বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | রবিবার, ০৬ নভেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট
ঢাকা: সারাদেশের কৃষকদের তথ্য সংবলিত পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ১ কোটি ৪৪ লাখ কৃষকের ডাটাবেজ তৈরির লক্ষ্য নির্ধারিত হলেও সরকারের লক্ষ্য আড়াই কোটি কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি করা। সে লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যা পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাই শেষে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।
পাশাপাশি ই-কৃষির মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ সেবা জোরদারকরণ ও ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের ট্যাব সরবরাহ করা হবে। মূলত কৃষি ব্যবস্থাপনাকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনতেই সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প শিগগিরই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের কৃষি ব্যবস্থার পুরো প্রক্রিয়াই তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। ফলে কৃষক ঘরে বসেই কৃষি সংক্রান্ত নানা ধরনের তথ্য বা সেবা পাবেন। সেজন্য কৃষি অফিস বা অন্য কোথাও যেতে হবে না। কৃষকরা যাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের ট্যাব সরবরাহ করবে সরকার। কর্মকর্তারা ওই ট্যাব ব্যবহার করে কৃষকদের নানা ধরনের সেবা প্রদান করবেন। কৃষকদের বিভিন্ন গ্রুপে এই সেবা দেয়া হবে। ভবিষ্যতে কৃষকদেরও ট্যাব দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় যেসব কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি হবে তাদের প্রত্যেককে একটি কার্ড দেয়া হবে। ওই কার্ডে কৃষকদের সব তথ্য থাকবে। ফলে তা ব্যাংকঋণ প্রাপ্তিতেও কৃষককে সহায়তা করবে। তখন আলাদা ভেরিফিকেশনদরকার হবে না। তাছাড়া উন্নয়ন সহযোগীরা জানতে পারবেন কৃষকের কী অবস্থা, কোন্ কৃষকের কী উন্নয়ন দরকার। আর প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের যে ট্যাব দেয়া হবে ওই ট্যাবের মাধ্যমে কৃষকরা কৃষি সংক্রান্ত নানা ধরনের সেবা পাবেন ঘরে বসেই। কোন ফসল উৎপাদন করতে হবে, উৎপাদন সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত তথ্যও ট্যাবের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। তাছাড়া ফসলের রোগবালাই ও তার প্রতিকারের বিষয়ে তথ্য ছাড়াও আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যও জানতে পারবেন কৃষক। ট্যাবে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো ইনস্টল করা থাকবে। তাছাড়া এ বিষয়ে নতুন এ্যাপসও তৈরি করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে (এসও) আড়াই হাজার কৃষি পরিবারকে সহায়তা দিতে হয়। যা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া কৃষি সংশ্লিষ্ট আপডেটেড ইনফর্মেশনগুলোও সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। ফলে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য কৃষকের কাছে যাচ্ছে না। এখন কৃষক শুধুমাত্র খাওয়ার জন্যই পণ্য উৎপাদন করে না। তার অনেক বাজার সংক্রান্ত তথ্যও প্রয়োজন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওই সমস্যাগুলো থাকবে না। তাছাড়া যে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন তাদের ট্র্যাকিং করা দরকার। একজন কৃষক কোথা থেকে কথা বলছেন সে তথ্যও দরকার। তবেই সঠিকভাবে তথ্য দেয়া যাবে। ইতিমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রকল্পটি প্রণয়ন করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ইতোমধ্যে ভারতে ই-কৃষি সম্প্রসারণ সেবা চালু রয়েছে। বাংলাদেশেও সরকারি ও বেসরকারী পর্যায়ে ই-কৃষি নিয়ে কাজ চলছে পুরোদমে। তবে কাজগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিন্তু সরকার ই-কৃষি নিয়ে সবগুলো কাজের সমন্বয় চাচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কৃষকদের ওই সেবা দিতে পারবে কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা।
এদিকে এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান মোঃ মনজুরুল আনোয়ার জানান, কৃষি ব্যবস্থাপনাকে প্রযুক্তির আওতায় আনতে বর্তমানে প্রকল্পটির যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। প্রকল্পের আওতায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের (এসএএও) ট্যাব দেয়া হবে। ওই ট্যাব ব্যবহার করে কর্মকর্তারা কৃষকদের নানা ধরনের সেবা প্রদান করবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এর সুফল পাবেন কৃষক। প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ৪৪ লাখ কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। তবে সরকারের লক্ষ্য আড়াই কোটি কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি করা।
অন্যদিকে এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ হামিদুর রহমান সংবাদমেইলকে জানান, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় শিগগিরই প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে। আর প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ কৃষকরা উপকৃত হবেন।
সংবাদেমইল২৪.কম/বা/নাশ
Posted ৯:১১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৬ নভেম্বর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.