
এহসানুল মাহবুব জাকিরঃ | বৃহস্পতিবার, ১৭ মে ২০১৮ | প্রিন্ট
ইলমে কিরাতে আমাদের মুর্শিদ কিবলা যেই অবদান রেখে গেছেন তা ইতিহাসে বিরল , বিশেষ করে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে খুঁজে পাওয়া অতি কষ্ট সাধ্য বিষয়। আলেম বা পীর সাহেব অনেকেই হতে পারেন কিন্তু পবিত্র কোরআনের খেদমত ক’জনই বা করতে পারেন। আর পবিত্র কোরআনের খেদমত যা আমাদের মুর্শিদ কিবলার জীবনের সবচেয়ে বড় কারামত। পবিত্র কোরআনের খেদমতে ছাহেব কিবলার অবদান ইতিহাসে অনন্য , অসাধারণ ও অতুলনীয়। তা সবাই স্বীকার করবেন
বাংলাদেশে আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস অতীব প্রাচীন। তখন এদেশে কোন কওমী মাদরাসা বা তার সিলেবাস ছিল না। গভীর জ্ঞানার্জনের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় যখন প্রতিষ্ঠা হয়নি তখন এদেশের পীর বুযুর্গ, অলি আউলিয়া ঘরে ঘরে কোরআন পড়া চালু করেন। মক্তব এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়কালের দ্বীনি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফুলতলী মাদরাসার ব্যাপক সাড়া পড়ে। ছাহেব কিবলা (রহ.) এই বিদ্যাপীঠের অন্যতম ছাত্র ছিলেন। ইসলাম ধর্মের প্রত্যেকটি বিষয়ে তাঁর প্রচুর মেধা ছিল। তিনি ইলমে কিরাতের জগতে শ্রেষ্ঠ অলী এবং ক্বারী আল্লামা ইয়াকুব বদরপুরী (রহ.) এর নিকট শিক্ষা গ্রহণ করেন। মাওলানা হাফিজ আব্দুর রউফ শাহবাজপুরী করমপুরী (রহ.) এর নিকট এলমে কেরাতের পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করেন। শাহবাজপুরী (র.) ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত ক্বারী ইরকুসুস মিশরী (র.) এর ছাত্র।
ইলমে কিরাত হলো ধর্মীয় ইবাদত বন্দিগীর মূল বিষয়। একজন মুসলমান মাত্রই সহিহ শুদ্ধভাবে ফরয এবাদত আদায় করতে হলে পবিত্র কোরআনের গঠন ও পাঠন সহিহ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। পবিত্র কোরআনের শুদ্ধ ক্বিরাত জানা ফরয বিধায় তিনি ইলমে ক্বিরাতে পাণ্ডিত্য অর্জনের জন্য ‘আহলে লিছান’ তথা পবিত্র মক্কা নগরীর শ্রেষ্ঠ ক্বারীদের নিকট শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ১৯৪৪ সালে পবিত্র কাবা শরীফে গমন করেন এবং সেকালের যুগ শ্রেষ্ঠ ক্বারী আহমদ হেজাজী (রহ.) এর নিকট ইলমে কিরাতের সর্বশেষ সনদ অর্জন করেন। শায়খুল ক্বোরবা হযরত আহমদ হেজাজী (র.) এর কাছ থেকে। হেজাজী (র.) ছিলেন হারাম শরীফ সহ তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের খ্যাতনামা ক্বারীগণের উস্তাদ ও পরীক্ষক। যথারীতি তিনি শায়খুল ক্বোররা (র.) এর কাছ থেকে ইলমে ক্বিরাতের সনদ লাভ করেন।
ইলমে ক্বিরাতের বিকাশ সাধনে তিনি এক কৃতীপুরুষ। নিজে এ ইলমের আলোকময় সুধায় সিক্ত হয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে এর অনুপম আলোয় উদ্ভাসিত করতে স্থাপন করেছেন অনুকরণীয় নজীর। তিনি ১৯৪০ সালে নিজ বাড়ীতে ইলমে ক্বিরাতের দারস চালু করেন। পূর্বে প্রতিদিন কিছু সময় বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা দান করতেন ভারতের বদরপুর ৩৬০ আউলিয়ার সাথী হযরত আদম খাকী (রাহ ) এর মাজারের পার্শ্বে। মদিনা ওয়ালার ইশারা পেয়ে শুরু করেন বিশুদ্ধ কোরআন শিক্ষার নিয়মিত খেদমত। ক্রমান্বযে এর শিক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকায় এর প্রেক্ষিতে শাখা কেন্দ্র স্থাপন ও বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যথাসময়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাষ্টি বোর্ড গঠন করে বোর্ডের সদস্যদের অনুরোধে উনার মুহতারাম পিতা মুফতী মাওলানা আব্দুল মজিদ চৌধুরীর নামানুসারে এ প্রশিক্ষণের নাম রাখা হয় ‘দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট’। তিনি সর্বসস্মতিক্রমে উক্ত বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে ওফাতের পূর্ব পর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন। বর্তমানে ট্রাষ্টিবোর্ডের অধীনে কেন্দ্রীয় দফতর ফুলতলী ছাহেববাড়ি থেকে সমগ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে এবং বহির্বিশ্বেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তিনি উনার ভূ-সম্পত্তির বিশাল অংশ (প্রায় ৩৩ একর জমি) ট্রাস্টের নামে ওয়াকফ করে দিয়ে আল-কুরআনের খেদমতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বর্তমানে এ বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রায় ২২০০ শাখা কেন্দ্র দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এবং প্রতি বছর এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাষ্টের অধীনে কেন্দ্রগুলো পরিচালিত হলেও শেষ জামাত উনার নিজ বাড়িতে প্রধান কেন্দ্রে পরিচালিত হয়। ফলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এ কেন্দ্র থেকে সনদ লাভ করে থাকেন। উক্ত প্রধান কেন্দ্রে উনার সুযোগ্য সনদপ্রাপ্ত ৭ পুত্র ও ৮ নাতি সহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। মাসব্যাপী ছাত্র-শিক্ষকদের থাকা খাওয়ার খরচ তিনি উনার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রদান করতেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ যাবৎ লক্ষাধিক লোক বিশুদ্ধ ক্বিরাত শিক্ষা গ্রহণ করে বিভিন্নভাবে দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
তথ্য সংগ্রহ:- ভর্তি নির্দেশিকা, প্রধান কেন্দ্র।
Posted ১০:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ মে ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.