শনিবার ১০ জুন, ২০২৩ | ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০

কুলাউড়ায় ৫টি রেলস্টেশন বন্ধ

কুলাউড়া সংবাদদাতা :: | মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট  

কুলাউড়ায় ৫টি রেলস্টেশন বন্ধ

কুলাউড়া উপজেলায় প্রায় দেড় যুগ থেকে ৪টি রেল স্টেশন এক বারে বন্ধ রয়েছে। সাম্প্রতি নতুন করে প্রায় তিন মাস আগে চালু থাকা আরেকটি স্টেশন অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ট্রেনের ক্রাসিং বিরম্বনার পাশাপাশি যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। লোকবল সংকটের কারন দেখিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া কুলাউড়া উপজেলার ব্যস্ততম ৫টি রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষ চালুর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় স্টেশন গুলোর গুরুত্বপূর্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে, পাশাপাশি এসব স্টেশনে ময়লা আর্বজনার স্তোপ জমে ভূতুরে বাড়ীতে পরিনত হয়েছে। এসব স্টেশন দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে এবং অন্যদিকে যাত্রীরা তাদের যাতায়াত ও মালপত্র পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। সিলেট-আখাউড়া রেলসেকশনের মধ্যে কুলাউড়া উপজেলায় ৭টি রেল স্টেশন রয়েছে এর মধ্যে ৫টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে।

সরেজমিন স্টেশন গিয়ে এবং রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা বাজার, টিলাগাঁও, ছকাপন ও মনু রেলওয়ে স্টেশন প্রায় দেড় যুগ থেকে বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ প্রায় ৩ মাস আগে চালু থাকা লংলা স্টেশনটি ও বন্ধ হয়ে গেছে। ওয়ান ওয়ে লাইনে থাকা মনু ও ছকাপন স্টেশনে লোকাল ট্রেনের জন্য আগে একজন পোর্টার দিয়ে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা চালু রাখা হলেও বর্তমানে দীর্ঘদিন থেকে সেই ব্যবস্থা ও বন্ধ রয়েছে। এসব স্টেশন দুটি চালুর দাবিতে একাধিকবার স্থানীয় এলাকাবাসী আন্তঃনগর ট্রেন আটকিয়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে এবং রেল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলো স্থানীয়রা। কিন্তু সেই দাবি আজও পূরণ হয়নি। ভাটেরা বাজার স্টেশনের সিগ্যানাল ভবনটি স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীরা দখল করে তাদের স্টাফদের থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছে। টিলাগাঁও স্টেশনের সামনে এক গেটম্যানের আত্নীয় জায়গা দখল করে দোকান দিয়ে বসে আছে। এভাবে অন্য স্টেশনগুলোতে রেলওয়ের সাথে জড়িত চতুর লোকজন বহিরাগত লোকজনদের ভাড়া দিয়ে টাকা আদায় করছে। স্টেশন গুলো বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে ট্রেনগুলো ক্রসিং নিয়ে। বরমচাল স্টেশন থেকে মাইজগাঁও স্টেশনের দুরত্ব প্রায় ১৫-১৭ কিলোমিটার, মধ্যখানে ভাটেরা বাজার স্টেশন রয়েছে, এবং কুলাউড়া থেকে শমসেরনগর স্টেশনের দুরত্ব প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যখানে লংলা ও টিলাগাঁও রেল স্টেশন রয়েছে যা সেগুলো দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ। প্রতিদিন এ রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর আপ-ডাউন ৬টি ট্রেন ও একটি লোকাল মেইল ট্রেন এবং মালবাহীগুলোকে ক্রসিংয়ের জন্য আগে লংলা স্টেশনকে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু প্রায় ৩ মাস আগে এই স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার রজত রায়কে সিলেটের মোগলাবাজার রেল স্টেশনে বদলি করে দেওয়ায় স্টেশনের কার্যক্রম সেখানকার সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ক্রসিংয়ের জন্য কুলাউড়া নতুবা শমসেরনগর স্টেশনে এক ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে অন্য ট্রেনকে ক্রসিং দিতে হয়। ভাটেরা বাজার স্টেশন বন্ধ থাকায় মাইজগাঁও নতুবা বরমচাল স্টেশনের মধ্যে যেকোন ট্রেন দাঁড় করিয়ে ক্রসিং দিতে হয়। বন্ধ থাকা স্টেশনে ট্রেনের নির্ধারিত সময় অনুমান করে যাত্রীরা লোকাল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।


ভাটেরা স্টেশনের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ, লংলা স্টেশনের এ.কে উজ্জল, টিলাগাঁও স্টেশনের পলাশ ধর, ছকাপন স্টেশনের আব্দুস সামাদ ও মনু স্টেশনের স্থানীয় যাত্রী শামসুল হক জানান, একসময় এসব স্টেশনে ট্রেনের সময়সূচি ও টিকিট পাওয়া যেত। লোকাল মেইল ট্রেন স্টেশনে এসেই হুইসেল দিয়ে চলে যায়, এতে যাত্রীরা উটা নামায় প্রায় গুরুতর আহত হন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় ট্রেনে যাতায়াতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এক সময়ের জমজমাট লংলা, টিলাগাঁও, মনু, ছকাপন ও ভাটেরা স্টেশনগুলো এখন অনেকটা নিরব। নেই কোনো কোলাহল বা যাত্রীদের প্রাণ চঞ্চল গল্প আড্ডা। যেন এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে স্টেশনগুলোতে।

টিলাগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক জানান , ব্রিটিশ শাসনামলে ডানকান ব্রাদার্সের বাগান ও এলাকার জনসাধারণের সুবিধার্থে টিলাগাঁও ষ্টেশন স্থাপন করা হয়েছিল। বি-গ্রেডের স্টেশন টিলাগাঁওয়ে শুধু বাগানের মালামাল বুকিং করেই সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হতো। চা-বাগান বেস্টিত রেল স্টেশনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমানে এ স্টেশন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।


সিলেট-আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের পরিবহন পরিদর্শক (টিআইসি) তৌফিকুল আজিম জানান, সারাদেশেই বর্তমানে স্টেশন মাস্টার সংকট রয়েছে। সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অনেক স্টেশন মাস্টারের অভাবে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। নতুন স্টেশন মাস্টার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। নিয়োগ শেষে ট্রেনিং দেওয়া হবে স্টেশন মাস্টারদের। আগামী ডিসেম্বরের আগে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত মাস্টাররা দায়িত্ব নিতে পারবেন না। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

Facebook Comments Box


Comments

comments

advertisement

Posted ৪:২২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত