বরগুনায় পাঠানো হয়, তাদের মধ্যে ১৪ জনকে শনাক্ত করেছে পরিবার। বাকি মরদেহগুলো গণকবর দেয়া হয়েছে। ঘটনায় নিখোঁজদের এখনও খুঁজে ফিরছেন স্বজনরা। আগুন ও মৃত্যুর ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গঠিত তিনটি পৃথক কমিটি কাজ শুরু করেছে। একইসঙ্গে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযানও অব্যাহত থাকে। পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকার সুগন্ধা নদীতে বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ৪২ জনের প্রাণহানি ঘটে। নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক। তবে এখন পর্যন্ত মৃত ও নিখোঁজের সঠিক সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।
মৃতদের মধ্যে ২১ কবরে ২৩ জনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান নিজে উপস্থিত থেকে গণকবর দেয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।
শুক্রবার রাতে ৩৭ মরদেহ পাঠানো হয় বরগুনার উদ্দেশে। এর মধ্যে বরিশালেই চারটি মরদেহ শনাক্ত করে পরিবার। পরে ৩৩টি মরদেহ আসে বরগুনায়। সেখান থেকে আরও ১০ মরদেহ শনাক্ত করে নেয় পরিবার। বাকি থাকে ২৩টি, যেগুলো শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়। মরদেহগুলো বেশিরভাগ পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চিনতে পারেননি স্বজনরা। তাদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।
গ্রামপুলিশের মামলা ॥ ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুন ও প্রাণহানির ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন এক গ্রামপুলিশ সদস্য। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, পোনাবালিয়া গ্রামের গ্রামপুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন এই মামলা করেছেন। লঞ্চের মালিক হাম জালাল শেখ দাবি করেছেন, অগ্নিকা-ের ঘটনা পরিকল্পিত। দেশের ভাবমূর্তি ও সরকারকে বিব্রত করতে পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
স্বজনদের আহাজারি ॥ অগ্নিকা-ের ঘটনায় ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লাফিয়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। তাদের সন্ধানে সুগন্ধার তীরে ভিড় করছেন স্বজনরা। কেউ আবার ট্রলার নিয়ে নদীর বিভিন্ন প্রান্তে খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয়জনকে। কারও হাতে নিখোঁজদের ছবি, তা নিয়ে নদী তীরের বাসিন্দাদের দেখাচ্ছেন আর বিলাপ করছেন। কেউ আবার নদী তীরের মিনিপার্ক, ডিসিপার্ক, লঞ্চঘাট এবং ঘটনাস্থল দিয়াকুল এলাকায় ঘুরছেন। অন্তত নিখোঁজ স্বজনদের মৃতদেহ যেন বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন, সেই প্রত্যাশা। তবে রেড ক্রিসেট সোসাইটির দাবি নিখোঁজ রয়েছেন ৫১ জন। তাদের সবার বাড়ি ঝালকাঠি।
উদ্ধার কাজ অব্যাহত ॥ শনিবার সকাল ৮টা থেকে ঝালকাঠি ও বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল লঞ্চঘাট এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। নিখোঁজদের উদ্ধারে ডুবুরি দল সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে বলে জানিয়েছেন ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া। শুক্রবারের পরে বেলা ৪টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। কোস্টগার্ড জানিয়েছে, তাদের উদ্ধার অভিযান নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অব্যহত থাকবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব তোফায়েল হাসানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের তদন্ত দল সকাল সাড়ে ১০টায় ঝালকাঠির লঞ্চঘাট এলাকায় এসে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরিদর্শন করেন। লঞ্চের ইঞ্জিন রুমসহ বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে তদন্ত করছেন তারা। তাদের সঙ্গে ছিলেন সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী মোঃ শাজাহান খান। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় লঞ্চের শ্রমিকদের কোন গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঝালকাঠি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকরা পৌর মিনি পার্কে এ পর্যন্ত নিখোঁজ ৫২ জনের তালিকা পেয়েছে এবং স্বজন হারানো মানুষ স্বজনদের সন্ধানে ঝালকাঠি আসছেন।
নৌ-মন্ত্রণালয় গঠিত ৭ সদস্যের কমিটির অন্যরা হলেন, নৌপুলিশ সুপার মোঃ কফিল উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ নাজমুল আলম, ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, শিপ সার্ভেয়ার মোঃ তাইফুর রহমান, নৌপরিবহন সংস্থার পরিচালক মামুনুর রশিদ ও বিআইডব্লিটিএ অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম।
তাছাড়া জেলা প্রশাসন গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটিও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ নাজমুল আলম, সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশান্ত কুমার দে, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকুন্নাহার, ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া এবং বিআইডব্লিটিএ প্রতিনিধি।
নৌপরিবহনে যাত্রীর নিরাপত্তা নাজুক ॥ দেশের নৌপরিবহনে যাত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি ‘অত্যন্ত নাজুক’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ।-সূত্র : জনকণ্ঠ
Posted ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.