
আহমদউর রহমান ইমরান,সংবাদমেইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | প্রিন্ট
রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে লাল র্দূগা প্রতিমা
উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ লাল বর্ণের র্দূগা দেবীর পূজা হয় রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে। দেশ-বিদেশের লাখোভক্ত আসেন দেবী দর্শণে; কৃপার আশায়। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা পরিবার পরিজন নিয়ে দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন পাঁচগাঁওয়ের এ মন্ডপে। রাজনগর উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের পাশে অবস্থিত এ মন্ডপে নিরাপত্ত্বা ও শৃঙ্খলার জন্য সার্বক্ষনিক দায়িত্বে থাকেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্যের একটি বিশাল টিম। স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরাও। পুলিশের পাশাপাশি টহল দিচ্ছে র্যাব সদস্যরাও।
এবছর রাজনগর উপজেলায় ব্যাক্তিগত ও সার্বজনীন মিলে ১১৮টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দূর্গা পূঁজা ৩০ই সেপ্টেম্বর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে।
এদিকে রাজনগরের পাঁচগাঁও মন্ডপে লাল দূর্গা দেবীর পূঁজো দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন ভিড় জমান। আসেন বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, চলচ্চিত্র শিল্পিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কুশল বিনিময় করেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। মন্ডপের পাশে বসে মেলা। হরেক রকমের প্রায় ৪০০শরও বেশি দোকান বসে। ফার্নিচার, খেলনা, লাইব্রেরীসহ মিষ্টির দোকান হয় বেশি। বেচা-কেনা হয় কোটি টাকারও বেশিÑ এমনটাই দাবি করলেন পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মিহির কান্তি দাশ মঞ্জু। পূঁজা উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় উপজেলার পুজামন্ডপ ও আশপাশের এলাকা। রাজনগর থানা সূত্রে জান গেছে, প্রতিটি পূজামন্ডপে পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে । শুধু পাঁচগাঁও মন্দিরে ৩৯ জন পুলিশ ও ১০০ জন আনসার সদস্যের একটি টিম নিরাপত্ত্বার দায়িত্ব পালন করছে। আজ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অষ্টমীর দিনে রাজনগরের পূজা মন্ডপগুলো পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
পাঁচগাওয়ের লাল বর্নের দূর্গা মূর্তির নিয়ে কথিত আছে, প্রায় তিনশ বছর পূর্বে সর্বানন্দ দাশ তৎকালীন সরকারের মুন্সী পদবি প্রাপ্ত কর্মস্থল আসামের শ্বিবসাগর জেলার বাড়িতে দুর্গাপুজার সময় তার স্ত্রী ও কর্মচারীগনকে নিয়ে কুমারী পুজা করার মনস্থ করেন। মন্দিরের সেবায়েতের সহায়তায় সর্বানন্দ দাস পঞ্চম বর্ষীয়া কুমারী নির্বাচন করেন। মহাষ্টমীর দিনে কুমারীকে ভগবতীর জ্ঞানে সুদীর্ঘ ছয় ঘন্টা পুজাঁ করার শেষে প্রণাম করার সময় সর্বানন্দ দাস এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখেন, কুমারীর গায়ের বর্ণ পরিবর্তন হয়ে লালবর্ণ ধারণ করেছেন।
এই দৃশ্য অবলোকন করার পর মাকে জিজ্ঞাসা করেন, মা’ আমার পুজা সুপ্রসন্ন হয়েছে কি? উত্তরে ভগবতী বলেন, ‘হ্যাঁ তোর পূজা সিদ্ধ হয়েছে। এই বর্ণে তোর গ্রামের বাড়ি পাচঁগাঁও-এর পূজা মন্ডপে আর্ভিভূত হয়েছিলাম। এখন হতে ভগবতীকে লালবর্ণে পূঁজা করবে।’ পরবর্তী বছর সর্বানন্দ দাস নিজ বাড়ি পাঁচগাঁওয়ে শারদীয় পূজার আয়োজন করেন। মাতৃমূর্তিকে কুমারী গায়ের সেই লাল বর্ণের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে লাল বর্ণে রঞ্জিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজও সর্বানন্দ দাসের পরবর্তী বংশধর সঞ্জয় দাসের সার্বিক তত্বাবধানে নিজেদের মন্ডপে লাল বর্ণের মূর্তির দূর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কেতকী রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, পূজা মন্ডপগুলোতে নিরাপত্ত্বা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব, পুলিশসহ নিরাপত্ত্বার কাজে বিভিন্ন সেক্টরের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রাখী আহমেদ বলেন, দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাঁচগাঁও ম-পকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তদারকির জন্য উপজেলা পরিষদে কন্ট্রোল রুম খুলা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবেই পূজার অনুষ্ঠানাদি চলছে।
সংবাদমেইল২৪.কম/এআরই/এনআই
Posted ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.