
স্টাফ রিপোর্টার,সংবাদমেইল২৪.কম | রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট
ঢাকা: দুপুরের খাবারের পর একটু মিষ্টান্ন (ডেজার্ড ) না হলে কি হয়! হোক সেটা অফিস পাড়ায় দুপুরের খাবারের পর। আর মিষ্টান্ন খেতে খেতে সহকর্মীর সঙ্গে কিছুটা আড্ডাও কিন্তু উপভোগের, যদিও মিষ্টি খেলে একটু মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কিন্তু নিখিলের রসমালাই কী আর সেটি মনে রাখতে দেয়। হোক না রাস্তার পাশে। স্বাদ আর মানের কারণে দুপুরের খাবারের পর যেতেই হয় নিখিলের রসমালাই খেতে। প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে। নিখিলের বাবা সুশীল শুরু করেছিলেন এ ব্যবসা। মানের সঙ্গে আপোষ নেই তাদের।
রাজধানীর মতিঝিলের দিলকুশায় অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ঠিক সামনে। ছোট্ট একটি ভ্যান গাড়ি। গাড়িতে এক পাশে নিখিলের রসমালাইয়ের পাতিল। আর পুরোটা জুড়ে কাচা সন্দেশ, রসগোল্লা, দধি। তবে জনপ্রিয় বেশি রসমালাই। ব্যাংক পাড়ার সুটেট বুটেট মানুষগুলো দুপুরের খাবার খেয়েই চলে আসেন নিখিলের রসের হাড়ির কাছে।
নিখিল জানালেন তার বাবার ব্যবসা শুরুর গল্প। কী যে সংগ্রাম আর নির্যাতন সইতে হয়েছে মিষ্টি খেতে যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য। ফুটপাটের ব্যবসা বলে পুলিশি নির্যাতনও বাদ যায়নি।
নিখিল বলেন, “এইতো ছয় থেকে সাত বছর আগের কথা। একদিনতো পুলিশের টহল টিম এসে পুরো রসমালাইয়ের হাড়ি ফেলে দিল। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। সামান্য ব্যবসা করে চলে সংসার। তখনও বাবা বেঁচে ছিলেন। মা, বাবা, স্ত্রী, মেয়ে আর ছোট ভাইদের নিয়ে বড় একটি সংসার চলে এই আয় দিয়ে। সেদিন পকেটে ১৫০ টাকা ছিল। সেই টাকা দিয়ে রাতে চাল কিনে বাসায় ফিরি।”
১৯৮৫ সালে নিখিলের বাবা সুশীল ঘোষ মতিঝিলে অফিসপাড়ায় ঘাড়ে করে নিয়ে নানা সামগ্রি বিক্রি করতেন। এর পর শুরু করেন রসমালাই বিক্রি। শরীয়তপুর থেকে রসমালাই বানিয়ে ঢাকায় বিক্রি শুরু করেন। বাবা-ছেলে দুজনের উদ্যোগে চলে এ ব্যবসা। সারা দিন তার মা, স্ত্রী ও ভাইয়েরা শরীয়তপুরে রসমালাই তৈরি করেন। ভোরে সেগুলো লঞ্চে নিয়ে আসা হয় সদরঘাটে। সেখান থেকে ভ্যানে এনে মতিঝিলে বিক্রি করেন তারা। এখনও চলছে সেভাবেই।
নিখিল জানালেন, প্রতিদিন দুই থেকে তিন মণ দুধ তিনি সংগ্রহ করেন গোয়ালদের কাছ থেকে। সেখান থেকে তৈরি করেন রসমালাই, বিভিন্ন রকম মিষ্টি ও দধি। তিনি গোয়ালদের সাফ বলেদিয়েছেন, দুধে পানি চলবে না, সেভাবেই যেন গোয়ালরা সহায়তা করেন তাকে।
জানা গেছে, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কেজি রসমালাই বিক্রি হচ্ছে তার ওখানে। দাম ২৬০ টাকা। আর অন্যান্য মিষ্টি বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৫ কেজি।
নিখিলের কর্মী অর্জুন বলেন, “আমাদের মিষ্টির দামটাও বেশ সহনীয়। দামি কোন দোকানে কিনতে গেলে আমাদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লাগবে।’
অর্জুন আরো বলেন, “অনেকে চলার পথে রসমালাই বা মিষ্টি খাচ্ছেন। অনেকে আবার নিয়মিতও খাচ্ছেন। আবার বাসার জন্যও অনেকে কিনে নিচ্ছেন আমাদের রসমালাই।”
এতো দিনেও কেন ফুটপাত থেকে কোনো স্থায়ী দোকান করেননি জানতে চাইলে নিখিল ঘোষ জানান, দোকান নিতে বড় অংকের অগ্রীম দিতে হয়। সে পরিমাণ অর্থ তার নেই। আবার এ জায়গায় একটা পরিচিতি হয়েছে। নতুন কোথাও দোকান নিলে ব্যবসা জমতে সময় লাগবে। তাই হয়ে ওঠেনি। তবে ইচ্ছে আছে একটি দোকান নেয়ার। সেটি মতিঝিলে হলে ভাল হবে বলেও জানান তিনি।
এবি ব্যাংকের কর্মকর্তা রাকিব হাসনাত রসমালাই খাচ্ছিলেন। প্রতি প্লেট ২০ টাকায় পাওয়া যায়। রাকিব হাসনাত বলেন, “নিখিলের রসমালাই আমি নিয়মিত খাই। খেতে ভাল লাগে। মানও ভাল। দামের থেকে মানটা নিয়ে তো বেশি প্রশ্ন থাকে। তবে নিখিলের দোকানের মিষ্টির দাম তুলনামূলকভাবে কমই।’
চলার পথে কাচা সন্দেশ খাচ্ছিলেন হেলালুর রহমান। তিনি বলেন, “মান কেমন জানি না। তবে দোকানটি দেখে খেতে ইচ্ছে করল। তাই খাচ্ছিলাম।’
নিখিল ঘোষের বাবা মারা গেছেন বছর দুই হলো। তবে বাবার সংগ্রামের কথা আজও তাড়া করে আজকের নিখিলকে। তিনি বলেন, “বাবা নেই। তবে বাবার শুরু করা ব্যবসা সততা নিয়ে আজও চলছে। সততার সঙ্গে আপোষ করিনি। করবও না।’
সংবাদমেইল২৪.কম/এন আই/এনএস
Posted ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.