স্পোর্টস রিপোর্টার, সংবাদমেইল২৪ডটকমঃ | রবিবার, ১৯ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
ঢাকা: এবার আর স্বপ্নভঙ্গের বিলাপ নয়। মুলতান আর ফতুল্লার আর্তনাদ ছুঁড়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। রোববার কলম্বোর পি সারা ওভালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের শততম টেস্টে ৪ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা।
সোনালী জয়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন দুই পুরনো যোদ্ধা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। অসম সাহসী সহযোদ্ধা হিসেবে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সাব্বির রহমান কিংবা মুস্তাফিজুর রহমানের কথাও ক্যাচ লাইন লিখতে হবে।
এতদিন লঙ্কানদের বিরুদ্ধে টেস্ট মানেই হতাশা, ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী। দুটি ড্র ছিল সান্ত্বনার। তবে কলম্বোর পি সারা ওভালে অতীত ব্যর্থতা ছুড়ে ফেলে নতুন ইতিহাসই গড়ল টাইগাররা। শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আসল বাংলাদেশের প্রথম কাঙ্খিত জয়। সেই সঙ্গে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ড্রও করল মুশফিক শিবির। দেশের বাইরে ভারতীয় উপহাদেশে বাংলাদেশের এটি প্রথম টেস্ট জয়। শুধু তাই নয়, চতুর্থ দল হিসাবে শততম টেস্টে জয় পেল বাংলাদেশ। এর আগে এমন কীর্তি ছিল পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার।
অতীতে বাংলাদেশের জন্য পি সারা ওভাল ছিল ‘এক প্রকার কসাইখানা’। সেঞ্চুরি ম্যাচের আগে শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক ভেন্যুটিতে তিনটি ম্যাচ খেলে তিনবারই লজ্জায় মাথা নিচু করতে হয়েছিল; ইনিংস ব্যবধানে হার মেনেছিলেন মুশফিক ও তার অগ্রজরা।
তার ওপর এই ভেন্যুতেই বাংলাদেশের একটি দৃষ্টিকটু রেকর্ড ছিল। সেটি হলো টেস্ট ম্যাচের এক ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রানের নজির। ২০০৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে কলম্বো টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬২ রানে অলআউট হয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু নিজেদের চতুর্থ প্রচেষ্টায় ভারত মহাসাগরের নীলজলে সেসব দুঃস্বপ্ন অবলীলায় ছুঁড়ে ফেলেছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।
কলম্বো টেস্টের চতুর্থ দিন শেষেই বিদেশের মাটিতে বিরল টেস্ট জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আজ সকালে গোটা দেশের ঘুম ভেঙেছিল সেই স্বপ্নকে সঙ্গী করেই। তামিম-সৌম্যরাও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। বরং মাঠে থাকায় তাদের আরো বেশি স্নায়ুর পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কিন্তু টেস্টের পঞ্চম দিনের হিসেবে ১৯১ রান ‘ডালভাত’ কোনো লক্ষ্যমাত্রা ছিল না।
পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায় ২০১৫ সালে ১৭৬ রানের টার্গেট ছুঁতে পারেনি মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। ২০০৯ সালে ১৬৮ রান করতে ব্যর্থ হয় ক্রিকেটের অনুনমেয় শক্তি পাকিস্তানও। সেই হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে একটা ভয় ছিলই। তবে এবার আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
অবশ্য বাংলাদেশের জন্য পঞ্চম দিনের শুরুটা সহজ ছিল না। আগের দিনের ২৬৮ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে রোববারও হতাশা বাড়িয়ে চলেছিলেন দিলরুয়ান পেরেরা ও সুরঙ্গা লাকমল। নবম উইকেট জুটিতে ২১ দশমিক ২ ওভার অবিচ্ছিন্ন থেকে এক পর্যায়ে ৮০ রান তুলে ফেলেছিলেন তারা।
দুজনেই ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন, একই সাথে সাবলীল ক্রিকেটও উপহার দিয়েছেন। এমনকি আউট হওয়ার কোনো নমুনাই দেখা যাচ্ছিলো না তাদের। সেই অবস্থায় শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসের ১১২ দশমিক ৪ ওভারে শুভাশীষের ফিল্ডিং মিস অতিথিদের জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দেয়। একটু বিভ্রান্ত হয়ে রান নিতে গিয়ে বোলার মেহেদির হাতে রানআউট হন দিলরুয়ান পেরেরা। ১৭৪ বলে ৫০ রান করে থামেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তখন শ্রীলঙ্কার দলীয় রান ছিল ৩১৮।
এর চার বল বাদে আউট হন সুরঙ্গা লাকমল। সাকিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে দলীয় ৩১৯ রানে মোসাদ্দেকের তালুবন্দি হন তিনি। আউট হওয়ার আগে ক্যারিয়ার সেরা ৪২ রান করেন লঙ্কান পেসার।
৩৬ দশমিক ২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৭৪ রান দিয়ে চারটি উইকেট নেন সাকিব। ২৩ ওভারে ৭৮ রান দিয়ে তিনটি উইকেট কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের। এছাড়া একটি করে উইকেট মিরাজ ও তাইজুলের।
এরপর ১৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে গড়বড় করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। রঙ্গনা হেরাথের করা অষ্টম ওভারে দুই বলের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার (১০) ও ইমরুল কায়েস (০)।
স্কোরবোর্ডে তখন সবেমাত্র ২২ রান। ফলে কেঁপে ওঠে পুরো টাইগার ব্রিগেড। সামনে ভাসতে থাকে অতীতের বিভিন্ন হতাশার ছবি। কিন্তু চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা করে মাঠে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল। প্রথম ইনিংসে এক রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন। ৩০তম জন্মদিনের আগের দিন তা সুদেআসলে শোধ করেন। এদিন ১২৫ বলে ৮২ রানের ঝলমলে একটি ইনিংস উপহার দেন তামিম। ৩৭তম ওভারের পঞ্চম বলে, দলীয় ১৩১ রানে আউট হন বাঁহাতি ওপেনার। জয় থেকে ৬০ রান দূরে থাকতে। এরপর দ্রুত আউট হন সাব্বির রহমানও। স্কোরবোর্ডে ১২ রান যোগ করে বিদায় নেন সাব্বির। ৪১ রান করে পেরেরার বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন রাজশাহীর ক্রিকেট প্রতিভা।
এরপর সাকিবের বিদায়টা ছিল হতাশার। ৪৩ বলে ১৫ রানে পেরেরার বলে বোল্ড হন তিনি। যদিও স্ট্যাম্পের বল পড়েছে অনেকক্ষণ পর। এই জুটি ভাঙার পর বাংলাদেশ শিবির শঙ্কা ছড়ায়।
তবে ষষ্ঠ উইকেটে জুটিতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরের কাছাকাছি নিয়ে যান অধিনায়ক মুশফিক ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। জয়ের জন্য দরকার যখন দুই রান। তখন বিদায় নেন সৈকত। ২৮ বলে দুই চারে ১৩ রানে হেরাথের বলে ডিকভেলার হাতে ক্যাচ দেন। তবে এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশকে। মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক জয় নিয়ে উল্লাসে মাতেন মুশফিক। জয়সূচক দুই রান আসে মিরাজের ব্যাট থেকে।
আহ দারুণ জয়। এ এক অন্য অনুভূতি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: প্রথম ইনিংস- ৩৩৮ (চান্ডিমাল ১৩৮, মিরাজ ৩/৯০), দ্বিতীয় ইনিংস- ৩১৯ (করুনারত্মে ১২৬, পেরেরা ৫০, সাকিব ৪/৭৪)
বাংলাদেশ: প্রথম ইনিংস- ৪৬৭ (সাকিব ১১৬, মোসাদ্দেক ৭৫, সৌম্য ৬১, মুশফিক ৫২, হেরাথ ৪/৮২) দ্বিতীয় ইনিংস- ১৯১ (তামিম ৮২, সাব্বির ৪১, হেরাথ ২/৫০)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
সংবাদমেইল২৪.কম/এসএ/এনএস
Posted ৬:২৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ মার্চ ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.