
এস আলম শামীম,সংবাদমেইল২৪.কম | সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট
মৌলভীবাজারের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। আর ঢাকার বাহিরে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের হঠাৎ বৈঠকের খবর শুনে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন ও সুশীল সমাজের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সার্চ কমিটির সুপারিশে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন গঠনের পর এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ক্ষমতাসীনদল ও বিরোধীদলের শীর্ষ এ দুই নেতার সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ বৈঠকটি পুরো জেলার রাজনৈতিক অঙ্গণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
জানা যায়, ১২ ফ্রেব্রুয়ারী রোববার দুপুরের দিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্রুম বার্নিকাটের আমন্ত্রণে শ্রীমঙ্গলের গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্টে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রয়াত সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পুত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানের সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন। এরপর দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত দুই ঘন্টাব্যাপী একটি বিশেষ বৈঠক করেন বার্নিকাট।
ওইদিন বিকেল সাড়ে মৌলভীবাজার জেলা আ.লীগের সভাপতি সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপির সাথেও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পৃথক বৈঠক করেন। চা চক্র শেষে বৈঠকটি সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরে শেষ হয়। দুই নেতার সঙ্গে পৃথক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএইডের বাংলাদেশের মিশন প্রধান জেনিনা ইয়া রুজেল কি,মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ডেনিয়াল রাকোভ।
তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কি কি বিষয়ে কথা হয়েছে জানতে চাইলে সাবেক এমপি এম নাসের রহমান বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমাকে দুপুর দেড়টার দিকে মধ্যাহ্ন ভোজের আমন্ত্রণ জানান। মধ্যাহ্ন ভোজের পর ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিষয় জানতে চান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বিশেষ করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে মতামত এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের চিন্তাভাবনাটা কি তাও জানতে চেয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমার কাছে প্রথমেই জানতে চান ‘আমাদের দেশের শিক্ষিত যুবক ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ তাদের দৃষ্টিতে রাজনীতিতে কেন আসতেছে না। দ্বিতীয়ত তিনি জানতে চান তাদের মতে শিক্ষিত ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোকেরা কেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আসতেছেন না। তৃতীয়ত তিনি জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশের দুইদলের রাজনীতিতে কোয়ালিটি সম্পন্ন নেতৃত্ব তৈরী, গুণগত পরিবর্তন ও উৎকর্ষ সাধনে কি কি করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এরপর তিনি জানতে চান তাদের দৃষ্টিতে বড় দু’দলের রাজনীতিতে যোগ্য নেতৃত্ব দলের মূলধারায় আসছেন কেন।এসব বিষয়ে আমি আমার মতামত তুলে ধরেছি।
অপরদিকে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি বলেন,‘বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদুতের সাথে পার্লামেন্ট ও ইলেকশন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমেরিকার জনগণের সাথে আমাদের দুদেশের জনগণের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। বাংলাদেশের জনগণের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অনেক পরিশ্রমী ও তাঁর ভাল কাজ করার উদ্যোগের অভাব যে নেই এসব বিষয়ে তুলে ধরেছি।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আমি বলেছি,নির্বাচন কমিশন যেটি গঠন হয়েছে সেটা রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১১৮ ধারা তিনি প্রয়োগ করেই গঠন করেছেন। ভারতের সাথে তুলনা করলে আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী। আমি এও বলেছি বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবশ্যই ভাল ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিবেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরাও জনগণের পক্ষ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করব। তিনি বলেন নির্বাচনে অনেক দেশেই কারচুপি হয় যার কারণ স্থানীয় সমর্থকদের অতি উৎসাহের একটি বিষয় হতে পারে। যা আমরা সমর্থন করি না। আমাদের দেশে ভোটিং সিস্টেম এক সময় রিজেক্টটেট ছিল। এখন আস্তে আস্তে আরো বিজ্ঞানসম্মত হচ্ছে। যার মাধ্যমে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিশ্চিত হবে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো জানতে চেয়েছেন, আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় মৌলবাদ বিষয়ে আমার মতামত কি এ বিষয়ে আমি বলেছি, আমাদের দেশের সংবিধানে যে নির্দেশনা আছে তাতে সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং তা সাংবিধানিকভাবে পালনের জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। সংবিধানকে শ্রদ্ধা করাই আমাদের দায়িত্ব। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অনেক শক্তিশালী ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সব সময় তিনি সজাগ।
উল্লেখ্য,গত ১২ ফ্রেব্রুয়ারী রোববার সকালে মার্শা ব্লুম বার্নিকাট দুইদিনের এক সফরে শ্রীমঙ্গলে গিয়ে লাউয়াছড়াসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখেন। পরে ইউএসএইড’র লিডারশিপ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। রাত্রিযাপন করেন চা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণধীন শ্রীমঙ্গলের হোটেল টি রিসোর্ট। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ফিনলে টি কোম্পানির বালিশিরা ভ্যালী ক্লাবে চা শ্রমিকদের সাথে বৈঠকে শেষে মৌলভীবাজার ত্যাগ করেন।
সংবাদমেইল২৪.কম/এসএ/এনএস
Posted ৯:০৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.