
সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট
যেন সুরের ঢেউ লেগেছে কালনীর পাড়ে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন বাউলরা। কেউ মঞ্চে গাইছেন। আবার কেউ চায়ের দোকানেও বসে গাইছেন।
কালনী নদী দিয়ে যাওয়া নৌকার মাঝিরাও সুর মেলাচ্ছেন। সমাজ পরিবর্তনের স্বাপ্নিক লোকশিল্পী একুশে পদক প্রাপ্ত বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক উৎসবের প্রথম দিন সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার পরের দৃশ্য ছিল এটি।
দিরাইয়ের উজান ধলের কালনীর পাড়ে বাউল বাউল সম্রাটের দুইদিন ব্যাপি জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭ টায়। শাহ্ আব্দুল করিম জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় পর্ষদের আয়োজনে ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দিরাইয়ের উজানধল মাঠে দুই দিনের এই উৎসব হচ্ছে।
(১৮ নভেম্বর) শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় উৎসবের উদ্বোধন করানো হয় বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম’র পৌত্র ঝলক শাহ্কে দিয়ে।
আলোচনা সভায় শাহ্ আব্দুল করিম’র ছেলে শাহ্ নূর জালালের সভাপতিত্বে ও আলী আহমদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শাহ্ আব্দুল করিম জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন পরিষদের জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম কদ্দুছ।
অতিথি’র বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। বক্তব্য দেন- যুগ্মসচিব ওমর ফারুক, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সংগঠক শামসুল আলম সেলিম, কামরুল ইসলাম লিটন, শামসুল বাসিত সেরু, শেখ মফিজুর রহমান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নাজমুল হাসান, দোলন চৌধুরী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাউল বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিম। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মানুষকে আনন্দ দেবার পাশপাশি, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা অসংগতির কথা গানে গানে জানিয়ে গেছেন এই বাউলশিল্পী। নিলোর্ভ-নিরহংকার কিংবদন্তিতুল্য এই বাউল শিল্পী ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। অভাব-অনটন, দুঃখ-দারিদ্রে বেড়ে ওঠা বাউল করিম’র বয়স যখন ১২, রাখালের চাকুরী ছেড়ে গ্রামের পার্শ্ববর্তী ধলবাজারেরর এক মুদির দোকানে কাজ নিলেন। দিনে চাকুরি আর রাতে হাওর-বাঁওরে ঘুরে গান গাওয়ার মধ্য দিয়েই বেড়ে ওঠা তাঁর। গ্রামের নৈশ বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পড়াশুনা হয়নি করিমের। গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাউলা, ভাটিয়ালি, পালাগান গাইতে গাইতে পুরো ভাটি অঞ্চলে নাম ছড়ায় তাঁর। এরপর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষার লড়াই, কাগমারী সম্মেলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গণসংগীত গেয়ে গেয়ে লাখ লাখ তরুণকে উজ্জীবিত করেছেন এই মরমী বাউল। গান গাওয়ার জন্য ধর্মান্ধদের হাতে নির্যাতিত ও ঘর ছাড়া হলেও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান প্রচার করেছেন গানে গানে।
সংবাদমেইল২৪.কম/এন আই/এনএস
Posted ৯:০৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.