
স্টাফ রিপোর্টার,সংবাদমেইল২৪.কম | মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট
ঢাকা: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ফলে সীমান্তে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা অনেকাংশে কমেছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
(২০ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরে ‘বিজিবি দিবস-২০১৬’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “সীমান্তে নীরিহ বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা আমাদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আপনাদের প্রচেষ্টায় বিএসএফের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ফলে সীমান্তে নিহতের ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।”
তিনি বলেন, “ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ৪৭৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় নতুন চারটি ব্যাটালিয়ান ও ৫৫টি বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৩৭০ কিলোমিটার সীমানা ইতোমধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে।”
বিজিবিতে নারী নিয়োগের মাধ্যমে আমরা নারী ক্ষমতায়নে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।“
শেখ হাসিনা বলেন, “২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় যে ঘটনা ঘটেছিল সেটা আমাদের জাতীয় জীবনে একটি কালো অধ্যায়। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সরকার গঠন করে। আড়াই মাসের মাথায় এ বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিলে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বিদ্রোহ, হত্যাকাণ্ডের ন্যাক্কারজনক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদের তখন মোকাবেলা করতে হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের চক্রান্তকারীদের সকল অপতৎপরতা আমরা ধৈর্য্য ও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছি। এ বাহিনীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম তা আন্তর্জাতিকভাবে আজ প্রশংসিত।”
বিজিবি সদস্যেদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের সকলের সহযোগিতায় জাতি সেই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল বলেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিজিবি সদস্য হিসেবে আপনাদের বিশ্বস্ততা পরীক্ষিত। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা বিজিবি আজকে একটি গতিশীল ও আধুনিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। কঠোর পরিশ্রমে এ বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের উপর দেশের সীমান্ত রক্ষার মহান দায়িত্ব রয়েছে। সীমান্তরক্ষা সহ অন্যান্য দায়িত্ব, যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক বাহিনীকে সহায়তা প্রদান, দুর্ঘটনা, প্রকৃতিক দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলাসহ দেশ গঠনে আপনাদের ভূমিকা ও পেশাদারিত্ব আজ সব মহলে প্রশংসিত। বিগত বছরগুলোতে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় আপনাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বলেন, “গত বছরের ৫ জানুয়ারি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদ প্রথম বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের জ্বালাও-পোড়াও পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতা প্রতিহত করতে আপনারা যে দক্ষতা দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সীমান্তে আপনাদের কঠোর অবস্থানের ফলে চোরাচালন, মাদকপাচার, নারী ও শিশু পাচার এবং সীমান্ত অপরাধ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা শুরু করে। সেই মুহূর্তে জাতির পিতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। এ নির্দেশনামা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তখনকার ইপিআর (বিজিবি) এক বেতার কর্মীর কাছে পূর্বেই পৌঁছে দিয়েছিল। নির্দেশ ছিল কোন সময় তারা এটা প্রচার করবে। সঠিক সময়ে তারা জাতির পিতার নির্দেশনা অর্থাৎ স্বাধীনতার ঘোষণার বাণীটা প্রচার করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনাটি ওয়্যারলেস থেকে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বাহিনীর অনেক সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। দুই বীরশ্রেষ্ঠ শহীদসহ আটজন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছে। এ বাহিনীর ৮১৭ জন সদস্য শাহাদাৎ বরণ করেন। ১২ হাজার সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন।”
এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিজিবি সদস্যদের আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আয়োজিত প্যারেডে সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদমেইল২৪.কম/এসএ/এনএস
Posted ৫:১১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.