
স্টাফ রিপোর্টার,সংবাদমেইল২৪.কম | বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট
ঢাকা: স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানদের কাছে বিজয় এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। তাদের কাছে এখনো ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস তাৎপর্যপূর্ণ হয়নি।
তাদের মতে, বিজয় তখনই সম্পূর্ণ হবে যখন এ হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের বিচারের রায় কার্যক্রর হবে। যখন শহীদদের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ হবে, মুক্তিযোদ্ধোর ওপর হামলা হবে না, তখনই শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। না হয় বিজয় অধরাই রয়ে যাবে তাদের কাছে।
চলতি বছরের ১১ মে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত আরও দুই জন চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান বিদেশে পলাতক থাকায় তাদের বিচার এখনও কার্যকর হয়নি।
চৌধুরী মইনুদ্দীন যুক্তরাজ্য এবং আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছে। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার আওয়ামী লীগের কাছে তাদের প্রথম দাবি, বিদেশে পলাতক দুইজনকে দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করার। তবে কেন সরকার এতদিনেও তাদের ফিরিয়ে দিতে আশ্রয়দানকারী দেশগুলোকে চাপ দিতে পারছে না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শহীদের সন্তানরা।
শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, “আমার পিতার হত্যাকাণ্ড এবং তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল চৌধুরী মইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান। এ দুই খুনির রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কাছে বিজয়টা অসম্পূর্ণই রয়ে যাবে। সেই দিনটি আমরা এখনো ভুলতে পারিনি।”
শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর ছেলে তানভীর হায়দার চৌধুরী বলেন, “বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত অনেকের বিচার সম্পন্ন ও রায় কার্যকরের ফলে স্বস্তি বোধ করছি। আবার অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদেশে পালিয়ে আছে তাদের রায় কার্যকর না হওয়া আমাদের মাঝে অস্বস্তিও বিরাজ করছে। তবে খুনিদের ফিরিয়ে দিতে সরকার কেন বিদেশি বন্ধুদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে না তা আমাদের বোধে আসে না।”
তানভীর হায়দার বলেন, “যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হওয়ার কথা ছিল তার থেকে এই বাংলাদেশ এখনও অনেক দূরে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল ক্ষমতায়। কিন্তু এখনও এদেশে লেখালেখির জন্য মানুষকে জীবন দিতে হয়। বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে আসা হয়নি। এখনও বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়, মুক্তিযোদ্ধাকে পেটানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও এসব হচ্ছে, যা আমাদের পীড়া দেয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার একমাত্র সন্তান মেঘনাগুহ ঠাকুরতা বলেন, “বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অনেকের শাস্তি হয়েছে। তবে অনেকে এখনো পালাতক রয়েছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের রায় কার্যকর করা যায়নি। এদের রায় কার্যক্রর না হওয়া পর্যন্ত বিজয়ের অর্জন পূর্ণাঙ্গ হবে না।”
প্রসঙ্গত. ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ আরো অনেকে।
সংবাদমেইল২৪.কম/এআর/ এফএ
Posted ২:২৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.