
বিশেষ প্রতিনিধি: | সোমবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২১ | প্রিন্ট
কুলাউড়ায় প্রাকৃতিক পাহাড়ি টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন স্থানীয় মেম্বার মনু মিয়া। পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি টাকায় দু’টি রাস্তা নির্মাণে পৃথক দু’টি টিলা কাটার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন তিনি। সেই সাথে রাতের আধারে টিলা কেটে বিক্রি করেছেন মাটিও। এমন কাজ করেছেন মনু মিয়া নামে কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নে এক ইউপি সদস্য । এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। শুধু তাই নয়, সরকারি কাজ বাস্তবায়নেও করেছেন তিনি নয় ছয়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরে লিখিত আকারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৯ -২০ অর্থবছরে টিআর প্রকল্পে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের রঙ্গীরকুল- পাঁচপীর জালাই রাস্তা নির্মাণে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৩২ টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার। একই অর্থ বছরে ইউনিয়নে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ টাকা ব্যয় কালা মিয়ার বাড়ি থেকে অর্জুণকুর্মি রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দু’টি কাজের দায়িত্ব পান জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মনু মিয়া। কাজ বাস্তবায়নের শুরু থেকে স্থানীয় লোকজন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেন। এলাকাবাসী বারবার অভিযোগ করলেও বিষয়টি পাত্তা দেননি মেম্বার। এনিয়ে মৌখিকভাবে প্রথমে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেন। পরে তারা লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, রঙ্গীরকুল-পাঁচপীর জালাই রাস্তা নির্মাণে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৩২ টাকার মধ্যে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার কাজ হয়েছে। এছাড়া কালা মিয়ার বাড়ি থেকে অর্জুণকুর্মি রাস্তায় ২ লাখ টাকার মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার কাজ হয়েছে।
পরিবেশ আইনে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে সরকারি কিংবা বেসরকারি মালিকানাধীন কোনো ধরনেরই টিলা কাটা যাবে না। তবুও দু’টি রাস্তার কাজ বাস্তবায়নে মেম্বার একাধিক টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণ করেন। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। রঙ্গীরকুল- পাঁচপীর জালাই রাস্তায় মলাঙ্গি টিলায় প্রায় এক হাজার ফুট টিলা ১০ থেকে ১২ ফুট গভীর করে কাটা হয়। যেভাবে খাড়া করে টিলাকাটা হয়েছে, তাতে আগামী বর্ষা মৌসুমেই টিলা রাস্তায় ধ্বসে পড়বে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। টিলাকাটার মাটি রাতের আধারে বিক্রি করা হয়েছে।
ইউনিয়নের দিলদারপুর গ্রামের এলাইচ মিয়ার মাটি কাটার এসকোভেটর ও ট্রাক্টর মাটি কাটা এবং বিক্রিতে পরিবহন কাজে ব্যবহৃত হয়। রাস্তা নির্মাণে যেটুকু টিলাকাটা হয়েছে সেই অংশ ছাড়া বাকি কোদাল দিয়ে পরিষ্কার করেই কাজ শেষ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মনু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, টিলা না কাটলে রাস্তা হবে না। রাস্তার ক্ষেত্রে পাহাড় কাটার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। পাহাড়ে যাইতে রাস্তা লাগে। এটারে পাহাড় কাটা বলে না। কেউ অভিযোগ দিতেই পারে। তবে রঙ্গীরকুল- পাঁচপীর জালাই রাস্তার কাজের প্রজেক্ট চেয়ারম্যান আমি নয়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন কমরু প্রজেক্ট চেয়ারম্যান।
কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আলী জানান, তিনি নিজে দেখেছেন রঙ্গীরকুল- পাঁচপীর জালাই রাস্তার কাজে অনিয়মের চিত্র। কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশও দিয়েছেন।
এব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Posted ১২:৩৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২১
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.