
জান-ই-আলম | শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
জিম্বাবুয়ে সফরের পর মিরপুর স্টেডিয়ামের নিম্নমানের উইকেটে খেলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি সেরেছিল বাংলাদেশ দল। বড় আশা, স্বপ্ন থাকলেও টি-২০ বিশ্বকাপে এসে রীতিমতো অকূল পাথারে পড়ে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। যেখানে আইসিসি সহযোগী দেশগুলোও বাংলাদেশকে বলে-কয়ে হারিয়েছে, কঠিন চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
ক্রিকেটের এই ছোট সংস্করণে বাংলাদেশের অক্ষমতা বিশ্ব দরবারে প্রমাণিত হয়ে গেছে। ৮ ম্যাচের ৬টি তেই হার। দুটি জয় ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির সাথে। অনেক সামর্থ্য, প্রতিভার জয়গান গাইলেও বিশ্বকাপ শেষে মিলেছে অশ্বডিম্ব। অতীতের মতোই মূল পর্বে কোনো ম্যাচ না জেতার লজ্জার রেকর্ড ধরে রেখেই দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। ক্রিকেটার, কোচ, বিসিবিসহ সবার মুন্ডুপাত চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ক্রিকেট বিশ্বও সরব বাংলাদেশের হতশ্রী পারফরম্যান্স। সারা বিশ্বের সাবেক ক্রিকেটাররা মেতেছেন বাংলাদেশের সমালোচনায়।
কিন্তু কেন এই ভরাডুবি? কোথায় হারিয়ে গেল টানা সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস?
উত্তর নাকি খোদ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছেই নেই। তিনিও খুঁজছেন, কোথায় কি ভুল হয়েছে, কিসের ঘাটতি ছিল?
মাহমুদউল্লাহ উত্তর পেয়েছেন কিনা, আদৌ পাবেন কিনা বলা কঠিন। তবে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে, যা অনেকের চোখ এড়ায়নি।
বাংলাদেশ ও বাকি দলগুলোর সঙ্গে পার্থক্য
হোম কন্ডিশনে টি-২০ তেও লড়তে পারে বাংলাদেশ। দেশের বাইরে গেলেই গলা শুঁকিয়ে যায় দলটার। এই ফরম্যাটের দলগুলোর একটা কাঠামো রয়েছে। সেটা সব দলেই। ইনিংসের শুরুতে পাওয়ার প্লে কাজে লাগানো, ইনিংসের শেষ দিকে স্লগিং করার আলাদা ব্যাটসম্যান থাকে। যা বাংলাদেশ দলে ছিল না। বোলিংয়ে লেগ স্পিনাররা দারুণ ভূমিকা রাখছেন বিশ্বকাপে। অথচ বাংলাদেশ কিনা রুবেলকে রেখে দিয়ে লেগ স্পিনার বিপ্লবকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। শক্তিমত্তা, কাঠামো বিচারে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে ছিল। টি-২০ তে ভালো দল হতে চাইলে এসব বিভাগে উন্নতি আবশ্যক।
কোচদের দায়
দল ব্যর্থ হলে কোচদের দায় থেকেই যায়। ক্রিকেটাররা পারফর্ম না করলে যেমন সমালোচনার মুখে পড়বেন, তেমনি তাদের থেকে সেরাটা বের করতে না পারায় কোচরাও ব্যর্থ। এই ভরাডুবির পেছনে হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোসহ কেউই দায় অস্বীকার করতে পারবেন না। তবে ক্রিকেটারদের স্কিলও এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটা আলোচনার বিষয়। টি-২০ তে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের স্কিল, সামর্থ্যরে দীনতা বিশ্বকাপে প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছিল। নামসর্বস্ব ‘স্কিলড’ হিটারের তকমা বয়ে বেড়ালেও বিশ্বকাপের মঞ্চে তা অন্তসারশূন্য প্রমাণিত হয়েছে।
পজিশন ধরে প্লেয়ার তৈরি
বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে ওপেনিং, ছয়-সাত নম্বরের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ব্যাটসম্যান তৈরির চেষ্টাই দেখা যায় না ঘরোয়া ক্রিকেটে। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সেই চেষ্টা নেই। তাই তো আফিফকে হার্ড হিটারের দায়িত্ব দেয়ার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ দল। যেখানে পুরোপুরি ফ্লপ ছিলেন এ তরুণ। আইপিএলে সাত-আট নম্বরে খেলা সাকিব খেলেছেন তিনে। মূল পর্বে তার ব্যাটও তিন নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে দলকে প্রয়োজনীয় সার্ভিসটাই দিতে পারেনি। যা দলকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে।
বিসিবিও ব্যর্থ
দলের সাফল্যে যেমন সবার ভাগ থাকে, ব্যর্থতায়ও সবাই অংশীদার। এমন ভরাডুবিতে দেশের ক্রিকেটের অভিবাবক সংস্থা বিসিবির দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো উইকেট প্রস্তুত না করার দায় পুরোটাই বিসিবির। প্রকাশ্যে দলের সমালোচনা, আভ্যন্তরীণ ও ক্রিকেটীয় আলোচনা বাইরে প্রকাশ করে ক্রিকেটারদের চাপে ফেলেছে বিসিবি। তাতে দলটাও ভেঙে পড়েছে। যা অভিবাবকসুলভ হয়নি।
লিটনের দুই ক্যাচ মিস
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সুপার-১২ পর্বে আসে বাংলাদেশ। গ্রুপ-১ বাংলাদেশের কাছাকাছি শক্তির দল ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু তাদের কাছে ১৭১ রান করেও হেরে গেছে বাংলাদেশ। কারণ ক্যাচ মিস। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুটি ক্যাচ ফেলেছেন লিটন দাস। প্রত্যাশিত জয়টা হারিয়ে গেছে যার ফলে। পরেই শুরু সমালোচনার ঝড়। দলটাও হারিয়ে ফেলে জেগে উঠার সুর। প্রাণান্ত চেষ্টাতেও আর মানসিকভাবে চাঙা হতে পারেন গোটা দল। তবে শ্রীলঙ্কা হারালে হয়তো বাংলাদেশের বিশ্বকাপটা এত বিবর্ণ হতো না।
ব্যাটিংই ডুবিয়েছে বিশ্বকাপ স্বপ্ন
শুধু ক্যাচ মিস নয় ব্যাটিংয়েও লিটন দাস পুরোপুর ব্যর্থ হয়েছেন ওপেনিংয়ে। তাকে বয়ে বেড়ানোর চড়া মূল্য দিয়েছে দল। ৮ ইনিংসে ১৩৩ রান করেছেন তিনি। আফিফ ৮ ইনিংসে ৫৪ রান, শেখ মেহেদী ৬ ইনিংসে ৫৩ রান, সোহান ৪ ইনিংসে ২১ রান, সৌম্য ৪ ইনিংসে ২৭ রান, মুশফিক ৮ ইনিংসে ১৪৪ রান, সাকিব ৬ ইনিংসে ১৩১ রান করেছেন। মাহমুদউল্লাহ ৮ ইনিংসে ১৬৯ রান এবং নাঈম শেখ সর্বোচ্চ ৭ ইনিংসে ১৭৪ রান করেছেন।
দেশের খেলা সবার আগে
বিশ্বকাপের প্রস্তুতির ব্যানারে আইপিএলে খেলেছেন সাকিব-মুস্তাফিজ। তারাই ছিলেন বড় ভরসা। মরুর বুকে টানা খেলার পর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি তারা। সাকিব কিছুটা পারফর্ম করলেও মুস্তাফিজ ছিলেন আশাতীত ফ্লপ। টানা খেলার ক্লান্তিতে সাকিব তো শেষ পর্যন্ত হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে ছিটকেই গেলেন। মূল পেসার হলেও ফর্মহীন, ক্লান্ত মুস্তাফিজকে একাদশ থেকেও বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের আগে এমন লিগ খেলতে অনুমতি দেয়ার বিষয়টি ভবিষ্যতে ভাবতে হবে বিসিবিকে। সুপার-১২ পর্বের শুরুতে আইপিএল খেলার ক্লান্তি ভারতীয় দলেও দেখা গেছে।
-সূত্র : ইত্তেফাক
Posted ৯:১৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.