
বিশেষ প্রতিনিধি | সোমবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
কুলাউড়ায় গত ৯ মাস থেকে সমাজচ্যুত করে এক ঘরি করে রাখা হয়েছে ৩ টি পরিবারকে। ওই পরিবারগুলো সমাজচ্যতু হওয়ায় পরিবারের ছোট শিশুরা মসজিদ থেকে শুরু করে কারো সাথে মিশে খেলাধুলা করতে পারছেনা। এছাড়াও পরিবারের অন্য সদস্যরা গ্রামে সামাজি অনুষ্টানে কেউ অংশগ্রহন করতে না পারায় মানুষিভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছেন। উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কুরবানপুর গ্রামে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে এ তিন পরিবারের সকল সদস্যদের গ্রাম্য পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যরা শালিশের মাধ্যমে সমাজচ্যুত করে রেখেছে। এ বিষয়টি ইতিমধ্যে সারাদেশে ভাই’রাল হলেও এখনও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না। এনিয়ে ভুক্তভোগীরা আদালতের শরাপন্ন হয়েছেন।
সমাজচ্যুত ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সাথে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাচাতো ভাইদের বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধ মীমাংসার জন্য পঞ্চায়েত কমিটির কাছে বিচার প্রার্থী হন ভুক্তভোগী পরিবার। বিষয়টি মীমাংসার জন্য কুরবানপুর জামে ম’সজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া, পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য চুনু মিয়া, চেরাগ মিয়া, হান্নান মিয়া ও কাদির মিয়া সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উভয় পক্ষের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জামানত নিয়ে একটি সালিশ বৈঠকে বসেন গত বছরের ১৯ জুন। সালিশের সিদ্ধান্ত একতরফা হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবার তা মেনে না নিয়ে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি স্বত্ব মামলা ( মামলা নং ৯৭/২০২০ ইং) দায়ের করেন।
এদিকে শালিশী বৈঠকের সিদ্ধান্তকে না মেনে আদালতে মামলা দায়ের করায় সালিশকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগী তিনটি পরিবারের অনুপুস্থিতিতে অবৈধভাবে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিবাদীর বাড়ীতে বসে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর এ তিনটি পরিবারকে কুরবানপুর গ্রাম থেকে ৫ বছরের জন্য সমাজচ্যুত করে রায় দেয়। সমাজচ্যুত করার কারণে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর চরম দুর্ব্যবহার, স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায়ে বিভিন্ন ধরনের বাধা বিপত্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লোকজন না আসা, এমনকি গ্রামের লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলতে না দেওয়া সহ স্বাভাবিক জীবন যাত্রা পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি, মৌলিক অধিকার হরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিবাদী পাখি মিয়াসহ পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যদের নাম উল্লেখ করে সমাজচ্যুত করার কারণ জানতে চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করে ভোক্তভোগী পরিবার। লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ার পর এ তিন পরিবারের প্রতি আরোও ক্ষিপ্ত হন পঞ্চায়েত কমিটি। পরে বিষয়টি সমাধানের জন্য ভূক্তভোগী পরিবার কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভুক্তভোগী পরিবার, বিবাদী ও পঞ্চায়েত কমিটিকে নিয়ে বসে বিষয়টির মীমাংসা করে দেন। কিন্তু পঞ্চায়েত কমিটি পরে ইউএনওর মীমাংসা কে তোয়াক্কা না করে ভুক্তভোগীর পরিবারটির উপর ৫ বছরের জন্য সমাজচ্যুত রায় বহাল রাখে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য কাজল আহমেদ বলেন, আমাদেরকে সমাজচ্যুত করার পর থেকে প্রশাসন, থানা পু’লিশ ও জনপ্রতিনিধি সহ সকলের কাছে ঘুরতে ঘুরতে আমরা এখন অনেকটাই ক্লান্ত। আমাদের পরিবারের সদস্যরা মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে বাঁ’ধা সহ সমাজের কাউকেই আমাদের সাথে কথা বলতে দিচ্ছেনা পঞ্চায়েত কমিটি। কোমলমতি শিশুরা মসজিদে নামাজ ও ইসলাম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে কাজল প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন।
কুরবানপুর জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, কাউকে সমাজচ্যুত করার অধিকার আমাদের নেই। তিনি শালিশের মাধ্যমে তিনটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও ইউএনও অফিসে এ বিষয়ে একটি বৈঠকের কথা স্বীকার করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁর অফিসে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে একটি সমাধান করে দেন। বর্তমানে এ নিয়ে কোনো সমস্যা হলে খবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
Posted ৮:৪৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.