
আহমদউর রহমান ইমরান,সংবাদমেইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | প্রিন্ট
বাপ আছলা লন্ডনি। দাখিল ও পাস করছিলাম মাদরাসা থাকি। অনেক মানুষরে লন্ডন নিছইন আমার বাপে। রাজনগর বাজারে আমরার জমিন আছিল। এই ভাবে বগলি দিয়া হাটি ত্রিশ বছর ধরি। খুব কষ্টে সংসার চালাই। ওখন তো ঘরে-দুয়ারে বন্যার পানি। বিভিন্ন মানুষে টাকা-পইসা দিয়া সাহায্য করইন। পানির মাজে অনেক দিন বাহির হইতে পারি না। বউ হুরুতা লইয়া অনেক সময় উপাস তাকতে হয়।
জীবনের এমন কিছু দুঃখময় কাহিনীর কথা বলেন মো. হান্নান মিয়া (৫৫) । তার বাড়ি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের সারমপুর গ্রামে। বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান হান্নান মিয়া। বৈবাহিক জীবনে দুই সন্তানের জনক তিনি। লেখাপড়ায় দাখিল পাস। ভাগ্যের পরিহাসে দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে বগলি দিয়ে চলা চল করছেন। প্রতিদিন মানুষের ধারে ধারে কষ্ট করে বগলি দিয়ে ছুটেন কিছু অর্থের জন্য। সারা দিনে যা পেকেটে জমা হয় তা দিয়ে বিকেলে নুন-ভাত নিয়ে যান স্ত্রী,সন্তানদের জন্য। রাজনগরের সবাই দেখে তার সেই কষ্টে চলা ফেরা। যার যার অবস্তান থেকে সাহায্য সহযোগিতা ও করেন। কোনো দিন ১০০/১৫০ হয় । আবার তো অনেক দিন হয় না। তা দিয়ে কি একটি সংসার চলে? তারি মধ্যে কয়েক মাস থেকে বন্যাকবলিত তার বাড়ি।
হান্নান মিয়ার সাথে আলাপে জানাযায়,তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলের লন্ডনি। সবাই এক নামে জানতো রিপাত উল্যা লন্ডানি। রাজনগর বাজারে ছিলো নিজস্ব জায়গা। রিপাত উল্যার একমাত্র ছেলে হান্নান মিয়া। বাবা লন্ডন আশা যায়া করেন,ছেলে ও মাদরাসায় পড়েন। হান্নান মিয়া দাখিল পাস করে ও আর লেখা পড়া হয়নি। বাবা রিপাত উল্যা হঠাৎ মারা গেলেন। মা ও ছেলের অসহায় অবস্তা। বাবার অবর্তমানে কি করবেন? কিছু ভেবে পাচ্ছিলেন না। হাতে কোনো কাজ জানা ছিলো না। কি আর করা, তখনি সংসারের হাল ধরতে হান্নান মিয়া যোগ দিলেন পাকা মিস্তী কাজে। ভালো ও চলছিল কাজকর্ম। মা বিয়ে ও করালেন তাকে। বিয়ের কয়েক মাস পর কাজের মধ্যে একদিন পরে গেলেন নতুন নির্মীত পাকা দালান থেকে। সেই দূর্ঘটনা যে তার জীবনের কাল হয়ে দাড়ালো। কেরে নিলো তার দুই পায়ের শক্তি । দুঃখ আরো জীবন সাথী হলো। তারি মধ্যে স্ত্রী’র কোল জুড়ে আসলো পুত্র সন্তান। কয়েক বছর পর জন্ম নেয় আরেকটি মেয়ে সন্তান। দু’হাতে বগলি প্রায় ৩০ বছর ধরে ।হাটা চলা করেন এই ভাবে। দোকানে- দোকানে ,সরকারি-বেসরকারি অফিসে,বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতিদিন সাহায্য তুলেন হাত পেতে।
হান্নান মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,সরকারি ভাবে শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। তিন মাস পর পর অল্প কিছু টাকা পাই,তা দিয়ে চার জনের সংসার, ছেলে- মেয়ের লেখাপড়া চালানো বড় কষ্টের। আমার বড় ছেলে ৮ম শ্রেণী থেকে এই বছর জেএসসি পরীক্ষা দিবো।পড়ালেখাত ভালো আমার ছেলে। মেয়ে ও ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। আমি বড় কষ্ট করে সংসার চালাই। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সংগটনে ত্রান দেয়। রমজান মাসে ‘হৃদয়ে রাজনগর সামাজিক সংস্থা’য় কিছু রমজান সামগ্রী দিছিল সারা মাস কাইছি। আরো অনেকেই দেন,কিন্তু তা দিয়া চার জনের সংসার চলে না। আমি সবার সাহায্য সহযোগিতা চাই।
সংবাদমেইল২৪.কম/এআরই/এনআই
Posted ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.