
জসীম চৌধুরী,সংবাদমেইল২৪.কম | সোমবার, ২২ অক্টোবর ২০১৮ | প্রিন্ট
কুলাউড়ায় ১৫ বছর থেকে একটি জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর ভাবে বন্দি অবস্থায় দিনযাপন করছেন জুনেদ আহমদ (৩৮) নামে এক ব্যক্তি।
সে পাশ্ববর্তী বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের ইকরিকান্দি গ্রামের মৃত ময়না মিয়া ও কটই বেগমের একমাত্র পুত্র।
জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের বড়দল গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল মিয়ার স্ত্রী তাঁর বোন রেজিয়া বেগমের বাড়িতে দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর আগে বড়লেখা থেকে একেবারে চলে আসে জুনেদ। প্রথমে সে সুস্থ থাকলেও এর তিন বছর পর সে একেবারেই মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগল) হয়ে পড়ে বলে তার ভগ্নিপতি দাবি করেন। একপর্যায়ে সে অতিরিক্ত মাত্রায় ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাঁকে একটি ঘরে প্রায় ১০ বছর বন্দি করে রাখা হয়। পরে সাধারণ মানুষের উপর তাঁর আক্রমণের ভয়ে তাকে একটি জরাজীর্ণ ঘরে প্রায় ৫ বছর থেকে বর্তমানে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তুু স্থানীয় এলাকাবাসী তা মানতে নারাজ। অনেকে জুনেদ সম্পর্কে নানান অভিমত ব্যক্ত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রায় ১০-১২ জন স্থানীয় লোকজন জানান, জুনেদের বাড়ি-ঘর রয়েছে। তাকে কেন এখানে বন্দি করে রাখা হলো। গ্রামের অনেক লোকজন তাদের বাড়িতে গেলে কাউকে বন্দি ঘরের দিকে যেতে দেয়া হয়না। কেউ জুনেদকে দেখতে চাইলে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। অনেকে জুনেদের ভগ্নিপতি জয়নাল মিয়া সম্পর্কে বলেন হয়তো বা শ্বশুর বাড়ির সম্পদ ভোগ করার হীন স্বার্থে জুনেদকে মানষিক ভারসাম্যহীন (পাগল) বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিন জুনেদের বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মূল বসত ঘরের পূর্ব পার্শ্বে জরাজীর্ণ একটি ঘরে বস্ত্রহীন (উলঙ্গ) ভাবে বসে আছে জুনেদ। কারো সাথে কোনো কথা নেই। ধীর মগ্নে তাঁর চাহুনী দেখে বোঝা পৃথিবীতে সে একা বড় কষ্টের মধ্যে আছে। একই ফ্লোরে সে খাওয়া- থাকা ও মলত্যাগ করে যাচ্ছে। সুস্থ পরিবেশে খাবার না দিয়ে তাঁকে অমানবিকভাবে দেয়া হয় পলিথিন ব্যাগে। ওই রুমের ফ্লোরেই জুনেদের জীবন-মরণ যেন এক ফ্রেমে বন্দি করে রেখেছে। একটু সুনজর ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা পেলে হয়তো বা জুনেদ আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। কিন্তুু পিতা-মাতাহীন জুনেদের এ দূরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বর্তমানে কেউ নিচ্ছেন না কোন উদ্যোগ।
জুনেদের বোন রেজিয়া বেগম জানান, আমার ভাই দীর্ঘদিন থেকে পাগল। তাকে আমরা অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তুু কোন লাভ হয়নি। এজন্য আমরা আর কোন চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে জুনেদকে ঘরে বন্দি করে রেখেছি।
জুনেদের ভগ্নিপতি মোঃ জয়নাল মিয়া জানান, তাঁর একমাত্র শ্যালক দীর্ঘ ১৯ বছর থেকে পাগল। সে বড়লেখা থেকে আসার পর প্রথমে ভালো থাকলেও একপর্যায়ে সে হঠাৎ উন্মাদ (পাগল) হয়ে যায়। আমরা তাকে অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েছি। ২০১১ সালে অক্টোবর মাসে সিলেট ওসমানী হাসপাতালসহ মানষিক কেন্দ্রের ডাক্তারদের কাছে নিয়ে গেছি। কিন্তুু তাঁর অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় ডাক্তাররা থাকে রিলিজ করে দেন। এমনকি কোনো কোনো ডাক্তার জুনেদকে বাড়ি না এনে অন্যত্র ফেলে দেবারও পরামর্শ দেন বলে জয়নাল মিয়া জানান। তারপরও আমরা তাকে বাড়িতে এনে একটি ঘরে বন্দি করে রেখে খাওয়া-দাওয়া, গোসল ও অন্যান্য কাজ এখনো করে যাচ্ছি। শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি ভোগ করার উদ্দেশ্যে জুনেদকে পাগল করে রেখেছেন বলে
স্থানীয়দের সমালোচনার জবাবে জয়নাল মিয়া বলেন, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কেউ বেঁচে নেই। নেই কোন বাড়ি-ঘরও। তাই তাঁকে এখানে আনা হয়েছে। আর আমার প্রায় ১৫০ বিঘা জমি ছাড়াও অনেক সম্পদ রয়েছে। কাজেই স্থানীয় লোকজন আমার বিরুদ্ধে যে সমালোচনা করছেন তা সঠিক নয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল মালিক বলেন, জুনেদ বড়লেখা থেকে পাগল হয়ে এসেছে। সে সময় এলাকার অনেকেই সমালোচনা করেছেন এত সুন্দর একটি ছেলে কি করে পাগল হলো। মূলত তখন থেকেই স্থানীয়দের মুখে নানান সমালোচনা চলছিলো। মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রথমে জুনেদকে রশি দ্বারা বেধে একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়।
স্থানীয় ভূকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। খোঁজ নিয়ে দেখবো।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আশেকুল হক বলেন, আমি সরেজমিন জুনেদকে দেখতে ওই বাড়িতে যাবো। সাথে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকবেন। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Posted ৬:০৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২২ অক্টোবর ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.