
নাজমুল ইসলাম,সংবাদমেইল২৪.কম | বুধবার, ০৫ এপ্রিল ২০১৭ | প্রিন্ট
এবছর ফলন ভাল হাওয়ায় কৃষকেরা স্বপ্ন দেখছিলেন বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। কিন্তু ধান পাকার পূর্বেই হঠাৎ কওে টানা ৭ দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে চোখের সামইে হাকালুকি হাওরের প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকদের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়েছে। চৈত্র মাসের অকাল বৃষ্টিতে শত শত কৃষকের স্বপ্ন বন্যার পানিতে মিশে গেছে। লাগাতার ঝড়, শীলাবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ মুক্ত জলাশয় হাকালুকি হাওরের বোরো ধানের। কয়েকদিন আগে যেখানে বোরো ধানের ফসলে বিস্তৃত সবুজে সমারেহ ছিল সেখানে এখন চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। ঝড়বৃষ্টি ও শীলাতে হাওর তীরের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতিতে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বোরো ধান সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় হাওর তীরে এবার তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা অঞ্চল এবং সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা অঞ্চলের ছোট বড় ২৩৭টি বিলের পারে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরে এবার বোরো ধান আবাদ করা হয়। অনুকুল আবহাওয়ার কারণে ধানে তেমন রোগ বালাই দেখা না দেয়ায় ফলনও ভাল হয়। এ বছর ফলন ভাল হাওয়ায় কৃষকেরা স্বপ্ন দেখছিলেন বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। কিন্তু ধান পাকার পূর্বেই হঠাৎ করে আসা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে চোখের সামইে কৃষকের সেই স্বপ্ন তলিয়ে যায়। ধানের শীষ বের হওয়ার পর গত বুধবার থেকে ভারি বর্ষণ ও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে হাওরে বন্যার পানি টুইটুম্বুর। আর বৃষ্টি না দিলেও যে হারে হাওরের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বোরো ধান কাটার আর কোন সম্ভাবনা নেই বলে কৃষকরা জানান।
সরেজমিনে হাকালুকি হাওরের ধলিয়া, চকিয়া, চাতলা, জল্লা, বুইয়াজুরি, কৈয়ারকোনা, বালিজুরি ও ঘেড়ুয়া বিল ঘুরে দেখা যায়, বিলের তীর ঘেষে সামান্য কিছু বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর পারের পতুনগর,নিজবাহাদুরপুর,কানকাইড়ছক,দশঘড় এলাকার কৃষক আখলু মিয়া,হাছন আলী,ফরিদ আলী, সুলেমান মিয়া, আকল মিয়া, হারিছ আলী, ফজলু মিয়া, রাসেল আহমদ জানান, অনেক কৃষকই বোরো ধানের চাষাবাদ করেছেন।টানা ৭ দিনের লাগাতার বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে চোখের সামনে তাদের কষ্টের ফসলের হচ্ছে সলিল সমাধি। কারনে তার ইউনিয়নের হাকালুকির হাওর এলাকার সব ধান পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এবার বোরো ধান না পেলে হাওর তীরে ধুর্ভিক্ষলাগতে পারে। পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ না থামলে ফসল বাঁচানোর কোন উপায় তারা দেখছেন না। আর মাত্র ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফসল কাটা শুরু হতো। এবার আর কাচি নিয়ে ধান কাটতে হাওরে নামতে হবে না বলে হতাশা ব্যক্ত করেন তাঁরা।
জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওর পারের শাহাপুর,রাজাপুর,বেলাগাও এলাকার কৃষক রমুজ মিয়া, আবিদ মিয়া,মন্তর আলী,পাকি মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক বলেন,এবার গতবারের চেয়ে বৃহৎ হাকালুকি হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে বোরো ধান তলিয়ে গেছে। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন ওই কৃষকরা কিভাবে পোষাবেন এ চিন্তায় এখন মাথায় তাদের হাত।
হাওর পারের কানেহাত এলাকার কৃষক রহমত আলী(৬০)’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পানিয়ে সব ধান নিছেগি,আওড়র বরোয়া ধান আমরার জীবিকা, অতদিনতনে ধার-দেনা করে নিজের বউত টেকা খরছিয়া বরোয়া ধানর লাগি কষ্ট করলাম আর কয়দিন তাকি মেঘ (বৃষ্টি) দিয়া আওড়র সব পাখনা আধাপাখনা ধান ভাসাইলাইছে” বলে কান্নাকন্ঠে বলেন “হায়রে কষ্ট গেল কই”।
বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকতা মোঃ কুতুব উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন,বর্ণি,তালিমপুর,সুজানগর ইউনিয়ন সম্পূর্ন ও দক্ষিনভাগ দক্ষিণ,উত্তর সাবাজপুর,দক্ষিন সাবাজপুর, দাসের বাজার,নিজবাহাদুর পুর,সদর,দক্ষিণভাগ উত্তর ইউািনয়ন ৫০% সহ ৪ হাজার ৩শত ৪০ হেক্টরের মধ্যে ৩৩ শত হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার বোরো চাষিদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জগলুল হায়দার ক্ষয়ক্ষতির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান জানান, হাকালুকি হাওরের ভূকশিমইল,ভাটেরা ইউনিয়নে সম্পূর্ন ও কাদিপুর,ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নের আংশিকসহ ৪ হাজার ৫ শত হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে ধান ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এটি প্রাকৃতিক সমস্যা এতে কিছু করার নেই। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, হাকালুকি হাওরে যে হারে পানি বাড়ছে, তাতে আর বৃষ্টিপাত না হলেও বোরো ধান রক্ষা করা কষ্টকর হবে। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে রোদের দেখা মিললে কৃষকরা কিছুটা হলেও ধান তুলতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে অধিকাংশ ধান কাচা থাকার ফলে নষ্ট হয়ে যাবে।
সংবাদমেইল২৪.কম/এন আই
Posted ৬:১৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৫ এপ্রিল ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.