বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | বুধবার, ০২ নভেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট
ঢাকা: আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইসি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রাজনৈতিক মহলেও ইসি পুনর্গঠন নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।
বর্তমান ইসিকে অথর্ব আখ্যা দিয়ে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।
দলটির নেতারা প্রতিদিনই ইসি পুনর্গঠন প্রসঙ্গে নিজেদের দাবি তুলে ধরে বক্তব্য রাখছেন। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো রূপরেখা দেয়নি দলটি।
দলটির একজন নীতি নির্ধারক নিউজবাংলাদেশকে জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরে নতুন নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠনের জন্য সরকারকে আনুষ্ঠানিক রুপরেখা দেবে বিএনপি।
দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, জনগণকে সন্তুষ্ট করার জন্য যদি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হয় সেই নিবার্চন কমিশনকে স্বাগত জানাবে বিএনপি। তবে ইসি গঠনে সরকারের ভূমিকা কী হবে তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে তারা। তারা মনে করছেন, সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে বা নিবার্চন কমিশনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে ইসি গঠন করা উচিত। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের শর্ত হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে নভেম্বরে সংবাদ সম্মেলন করে ইসি পুনর্গঠনে দলের রূপরেখা তুলে ধরবে বিএনপি। একইসঙ্গে সরকারকে আলোচনায় বসার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আমরা ইসি পুনর্গঠন এবং সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে সরকারকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছি, তারা না করছে। এখন এটা সেই অবস্থায় আছে। নভেম্বরে নির্বাচন কমিশন এবং সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে দলের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির কাছে তুলে ধরবো। ইসি গঠন নিয়ে আমরা কী ধরণের প্রস্তাব দেবো সেটা নিয়ে কাজ চলছে। সময় বেশি নেই তাই দ্রুত রূপরেখা দেয়া হবে।আমরা সরকারকে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনায় বসার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেব।”
তিনি বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ এবং শক্তিশালি ইসি গঠন করার কথা। এমন কমিশন যাকে সরকার নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে পারবে না। এমন কমিশন আমাদের পাশের দেশে আছে। কিন্তু আমরা তেমন নিরপেক্ষ ইসি এখানে দেখতে পাই না। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল দলের সাথে আলাপ করে সার্চ কমিটি গঠন করা দরকার। সার্চ কমিটি সুষ্ঠু হলে সুষ্ঠু ইসি গঠন সম্ভব হবে।”
উল্লেখ্য, সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। ফলে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনো দিন পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসেবে নির্বাচনের বাকি আছে আরও প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময়। অবশ্য বিএনপি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে।
বর্তমান ইসি নিয়োগের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি। ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সংলাপে ২৩টি দল অংশ নেয়। এরপর জানুয়ারিতে গঠন করা হয় সার্চ কমিটি। এ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হয় বর্তমান নির্বাচন কমিশনের। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রকিবউদ্দীন কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের আগেই নতুন নিবার্চন কমিশন গঠন করতে হবে।
নতুন ইসি গঠন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত বর্তমান ‘মেরুদণ্ডহীন, অথর্ব সরকারের আজ্ঞাবহ’ নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনসহ একটি নির্বাচনও অবাধ ও সুষ্ঠু করতে পারেনি। ক্ষমতাসীনরা পুনরায় সার্চ কমিটির মাধ্যমে আবারো এমন একটি বশংবদ ইসি গঠন করে তাদের দিয়ে পুনরায় নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য কাজ করছে। কিন্তু ইসি গঠিত হতে হবে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে। নইলে দেশবাসীর কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমরা এটা শক্তিশালী দেখতে চাই। আমরা কোনো আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন চাই না। আমরা নির্বাচন কমিশন চাই তাদের নির্বাচন পরিচালনায় যেন জনগণ স্বতর্ফুতভাবে, নির্ভয়ে ও অবাধে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় এবং দেশে বিদেশের মানুষ একটি ভালো নিবার্চন দেখতে পায়।”
তিনি বলেন, “ইসি পুর্নগঠনের ক্ষেত্রে আমাদের যা করা উচিত আমরা তাই করবো। আমরা অপেক্ষা করছি। তাদের ( আওয়ামী লীগ ) আচারণের কোনো পরির্বতন আসে কিনা। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরির্বতন হয় কিনা। তারা জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে কিনা এবং একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন তারা করতে চায় কিনা। এই সার্চ কমিটি নিবার্চন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে এটা মানুষের কাছে দৃশ্যমান হবে।”
Posted ৫:২৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ নভেম্বর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.