
শরীফ আহমেদ, নিউজ এডিটর। সংবাদমেইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট
প্রতীক বরাদ্ধ পর থেকে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে হাফ ডজন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জেলার সকল জনপ্রতিনিধির মন জয় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন নিজেদের পক্ষে ভোট এনে জয়ী হতে জোর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এ সুযোগে জেলা সদর থেকে শুরু করে মফস্বলের জনপ্রতিনিধিদের কদর বেড়েছে। প্রতিনিয়ত তাদের ব্যক্তিগত সেলফোনে সাবেক হুইপ, সংসদ সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা কল দিয়ে সালাম আদাব ও নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। তবে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের কদর কতটুকু বহাল থাকবে এ নিয়ে চলছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মধ্যে ব্যাপক আলোচনা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, হ্যাভিওয়েট আ.লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক হুইপ, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আজিজুর রহমান নিজের ‘চশমা’ প্রতীক, সম্বলিত লিফলেট ছাপিয়ে যাচ্ছেন জেলার জনপ্রতিনিধি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নিজের পক্ষে ভোট আনতে। তবে তিনি সরকারদলীয় মনোনিত প্রার্থী হওয়ায় নিজ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান,পৌর মেয়র,ইউপি চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাকর্মীরা পাশে থাকায় প্রচার প্রচারনায় অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন।আপরদিকে প্রচারণার সময় তিনি নির্বাচিত হলে বরাদ্ব দিবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটরের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি আ.লীগের দুই বিদ্রাহী প্রার্থী হওয়ায় প্রবীণ এ রাজনীতিবীদ বেকায়দায় রয়েছেন।
অপরদিকে আরেক হ্যাভিওয়েট (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান,সাবেক জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি তারণ্যের প্রতীক দক্ষ কর্মঠ এম এম শাহীন প্রতীকে লাটারীতে জয়ী হয়ে ‘আনারস প্রতীক’ লিফলেট ছাপিয়ে সমর্থকদের সাথে নিয়ে রাজনগর,জুড়ী, বড়লেখাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মন জয় করে নিজের পক্ষে ভোট আনতে আড়ালে প্রচার প্রচারণায় দিন কাটাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণায় এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়তার শীর্ষে ও ভোটের রাজনীতিতে পূর্বের অভিজ্ঞতা থাকায় অপর প্রার্থীরা বিপাকে রয়েছেন। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও এম এম শাহীন জেলার একক বিএনপি পন্তী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি সমর্থিত জনপ্রতিনিধি ও আ.লীগ বিরোধী ভোট পেয়ে শেষ পর্যন্ত চমক দেখাতে পারেন বলে আলোচনা চলছে।
এ দিকে ক্ষমতাসীন আ.লীগ (বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী এম.এ রহিম শহীদ (সিআইপি) ‘মোটর সাইকেল’ প্রতীক পেয়ে সম্মানজনক ভোট পেতে জেলার কমলগঞ্জ,রাজনগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান,ইউপি সদস্যদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। তবে তিনি ভোট চাইতে গিয়ে জনপ্রতিনিধির কাছে অনেকটাই প্রশ্নের সম্মুখীন হন কেন আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন! তাই অনেকটাই বেকায়দায় রয়েছেন।
আদালতের মাধ্যমে প্রার্থীতা ফিরে পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী মৌলভীবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক বকশি ইকবাল আহমদ পান “ঘোড়া” প্রতীক পেয়ে নিজের “ঘোড়া” প্রতীকের লিফলেট হাতে নিয়ে ভাটারের দ্বারে দ্বারে ঘুরপাক খাচ্ছেন। দীর্ঘ দিন গণমাধ্যমের সক্রিয় কর্মী থাকার সুবাধে জেলার অধিকাংশ উপজেলা,পৌরসভা,ইউনিয়নের চেয়ারম্যান,মেয়র,কাউন্সিলর,ইউপি সদস্যের সাথে স্বু-সম্পর্ক থাকায় নির্বাচনি প্রচারণা অনেকটা সহজ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনি আলোচনায় না থাকলেও শেষ পর্যন্ত সম্মানজনক ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায়।
দলের শৃঙ্খলা অমান্য করে আরেক আ.লীগ (বিদ্রোহী প্রার্থী) যুক্তরাজ্য সেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবুল ‘প্রজাপতি’ প্রতীক বরাদ্ধ পেয়ে জেলার সকল জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে যোগাযোগ করে অবস্থান জেনে দেখা করে তিনি বিজয়ী হলে বরাদ্ধ দিবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাাঁসি মুখে কুশল বিনিময় করে ‘প্রজাপতি’ মার্কায় ভোট চাচ্ছেন। তবে প্রবাসী ‘সাহাব উদ্দিন সাবুল’র তেমন পরিচিতি না থাকায় প্রচারণায় পিছিয়ে রয়েছেন বলে জানা যায়।
ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান পরিচয়ে (স্বতন্ত্র প্রার্থী) সুয়েল আহমদ ‘তালগাছ’ প্রতীক পেয়ে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে জেলার জনপ্রতিনিধিদের কাছে নিজের প্রতীক দেখিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। তিনি ভোটারদের সাথে সাক্ষাৎকালে তরুণরাই বদলে দিতে পারে এমন স্লোগানকে সামনে রেখে জনপ্রতিনিধিদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। তবে তরুণ ‘সুয়েল আহমদ’ নিজেকে পরিচিতি করতে এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বলে জানা যায়।
জেলার জনপ্রতিনিধিরা জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো জেলার ভোটারদের মাঝে এক উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। কারো কোনরকম বাধা ছাড়া মনোনয়নপত্র সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রতীক রবাদ্ধ পর্যন্ত অদ্যবদি নির্বিঘ্নে প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের মাঝে নেই কোন উদ্বেগ আর সংশয়। এভাবে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের রাজনীতির মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা অব্যাহত থাকলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আর কোন প্রভাব পড়বেনা বলে মনে করছেন সচেতন জনপ্রতিনিধি ভোটাররা।
অন্য দিকে প্রথমবারের মতো নতুন পদ্ধতিতে হতে যাওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে কে হচ্ছেন এবারের (উপমন্ত্রী পদমর্যাদার) চেয়ারম্যান সেটির অপেক্ষায় পুরো জেলাবাসী। আর অন্য সব নির্বাচনের মতো মাঠে-ঘাটে বা চায়ের দোকানে কথার ঝড় না উঠলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে নির্বাচনি আমেজ তুঙ্গে হয়ে উঠেছে।
একাধিক জনপ্রতিনিধিরা আরো জানান,প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দান,অনুদান,চা-চক্রে বেহিসেবি খরচ করে তার সরকারী- বেসরকারী আর্থিক বরাদ্ধের আশ্বাস ও বিভিন্ন লোভ-লালসা দেখিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্ট করছেন।
উল্লেখ্য,আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন, ৫টি পৌরসভা ও ৭টি উপজেলা মিলে (১৫টি ওয়ার্ড) মোট ৯৫৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়াগ করবেন।
সংবাদমেইল২৪.কম/এসএ/এনএস
Posted ৫:৪৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.