
আহমদউর রহমান ইমরান, রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে: | মঙ্গলবার, ১৯ জুন ২০১৮ | প্রিন্ট
মৌলভীবাজারের রাজনগরে মনু নদীর ভাঙনে কামারচাক, মনসুরনগর ও টেংরা ইউনিয়নে বন্যার পর এবার কুশিয়ারা নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে উত্তরভাগ ও ফতেহপুর ইউনিয়নের আবারো বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। মঙ্গলবার ভোর রাতে উত্তরভাগ ইউনিয়নের কালাইগুল এলাকার ভাঙন মেরামতে সেনাবাহিনী, পাউবো ও স্থানীয় জনসাধারণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে পাউবোর গাফিলতির কারণে কালাইগুল এলাকার ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও লোকজন অভিযোগ করেছেন। কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে নদী তীরের ১৪-১৫টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ওইসব গ্রামের মানুষজন পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও মনু নদীর পানি কমে যাওয়ায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল বিকালে উপজেলার কামারচাক মনসুরনগর ও টেংরা ইউনিয়নে সরকারী ত্রাণের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা ত্রাণ বিতরণ করছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মনু নদীর পানি বেড়ে ঈদের আগের দিন বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান ভেঙ্গে কামারচাক, মনসুরনগর পুরোপুরি এবং ও টেংরা ইউনিয়নের ১০টি মিলিয়ে ৮৫টি গ্রাম তলিয়ে যায়। গত ৩০ বছরে এমন বন্যা কেউ দেখেনি বলে মত বয়স্ক মানুষদের। শুক্রবার রাত থেকে পানিবন্ধি মানুষদের উদ্ধারে রাজনগরে ৫০ সদেস্যের সেনাবাহিনীর একটি দল উদ্ধার তৎপরতা চালায়। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয়। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য ১৫টিরও বেশিও ফ্লাড সেন্টার খুলা হয়েছে। তবে পানি কমতে থাকায় মানুষজন বাড়িঘরে ফিরছেন। কামারচাক ও মনসুরনগর ইউনিয়নে সরকারী ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল বিকালে মনসুরনগর ইউনিয়নে ১০০০ হাজার বন্যাকবলিত পরিবারে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদসহ জেলা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মনসুরনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, সরকারী ত্রাণের অপেক্ষা না করে শুরু থেকেই আমার নিজ উদ্যোগে ত্রাণ কাযক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মঙ্গলবার বিকালে ১০০০ হাজারেরও বেশি পরিবারে ত্রাণ দিয়েছি। তালিকা চলছে, দ্রুত বন্যার্থ মানুষদের মাঝে ত্রাণ পৌছে দেয়া হবে।
কামারচাক ইউনিয়নের খাসপ্রেমনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমানসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী ছিলেন। কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম জানিয়েছেন গত দুইদিনে প্রায় ৩ হাজার বন্যাকবলিত পরিবারে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও গতকাল জেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আজিজুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য রওনক আহমদ অপুসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রসহ মনসুরনগর এলাকায় বাঁধে আশ্রয় নেয়া বন্যাকবলিতে পরিবাওে খাবার বিতরণ করেন।
১৯ জুন মঙ্গলবার বিকালে মৌলভীবাজার-৩ আসনের এমপি সৈয়দা সায়রা মহসিন বন্যা কবলিত এলাকা ও উত্তরভাগ ইউনয়িনের কুশিয়ারা নদীর বাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে তিনি বন্যাকবলিত মানুষদের মাঝে প্রায় ১০টন চাল বতিরণ করেছেন।
এদিকে সরকারী বরাদ্দ নিয়ে রাজনগর উপজেলার মানুষদের অসন্তুষ রয়েছে। জেলার বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারী ত্রাণ বিতরণে বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রাজনগরের সচেতন মানুষদের মাঝে। সর্বশেষ রাজনগরে নগদ ২ লাখ বিশ হাজার টাকা ও ১৬৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মনসুরনগর ইউনিয়নে নগদ ৯০ হাজার টাকা ও ৭০টন চাল এবং কামারচাক ইউনিয়নে নগদ ১ লাখ টাকা ও ৮৫ টন চাল ও টেংরা ইউনিয়নে ২০ হাজার টাকা ও ১০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তার বলেন, সোমবার পর্যন্ত যে বরাদ্দ ছিল এর পর আর কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। মন্ত্রী মহোদয় যে বরাদ্দের কথা বলে গেছেন তা প্রসেসিং হয়ে দ্রুত চলে আসবে বলে জানানো হয়েছে। আমরা যে বরাদ্দ পেয়েছি তা দ্রুত সাধারণ মানুষদের মাঝে পৌছে দেযার জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
Posted ১০:২২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ জুন ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.