
বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট
ঢাকা: নিয়মিত ও ধারাবাহিক দায়িত্বে ফিরে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের মেয়াদের ৭ বছরে প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বের বাইরে যেসব কাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক করেছে, ২০১৬ সালে সেসব কাজ আর হাতে নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। সমালোচকরা বলছেন, ঝিমিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার অনেকে বলছেন, ‘ইউটার্ন’ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রমে এক ধরনের ঝিমিয়ে পড়া ভাব দেখা গেছে। কর্মকর্তারা এখন অনেকটাই আয়েশি ভঙ্গিতে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন কাজের অতিরিক্ত যে চাপ ছিলো সেটি আর নেই। নতুন করে উদ্ভাবনী কিছু করার চেষ্টাও নেই কর্মকর্তাদের মধ্যে। একেবারে নিয়মিত কাজই তাদের প্রতিদিন করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আতিউর রহমান সরকারের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনেকটা কাজ করেছেন। তাই তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত দায়িত্বের বাইরে অনেক উদ্ভাবনী কাজ করেছেন। কিন্তু বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির সেখানে পুরোটাই ভিন্ন। একই সঙ্গে তিনি আতিউর রহমানের মতো এতোটা প্রচারমুখিও নন।
সাবেক এই আমলা ২০১৬ সালে পুরো ভিন্ন চরিত্রে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশ ব্যাংককে। সাবেক এই আমলা বাংলাদেশ ব্যাংকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের চরিত্রে নিয়ে গেছেন। এতে অবশ্য কিছুটা অস্বস্তিও বেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মেধাবী ও নিবেদিত কর্মীদের মধ্যে। আবার অনেকে ফলজে কবিরের পরিচালনা পদ্ধতিতে সন্তুষ্ট।
জানা গেছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর হঠাৎ বড় পরিবর্তনে হোঁচট খেয়েছে বাংলদেশ।
গত ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় গভর্নরকে পদত্যাগে বাধ্য করা, দুই ডেপুটি গভর্নরকে বরখাস্ত করা এবং দীর্ঘদিন পদ দুটি শূন্য থাকে। এরপর একজন ডেপুটি গভর্নর পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ড. আতিউর রহমান গভর্নর থাকা অবস্থায় কর্মকর্তাদের কাজের ওপর রাখতেন। নিয়মিত বিভিন্ন বিভাগে নানা কাজের ধারণা দিতেন সরাসরি। বিভাগ আকস্মিক পরিদর্শনেও যেতেন। কিন্তু ফজলে কবির সেটি করেন না।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য ২০১৬ সালটি খারাপই কেটেছে।
সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা ‘অসাবধনতার’ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব কর্মকর্তাকে আটক করা হবে এমন তথ্য প্রচলিত আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরে।
সাবেক গভর্নর সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতিরিক্ত কাজে যাওয়া ঠিক হয়নি। তবে আতিউর রহমান অনেক ভালো কাজ করেছেন। যাতে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপরে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে এটা ঠিক। নতুন গভর্নরের জন্য চ্যালেঞ্জেরও হয়ে গেছে ওইসব কাজ। ফলে তিনি যদি ধারাবাহিকতায় না থাকেন তাতে কিছুটা সমালোচনা তৈরি হবে।”
বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির ড. আতিউরের ঠিক বিপরীত চরিত্রের। তিনি সম্পূর্ণ প্রচারবিমুখ। একান্ত বাধ্য না হলে তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যান না। এমনকি একজন গভর্নরের খুব বেশি সরব হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন না। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটা ‘ইউটার্ন’ পরিলক্ষিত হয় ২০১৬ সালে।
অবশ্য সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ইউটার্নকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বের বাইরে চলে যাওয়াতে অনেক কাজ ব্যাহত হয়েছে, যা ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।”
অন্যদিকে কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় বছরজুড়ে ব্যাংকগুলোর কাছে অলস টাকার পাহাড় জমে ছিল। ব্যাংকগুলোতে ঋণের চাহিদা অনেক কমে গেছে, এতে কাঙ্ক্ষিত হারে ঋণ বিতরণ বাড়েনি। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য জমা রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থ বিনিয়োগে আনা ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ২০১৬ সালে সামনে এসেছে।
সংবাদমেইল২৪.কম/এসএ/এনএস
Posted ৩:৫২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.