
এ.জে লাভলু,সংবাদমেইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় প্রতিদিন বেপরোয়া গতি আর বিকট শব্দে চলছে দেড়শতাধিক অবৈধ ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টর বেশিরভাগ পাহাড়-টিলার মাটি ছাড়াও ইট-বালি পরিবহণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও অধিকাংশ ট্রাক্টরের নেই বৈধ কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। ফলে শব্দ দূষণের পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনা। অন্যদিকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ ও সদরে যাতায়াতের প্রধান সড়কগুলো নষ্ট হয়ে জনসাধারণের চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ছে। এতে এসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষদের চরম দুুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে।গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ট্রাক্টরের ধাক্কায় ৭ বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এরপরও এসব ট্রাক্টর চালকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন উপজেলার পাহাড়ি এলাকা ডিমাই, কেছরিগুল, কাঠালতলী, গঙ্গারজল, কাশেমনগর, হাকাইতি, পূর্ব-হাতলিয়া, বোবারথল, মোহাম্মদনগর, ছোটলেখা, ঘোলসা, চন্ডিনগর, মুড়াউল, অফিসবাজার, বড়াআইল, নান্দুয়া, পূর্ব-বাণীকোনা, শ্রীধরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রকাশ্যে পাহাড়-টিলা ও জমির মাটি কাটা হচ্ছে। আর মাটি পরিবহণে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় দেড়শতাধিক ট্রাক্টর। মাটি কাটার পর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে এসব ট্রাক্টর। মাটি পরিবহণের সময় ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও সদরের প্রধান সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলার কাঁঠালতলী, চান্দ্রগাম, পানিদার, দাসেরবাজার, বর্ণি, দক্ষিণভাগ, বড়লেখা এলাকার বিভিন্ন সড়কের ওপর ট্রাক্টরের মাটি পড়ে গিয়ে সড়ক নষ্ট হচ্ছে। এতে যানবাহন চালক ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এসব যেনো দেখার কেউ নেই।
এদিকে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর বিকেলে অবৈধ ট্রাক্টরের ধাক্কায় জুয়েল আহমদ নামে ৭ বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে পৌরশহরের আদিত্যের মহাল বন্ধ থাকা রেললাইন আউট সিগন্যালের পাশে। ঘটনার পর থেকে ঘাতক ট্রাক্টর চালক পালিয়ে গেলেও পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ট্রাক্টরটি আটক করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দরগাবাজার এলাকার ফারুক আহমদের মালিকানাধীন ট্রাক্টর এটি। যদিও এ ট্রাক্টরটির বৈধ কোন কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। কারণ, অধিকাংশ ট্রাক্টরের মালিক ক্ষমতাশীন দলের হওয়ায় তারা ট্রাক্টরের বৈধ কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন বলে মনে করেন না। এর ফলে প্রভাবশালী মালিকদের ছত্রছায়ায় অবৈধ ট্রাক্টর নিয়ে সড়কে নির্বিঘেœ চলাচল করলেও এসব চালকদের বিরুদ্ধে আইনী কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
সম্প্রতি উপজেলার কাঁঠালতলী স্কুল রোড সংলগ্ন বাজার এলাকায় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি এনে (বাসা তৈরির জন্য) জমি ভরাট করতে দেখা গেছে। এসময় ট্রাক্টরের কাগজ আছে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে ট্রাক্টর চালক এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন কাঁঠালতলী-তেরাকুড়ি সড়ক দিয়ে প্রায় ৬ হাজার মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর মাটি আনার সময় ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে গিয়ে সড়কটি নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এতে তাদের চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুল-মাদ্রসাগামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পোহাচ্ছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এখলাছ উদ্দিন ও ব্যবসায়ী ফাহাদ আহমদ বলেন, ‘ট্রাক্টরটি নিয়মের চেয়ে অতিরিক্ত মাটি আনলোড করে দ্রুত গতিতে সড়কে চলাচলের সময় মাটি পড়ে গিয়ে সড়ক নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বিকট শব্দে চলাচলের সময় শব্দ দূষণও হচ্ছে।’
স্থানীয় অটোরিকশা চালক সমিতির সদস্য শরীফ আহমদ রাজু ও অটোরিকশা চালক জাকির হোসেন বলেন, ‘মাটি পড়ে সড়ক নষ্ট হওয়ায় গাড়ি চালানোর সময় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার সময় বিপাকে পড়তে হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটছে। এসবের প্রতিবাদ করলে চালকরা দুর্ব্যবহার করেন।’
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমীর বিশ্বাস বলেন, ‘সম্প্রতি টিলার মাটি পরিবহণের দায়ে দু’জন ট্রাক্টর চালককে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া যেসব জায়গায় মাটি কাটা হয় সেসব জায়গায় খবর পেয়ে পৌঁছার আগেই ট্রাক্টর চালকরা পালিয়ে যায়। তবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলার সভায় উত্থাপন করা হয়েছে।’
সংবাদেমইল২৪.কম/এজেএল/এনএস
Posted ৫:২৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.