
সিলেট প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুলাই ২০১৭ | প্রিন্ট
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা। জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে আটটি আগে থেকে প্লাবিত থাকলেও বুধবার পর্যন্ত আরও দুটি উপজেলার কয়েকটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম এবং সদর ও দক্ষিণ সুরমার কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার। তবে সংখ্যাটি প্রায় দুই লাখ হবে বলে ধারণা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কানাইঘাট, অমলশীদ, শেওলা ও শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বন্যায় সিলেট ও মৌলভীবাজারে আউশ ধানের পর তলিয়ে যাচ্ছে রোপা আমনের বীজতলাও। সোমবার পর্যন্ত সিলেটের প্রায় ২২ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এর আগে দুই জেলায় তলিয়ে যায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর আউশ ধান।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আলতাবুর রহমান জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়া সব ধানই নষ্ট হবে না। পানি দ্রুত কমে গেলে এসব জমি থেকেও কিছু ধান পাওয়ার সম্ভাবন আছে। পানি না কমা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসেব পাওয়া যাবে না।
এদিকে, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে স্থানীয়দের দুর্ভোগ। ওসমানীনগরের গাজিয়া গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল আলী জানান, বাড়িতে পানি ঢুকেছে। এক সপ্তাহ ধরে খাটের ওপর রান্নাবান্নার কাজ চলছে। আরও জানান, দিনের বেলা তেমন বৃষ্টি না থাকায় পানি কমলেও রাতের বৃষ্টিতে আবার পানি বেড়ে যায়। অবস্থার আরও অবনতি হলে পরিবারের লোকজনদের নিয়ে কোথায় উঠবেন এনিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
বালাগঞ্জের তেঘরি গ্রামের বাসিন্দা হানিফ মিয়া জানান, বন্যার পানিতে প্রায় দুসপ্তহ ধরে বন্দি রয়েছেন। আশপাশের আরও অর্ধশত বাড়িতেও পানি ঢুকেছে। বন্যার পানিতে ঘরে ঢুকছে বিষাক্ত সাপ। বলতে গেলে জীবন হাতে রেখেই বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। ঘরে হাটু পানি থাকায় চৌকিতে চুলা বসিয়ে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
একই গ্রামের পরিমল দাস জানান, বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। রান্নাঘর ডুবে গেছে, গোয়াল ঘরে হাটু পানি, তবে মূল ঘর এখনো সুরক্ষিত। পানি বেড়ে যাওয়াই গবাদি পশুগুলোর জন্য খাদ্য সংগ্রহ করতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জেলার মৎস অফিস জানিয়েছে, ১৩টি উপজেলার সাত হাজার ২৯৪টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতিপূরণে মন্ত্রণালয়ের কাছে খামারিদের জন্য বিনামূল্যে পোনা মাছ ও মাছের খাদ্য বিতরণের আবেদন জানানো হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, “বন্যা দুর্গত এলাকা প্রতিদিনই সরেজমিন পরিদর্শন করছি। সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণ সঠিকভাবে বিতরণের জন্য কর্মকর্তাদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪০ মেট্রিক টন চাল ও তিন লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার ত্রাণমন্ত্রী সরেজমিনে পরিদর্শন করে নগদ ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দের ঘোষণা দিয়ে গেছেন। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎসজীবী ৫৫ হাজার ভিজিএফ কার্ডধারীকে প্রতিমাসে চাল ও নগদ টাকা বিতরণের কার্যক্রম চলছে।
সংবাদমেইল২৪.কম/এসএএস/এনআই
Posted ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুলাই ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.