
নড়াইল জেলা প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট
নড়াইল: জেলার লোহাগড়া উপজেলার চরকালনা গ্রামের বীরাঙ্গনা মর্জিনা বেগম (৬৯) ভালো নেই। শক্তিহীন শরীরে কাজও করতে পারছেন না। তাই কোনো কোনো দিন খাবারও জোটে না তার। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছেন স্বাধীনতার জন্য সব হারানো এই বীরাঙ্গনা।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে বীরাঙ্গনা মর্জিনা বলেন, ‘‘দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫ বছর হলো। এজন্য আমি গর্বিত। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। তাদের খাবার দিয়েছি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোন জায়গায় আছে তার খবর দিয়েছি।’’
মর্জিনার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মর্জিনা বেগমের বয়স ১৭ বছর। পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় ছিল পাকিস্তানি সেনাদের শক্ত ঘাঁটি। কাশিয়ানি উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে ছিল তাদের বাড়ি। দুই বোন ও বাবা-মাসহ চারজনের সংসার ছিল তখন। একাত্তরের মে মাসে আর্মিরা তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। একজন পাকিস্তানি আর্মি তাকে তাদের রান্নাঘরে নিয়ে রাইফেল ধরে ভয় দেখিয়ে নির্যাতন করে। কয়েকদিন পর গ্রামের রাজ্জাক মোল্লার বাড়িতে তাকে ধরে নিয়ে দুইজন পাকিস্তানি আর্মি আবারও তাকে নির্যাতন করে।
১৯৯৮ সালে বন্যায় মধুমতীর ভাঙনে শংকরপাশার বাড়িটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারপর ১২-১৩ বছর ভাটিয়াপাড়ায় সরকারি রাস্তার পাশে টিনের ছাপড়া তুলে বসবাস করেছেন মর্জিনা বেগম।
বর্তমানে লোহাগড়া উপজেলার চরকালনা গ্রামে মধুমতী নদীর পশ্চিম তীরে খাস জমিতে একটি ছাপড়াঘর তুলে মর্জিনা তার মা আলেয়া বেগমকে (৮২) নিয়ে কোনোরকম বসবাস করছেন। তার কোনো জমি-জমা নেই, নেই কোনো আয়-রোজগার। স্বামী রিকশাচালক পিরে শেখ মারা গেছেন পঁচিশ বছর আগে।
দেশ স্বাধীনের দুই বছর পর তাদের বিয়ে হয়েছিল। দুই ছেলে ও এক মেয়ের সবাই বিয়ে করেছেন। দিনমজুর ছেলেরা আলাদা সংসার করছেন। এখন পরের বাড়ি কাজ করে দিন চলে মর্জিনা বেগমের। যেদিন কাজে যেতে পারেন না সেদিন উপোস থাকতে হয়।
লোহাগড়া উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা খান মর্জিনা বেগমকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও মর্জিনার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
লোহাগড়া উপজেলার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সলিম রেজা বীরাঙ্গনা হিসেবে মর্জিনার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
লোহাগড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ ফকির মফিজুল হক বলেন, “এতদিনে মর্জিনা বেগমের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হওয়া উচিৎ ছিল। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। তাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা করা হবে।”
সংবাদমেইল২৪.কম/এসআইবি/এনএস
Posted ৯:৩৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.