
আহমদউর রহমান ইমরান, রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে : | মঙ্গলবার, ২৬ জুন ২০১৮ | প্রিন্ট
ঈদের আগেরদিন শুক্রবার রাতে মনু নদীর ভাঙনে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ও কামারচাক ইউনিয়নের পাঁচ হাজারেরও বেশি কাচা ঘর পুরোপুরি বা আংশিক ভেঙ্গে গেছে। নষ্ট হয়েছে ঘরে থাকা আসবাব-পত্র। গত দুই দিন উপজেলার এ দুটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মানুষের ঘর তৈরীর এ সংগ্রাম। এছাড়াও ধান ক্ষেত, সবজি ক্ষেত সবই নষ্ট হয়েছে। ‘কিলা বাছতাম ভাই খউকা, ইলা পানি জীবনেও দেকছিনা। ঘর তাকি বারইতে বারইতে (বের হতে) সবতা বুরাইলাইছে (ডুবিয়ে ফেলেছে)। লঙ্গুরপুলের যাত্রী ছাউনীত আশ্রয় নিছি।’ মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙনের তুড়ে ভেসে যাওয়া ঘর ঠিক করতে করতে বলছিলেন আশ্রাকাপন গ্রামের আওরতি রানী মালাকার (৩০)।
মনসুরনগর ইউনিয়নের মালিকানো গ্রামের শুকুতি রানী মালাকার (৪০) বলেন, ঈদের দুইদিন আগে থেকেই পানি বাড়ছিল। ভাঙন না দেয়ায় আমাদের তেমন সমস্যা হচ্ছিল না। তবে, ভয়ে ছিলাম। ঈদের আগেরদিন শুক্রবার রাতে আকস্মিক খবর পাই মনু নদীর বাঁধে ভাঙন দিয়েছে। দেখতে দেখতে পানি এসে যায় বাড়ির সামনে। ঈদের দিন পান বাড়ছিলই। কোন রকম ঘর থেকে বের হয়ে কদমহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয় নিয়েছি। পানি কমেছে, কিন্তু ঘর ঠিক না করে বাড়িতে আসতে পারছি না। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে এসে ঠিক করছি। মনু নদীর ভাঙনে মনসুরনগর ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামের সবকটিই তলিয়ে যায়। আকস্মিক ও অস্বাভাবিক পানি হওয়ায় এ ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজারেরও বেশি বাড়িঘর পুরোপুরি বা আংশিক ভেঙ্গে গেছে। ঘর না থাকায় মানুষ এখনো বাঁধে ঝুপড়ি বানিয়ে বাস করছে। ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, বাধেঁর কাছে গেলে বুক ধরানো যায় না। চুখে পানি এসে যায়। মানুষ খুব কষ্টে আছে।
এদিকে কামারচাক ইউনিয়নেরও পুরো ৪২টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। খাসপ্রেমনগর গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর বন্যার পানিতে ধ্বসে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ফিরে মানুষ খোলা আকাশের নিছে বাস করছে। ঘর ঠিক করার জন্য অর্থও তাদের কাছে নেই। ওই গ্রামের শামছু মিয়া (৫০) বলেন, এতো তারাতারি পানি বাড়বে কে জানে। হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় বাড়ি থেকে তেমন কিছু নিয়ে যেতে পারিনি। ঘরের চালার সাথে ছিলনি। ঢেউয়ের কারনে ঘর ধ্বসে গেছে। একই গ্রামের আছমা বেগম (৪৫) বলেন, ঘর ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু কীভাবে ঠিক করাবো। ধার দেনা ছাড়া উপায় নাই।
এবারের বন্যায় সাধারণ মানুষের কাঁচা ঘরগুলো টর্নেডোয় ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। দিনমুজুর মানুষেরা পড়ছে ঋণের জালে। মাথা গুজার এ সংগ্রাম তাদেরকে ঠেলে দেবে অনিশ্চয়াতায়।
কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম বলেন, এখনো পুরোপুরি হিসাব করা হয়নি। যা দেখেছি তাতে ৩ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বসে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌসি আক্তার বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ পেয়ে বিতরণ করে যাচ্ছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘরের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী আমরা বরাদ্দ চাইব। বরাদ্দ পেলে দ্রুত পূনর্বাসনের কাজ শুরু করা হবে।
সংবাদমেইল২৪.কম/এনআই
Posted ৪:৩৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ জুন ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.