শাকির আহমদ, কুলাউড়া :: | বুধবার, ১৩ জুন ২০১৮ | প্রিন্ট
তিন দিনের টানা বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির কারনে মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদীর পানি গতকাল মঙ্গলবার (১২ জুন) দুপুর থেকে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই দুই নদীর বাধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ৫০টির অধিক গ্রাম। আসন্ন ঈদ উল ফিতরের আনন্দকে কেন্দ্র করে মানুষ যখন কেনাকাটা, আত্বীয়-স্বজনকে দাওয়াত বিনিময় করছিলেন ঠিক এমন সময় বেরসিক এই দুই নদীর আগ্রাসী স্রোতে ভেঙ্গে গেলো সকল আগাম আনন্দ স্বপ্ন। এখন প্রকৃতির অনুকুল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকাটাই মুখ্য হয়ে দাড়িয়েছে তাদের জন্য। বন্যার পানি আর চোখের পানিতে একাকার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের ঈদ আনন্দ।
এরই ফলশ্রুতিতে ওইদিন দিবাগত রাত ১ টা থেকে পানির স্রোত বেড়ে যাওয়ায় মনু ও ধলাই নদীর প্রায় ১২টি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে এর আশেপাশের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে দিনাতিপাত করছেন। হঠাৎ এমন পরিস্থিতে সেখানকার মানুষের সহায় সম্বল রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আর্তচিৎকার দিয়ে চোখের পানি ফেলছেন। প্রকৃতির অনুকুল পরিবেশের সাথে মানুষের মনে চাপা কষ্টে সৃষ্টি হয়েছে ভারী পরিবেশ।
মনু ও ধলাই নদীর বাধ ভাঙ্গনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৫০টির অধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে মানুষের বিভিন্ন ধরনের ফসল, রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষের গৃহপালিত পশু, ঘরের আসবাবপত্র হুমকীর মুখে আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মনু নদীর পানি বিপদ সীমার ১৭৫ সে.মি এবং ধলাই নদীর পানি ৫২ সি.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে প্রতিরক্ষা বাধের অন্তত ২০টি এলাকা।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল, চাতলা ব্রিজ এলাকা, নিশ্চিতন্তপুর, বিজিবি চেকপোস্ট এলাকা, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বেলেরতল, রাজাপুর, কলিরকোনা, টিলাগাও ইউনিয়নের বলিয়ার, মিয়ারপাড়া, সন্ধাবাজার, খন্দকার গ্রাম, তাজপুর, ডরিতাজপুর, শাহজাদপুর, বাগৃহাল, লহরাজপুর গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
কুলাউড়ার হাজীপুরের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু জানান, মাতাবপুর, মাদানগর, চক রণচাপ, হাসিমপুর, বাড়ইগাও ও মন্দিরাসহ ৬/৭ টি এলাকায় নদীর প্রতিরক্ষা বাধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। চকরনচাপ বাড়ইগাও ও মাদানগরে এলাকাবাসী বাধ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়া সাধনপুর, কাউকাপন, বাশউরী ও নোয়াগাও এলাকার নদী তীরবর্তী পরিবারগুলোর ঘরবাড়িতে পানি উঠায় তারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। মাতাবপুর, বাড়ইগাও ও তুকলী এলাকায় বাধ গড়িয়ে সমতলে পানি বের হচ্ছে।
এদিকে ধলাই নদীর বাধ ভেঙ্গে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, ইসলাসপুর ইউনিয়নের হেরেঙ্গা বাজার, বনগাঁও, কেওয়ালীঘাট, শ্রীপুর, মখাবিল এলাকাসহ প্রায় ২০টির বেশী গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বিপদসীমার উপর দিয়ে মনু এবং ধলাই নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরো বাড়বে কারণ উজানে ভারতে বৃষ্টি হচ্ছে।
Posted ১০:৩১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৩ জুন ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.