
বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | প্রিন্ট
উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির
অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে হবে। পাশাপাশি শরণার্থী রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
বুধবার শারদীয় দুর্গাপূজা পরিদর্শনে গিয়ে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিকদার, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু।
রাষ্ট্রপতি রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানান মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ। স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
রামকৃষ্ণ মিশনের আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দুর্গাপূজা পরিদর্শন করেন। মন্দিরে পৌঁছালে নারী ও শিশুরা রাষ্ট্রপতিকে ফুল ছিটিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
সেখানে অনুষ্ঠানে আবদুল হামিদ শারদীয় দুর্গোৎসবের সার্বজনীনতার কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা ঠেকাতে নিজের সরাসরি অংশ নেয়ার কথাও বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে বিশ্বের সকল দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে হবে।”
মিয়ানমার থেকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মুসলিম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে অনেক হিন্দুরাও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “তাদের প্রতিও আমাদের সহমর্মিতা থাকতে হবে। তাদের দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়াতে হবে, সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।”
কেউ যাতে উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে সবাইবে দুর্গোৎসবের আনন্দকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, “আজ বিশ্বজুড়ে হিংসা, বিদ্বেষ আর ধ্বংস আমাদের সামনে এক ভয়াবহ অশনি সঙ্কেত হয়ে দেখা দিয়েছে। এ হত্যা আর ধ্বংস প্রতিরোধে আমাদেরকে ধর্মের অহিংস ও শান্তির অমিয় বাণী বিশ্ব জনতার কাছে তুলে ধরতে হবে।”
তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আক্রমণ হয়েছিল। আক্রান্ত হয়েছিল নব্বইয়ের সাম্প্রদায়িক হামলার সময়েও। আমি সেসময় এই মন্দিরে এসেছি। আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। সে-সময় বাংলাদেশের মানুষ আসুরিক শক্তিকে পরাজিত করতে এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।”
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রক্ষায় সবাইকে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “দুর্গাপূজার আয়োজন ধর্মান্ধতা ও জঙ্গিবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জাতীয় ঐক্য ও সংহতিকে আরও দৃঢ় করবে বলে আশা করি।”
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে পৌনে ৫ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে এর আগে থেকে আরও ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।
এবার রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরু হলে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর কাজাখস্তানে ওআইসির এক সম্মেলনে এই বিষয়টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
Posted ১:০৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.