বৃহস্পতিবার ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০

ডলারের দাম বাড়ার নেপথ্যে

অনলাইন ডেস্ক : | বুধবার, ০৩ নভেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট  

ডলারের দাম বাড়ার নেপথ্যে

বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং খোলা বাজার উভয় জায়গাতেই টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে চলেছে। এই মূহুর্তে খোলা বাজারে এক মার্কিন ডলার বিনিময়ে ৯০ টাকা ১০ পয়সা পাবেন একজন গ্রাহক।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেয়া হার হচ্ছে ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা। ডলারের সাথে অন্য প্রায় সব বৈদেশিক মুদ্রা যেমন পাউন্ড, ইউরো, সৌদি রিয়াল, কুয়েতি দিনার এবং ভারতীয় মুদ্রারও দাম বেড়েছে ব্যাংক ও খোলাবাজারে।


কেন বেড়েছে ডলারের দাম?
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে গত দুই বছর কয়েক ধরে ডলারের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এমনকি অগাস্টের শুরুতেও প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪.৮০ টাকা। কিন্তু এ বছরের পাঁচই আগস্ট থেকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে।

মূলত সেসময় থেকে বিমান যাত্রা এবং পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ওই সময় থেকে পেশাগত কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং ভ্রমণের জন্য বিদেশে যাতায়াত শুরু হয়।


বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে মহামারীর সময়ও ডলারের দাম বাড়েনি।

এখন ডলারের দাম বৃদ্ধির পেছনে যুক্তি কী, প্রশ্নের জবাবে ইসলাম বলেছেন, ‘সে সময় আমদানিও কম ছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি বিশেষ করে ভারী যন্ত্রপাতির আমদানির জন্য এলসি করতে হচ্ছে।’


খাদ্যপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও বেড়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের টিকার পেমেন্ট শোধ করতে হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতির তীব্রতা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কমে আসায় বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হচ্ছে, যে কারণে মানুষ বিদেশ ভ্রমণে বেশি যাচ্ছে। এর সাথে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা।

এছাড়া গত কয়েক মাসে রেমিটেন্স ও রফতানি আয় কমার সাথেও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।

ইসলাম বলেছেন, ‘রেমিটেন্স কমলেও দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পর্যাপ্ত রয়েছে, এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচুর ডলার মার্কেটে ছেড়েছে। ফলে বাজারে ডলারের কোন ঘাটতি বা সংকট নেই বলে আমি মনে করি।’

ডলারের দাম কত?
এই মূহুর্তে বাজারে এক মার্কিন ডলার বিনিময়ে ৯০.১০ টাকা পাবেন একজন গ্রাহক। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেয়া হার হচ্ছে ৮৫.৭০ টাকা। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকেও দাম বেড়েছে। সেখানে ডলারের দাম ৮৮ টাকার নিচে। এছাড়া আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বেধে দেয়া হার প্রতি ডলারের জন্য ৮৫.৭৫ টাকা।

ঢাকার ধানমণ্ডির একটি মানি এক্সচেঞ্জের কর্মী রেবেকা সুলতানা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রতি ডলার ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডলারের দাম ৯১ টাকা পর্যন্ত তারা বিক্রি করেছেন বলে জানালেন।

তিনি বলছিলেন ডলারের চাহিদা এবং দাম দুই-ই সেপ্টেম্বরের শেষদিকে থেকে বাড়তে শুরু করে। এখন ডলারের দাম বাড়ার সাথে সাথে অন্য প্রায় সব বৈদেশিক মুদ্রারও দাম বেড়েছে। মঙ্গলবার ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড ১২৮.৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহেও যার দাম ছিল ১২২ টাকা।

ইউরোর দাম এখন ১০৩.৬০ টাকা। এছাড়া সৌদি রিয়াল, কুয়েতি দিনার এবং ভারতীয় মুদ্রারও দাম বেড়েছে ব্যাংক ও খোলাবাজারে।

রেবেকা সুলতানা বলেছেন, ‘আমরা যদি কম দামে কিনতে পারতাম, তাহলে রেট কিছুটা কম দেয়া যেত। কিন্তু এখন ডলার বিক্রি করতে অনেক কম মানুষ আসে।’

কার লাভ কার ক্ষতি
বোনের চিকিৎসার জন্য আগামী সপ্তাহে ভারতের চেন্নাই যাচ্ছেন সুবর্না সুলতানা। তিনি বলছিলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় দুই বছর বিরতি দিয়ে চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন তারা। ফলে চেকআপ এবং পরবর্তী চিকিৎসার জন্য ভারতে তাদের অবস্থানের মেয়াদ দীর্ঘ হতে পারে এমনটা ধরে নিয়ে তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার বোন ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডিতে ভুগছে। এর মধ্যে গত বছর তার কোভিডও হয়েছিল। এখন যেহেতু আমরা প্রায় দুই বছর পর যাচ্ছি, আমাদের ফুল চেকআপ করতে হবে, তারপর অবস্থা বুঝে চিকিৎসা। বেশি সময় থাকতে হতে পারে ভেবেই আমরা ওখানে বাড়ি ভাড়া করেছি।’

সুলতানা বলেছেন, খরচের হিসাব করে এখন তারা ডলার এবং রুপি দুই-ই সাথে নিয়ে যাচ্ছেন। ‘এখন ডলারের দামের সাথে সাথে রুপির দামও বেড়ে যাওয়ায় আমাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।’

সুলতানা জানিয়েছেন পান্থপথের মানি এক্সচেঞ্জ থেকে তিনি রোববার ডলার কিনেছেন ৯১ টাকায়, আর রুপি কিনেছেন এক টাকা ২০ পয়সা করে।

সুবর্না সুলতানার মত যারা বিভিন্ন কারণে বিদেশ যাচ্ছেন, তাদের যেমন খরচ বাড়ছে, একই ভাবে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ইসলাম বলেছেন, আমদানিকারকদের কিছুটা ক্ষতি হলেও, এ অবস্থায় লাভ হবে রফতানিকারকদের।

তবে এ অবস্থা দীর্ঘ হবে না বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেছেন, দযখন আবার রফতানি বেড়ে যাবে, রেমিটেন্স ফ্লো বাড়বে সে সময় দেখা যাবে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’ সূত্র: নয়াগিন্ত

 

 

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ১:১৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৩ নভেম্বর ২০২১

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত