সিলেট প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | বুধবার, ২৮ মার্চ ২০১৮ | প্রিন্ট
দেশব্যাপী ধর্মপরায়ণ আধ্যাতিক নগরী হিসেবে পরিচিত সিলেট। সেখানে এক ছাত্রী নিজেকে সমকামী দাবী করার ঘটনায় চলছে সর্বত্র তোলপাড়। পূজা সরকার নামের এক কলেজ ছাত্রী পরিবারের সাথে ভাড়াবাড়িতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ধরাধরপুর গ্রামে বাস করে আসছে। তার বাবার নাম ভুলা সরকার। সে তার ফেসবুক আইডিতে নিজেকে সমকামী দাবী করে বিস্তর আলোচনা করে সম্প্রতি স্ট্যাটাস দেয়। তার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ও প্রকাশ্যে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে গ্রাম থেকে তাদের বেড় করে দিতে এলাকাবাসী শালিসি ব্যাক্তিদের কাছে দাবি তুলেন।
পাঠকের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
আমি সমকামী, আমি গর্বিত। আমরা সবাই এক, সবাই মানুষ। জানিয়ে রাখি আমার সংজ্ঞা লেসবিয়ান। যদিও লেসবিয়ান নামটা আমার একদম ভালো লাগে না। স্টাইল মারার জন্য সমকামী হইনি। কোন সমকামী সংগঠনের সাথে আমি যুক্ত নই, না কোন সমকামীর সাথে ব্যক্তিগত ভাবে মিশেছি যে কারো থেকে এই ছোঁয়াচে রোগ আমার মধ্যে এসেছে। পর্ণর প্রতিও আমার কোন টান নেই। জানি না, কি করে আমার ভিতর এই রোগ এসেছে। সারানোর চেষ্টা করেছি বহুবার, কিন্তু পারিনি। আর সারানোর চেষ্টা করিনা, দরকার পড়েনা। আমার এই সমকামী রোগ আমাকে কষ্ট দেয় না, না আমাকে শারীরিক ভাবে দুর্বল করে, না স্মৃতি শক্তি দুর্বল করে, না জ্বর আনে, না আমার চোখ লাল করে, না ঘন ঘন পেট ব্যথা, চুলকানি, আমাশা আনে, না আমাকে পঙ্গু করে বিছানায় ফেলে রাখে। আপাতত, এই সমকামী রোগের জন্য এখনও অবধি এই ধরনের কোন লক্ষণ আমি নিজের মধ্যে পাইনি। যেটা পেয়েছি সেটা হল, হ্যান্ডসাম ছেলেদের থেকে সুন্দরী মেয়ে দেখলে আমার পেটে প্রজাপতি ওড়ে।
আমি আমার রোগের ব্যাপারে অনেককেই জানিয়েছি। রোগ হল আমার কিন্তু রোগের কথা শুনে চুলকানি আমাশা অন্য কারো শুরু হয় মাঝে মাঝে, আর অন্যকে চুলকানি আমাশা থেকে মুক্ত করবার জন্য ঘন ঘন তেতো ওষুধ আমাকে গিলতে হয়। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব অনেকেই জানে। যাই হোক, আসল কথায় আসা যাক। আমি অনেক আগেই নিজেকে সমকামী হিসাবে পরিচয় দিয়েছি, তাই অন্যদের মতন বাড়ির চাপ, অত্যাচার, টিটকারি বা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল এখনও একটু একটু সইতে হয়। তবে একজন তথাকথিত সমকামীদের অধিকার সমর্থনকারীর কাছে নিজের চরিত্রের বিবরণ পেয়েছিলাম। আমি সমকামী, আমি শারীরিক দিক দিয়ে মেয়ে, মানসিক দিক দিয়ে ছেলে, এবং শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে মেয়েদেরই পছন্দ করি। আমি মেয়েদের পছন্দ করি তার মানে এই নয় আমি পুরুষদের ঘৃণা করি, আমি কট্টর টমবয়। আমি সমকামী, তার মানে এই নয়, আমি অত্যাধুনিক। সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। কিছুটা পরিবারপন্থী। আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি ছিল কিন্তু পরবর্তী কালে বিভিন্ন কারণে তা ভেঙ্গে যায়। আশেপাশে অনেক পরিবারও ভাঙতে দেখেছি। মেনে নিয়েছি, বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে সম্পর্ক, সেটি আমাকে বিশেষ ভাবে টানে। একজনই সঙ্গী বা সঙ্গিনী, দুজন একে অপরের দায়িত্ব দেওয়া নেওয়া, বিশ্বস্ত থাকা, সাধারণ দাম্পত্য সম্পর্ক বলতে যা বোঝায় তাই। সমকামী সম্পর্কও আমি বরাবর এই ভাবে দেখে এসেছি, না হোক তথাকথিত আনুষ্ঠানিক ‘বিয়ে’, কিন্তু একসাথে ,একজনের সাথেই থাকা।
ফেসবুকে আসলাম, অনেকের সাথে আলাপ হল, কেউ কেউ ভালো, কেউ কেউ মন্দ। অনেক সমকামী সংগঠনের খোঁজ পেলাম, গ্রুপে যোগ হলাম (জানিয়ে রাখি, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং’এ আমি প্রেম করতে আসিনি, মেয়ে দেখতে, মেয়ে পটাতে আসিনি। বিভিন্ন লোকদের সাথে মিশতে, আড্ডা মারতে এসেছি) বেশ ভালো লাগলো, আমি একাই বাংলাদেশে ভৌতিক প্রাণী নই, আমার মতন অনেকে আছে। তাদের আপডেট, কমেন্ট, অসুবিধা, ভয়, অনিশ্চয়তা সম্পর্কে জানলাম। কোন কোন মেয়ের উপর একটু রাগই হল, বয়েসে আমার থেকে অনেক বড়, কিন্তু অনেক ভিতু, বাড়িতে কাউকে জানায়নি, নিজেকে সমকামী বলে ওপেন ডিবেট করেনা, নিজের প্রেমিকাদের ছবি আপলোড করে না… কিন্তু আমার ভিতর এই সাহসটা আছে। আমাদের সকল সমকামীদের উচিৎ বুকে সাহস নিয়ে নিজের পরিচিয়, নিজের স্বত্তা সবার সামনে তুলে ধরা। সবাই সবার হাতে হাত রেখে বলা “আমি সমকামী, আমি গর্বিত”। আমরা সবাই এক, সবাই মানুষ। ভয় পেলে তো জয় হবে না।
পূজা সরকারের এমন পোষ্ট দেয়ায় প্রতিবাদকারী জনতা ওই ছাত্রীর পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার দাবি তুলেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গ্রামের শালিসি ব্যাক্তিদের নিয়ে রোববার দক্ষিণ সুরমা থানায় বৈঠক হয়। সে সময় মেয়ের বাবা ভুলা সরকারও উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল বলেন, মেয়ের পরিবার ধরাধরপুর গ্রামে ভাড়া বাড়িতে থাকে। তাদের মূল বাড়ি বগুড়া। মেয়ে আগামী এইচ এ সি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা দিতে যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য তিনি শালিসি ব্যাক্তিদের সহযোগীতায় চেয়েছেন। পুলিশের তৎপরতায় বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও এ বিষয় নিয়ে গ্রামবাসী বড় পরিসরে আবারো বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
Posted ৩:৪৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৮ মার্চ ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.