
মাহফুজ শাকিল,সংবাদমেইল২৪.কম | সোমবার, ২৫ জুন ২০১৮ | প্রিন্ট
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে কুলাউড়া উপজেলার মেরিনা চা বাগানে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে এক পর্যায়ে প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রায় ৪ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে চা শ্রমিকরা। পরে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) মো. আবু ইউসুফ ও কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌঃ মোঃ গোলাম রাব্বী উপস্থিত হয়ে বিক্ষুব্ধ চা শ্রমিকদের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা প্র দান করার আশ্বাস প্রদান করলে এক পর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ নিয়ে সোমবার (২৫ জুন) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে অতিরিক্ত সচিব ও শ্রম অধিদপ্তরের মহা পরিচালক এবং এই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার শিবনাথ রায় বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছে অভিযোগকারীরা। এর আগে গত রবিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় নির্বাচনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রায় ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা।
জানা যায়, সারাদেশের ন্যায় কুলাউড়ার জয়চন্ডি ইউনিয়নে অবস্থিত মেরিনা চা বাগানে অনুষ্ঠিত চা শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে ভোট গণনায় খোকা নায়েক-আব্দুল করিম পরিষদ ঘোড়া প্রতিকে ২৮২ ভোট এবং দূর্জয় ওয়াং-রমজান চাকা প্রতীকে ২৬৯ ভোট পায়। প্রিসাইডিং অফিসার ও উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শরীফুল ইসলাম এই ফলাফল ঘোষণার সাথে সাথে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরাজিত দূর্জয় ওয়াং-রমজান পরিষদ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের অভিযোগ ফলাফল ঘোষণার আগেই খোকা নায়েক-আব্দুল করিম পরিষদ মালা বদল করছিলো, আনন্দ উদযাপন করে। তাই আপাত দৃষ্টিতে এটা পাতানো ফলাফল। কিন্তু বিজয়ীদের দাবী, শ্রমিকরা আমাদের ভালোবাসে। আমাদের বিশ্বাস ছিলো আমরা বিজয়ী হবো। তাই আগে থেকেই আমরা আনন্দ উৎযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এহেন পরিস্থিতি দুই পক্ষের অনড় অবস্থানে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে প্রায় ৪ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকেন। খবর পেয়ে মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) মোঃ আবু ইউসুফ ও কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌঃ মোঃ গোলাম রাব্বী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদি উর রহিম জাদিদ ঘটনাস্থলে যান। পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ চা শ্রমিকদের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনে প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন। উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা হবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করলে উভয় পক্ষ সন্তুষ্ট হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সকলের সম্মতিতে নির্বাচনে সম্পৃক্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী মেরিনা চা বাগান থেকে ফিরে আসেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) মো. আবু ইউসুফ জানান, অভিযোগকারীরেদর সকল অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শোনলাম। নৈতিকতা ও আমাদের উপরে বিশ্বাস রাখার কথা বললাম। এক পক্ষ দাবী করছিলো ফলাফল ঘোষণার আগেই প্রতিপক্ষ আনন্দ উৎযাপন করছিলো। তাই তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। সংঘর্ষের আশংকার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সাথে মতবিনিময় করি। পরে জেলা প্রশাসক ও এসপি’র মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে বলে আশ্বস্ত করলে তার উভয় পক্ষ সন্তুষ্ট হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চা শ্রমিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার চৌঃ মোঃ গোলাম রাব্বী বলেন, বিক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা দুই তিনটি বিষয়ে অভিযোগ করছিলো। আমরা তাদের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস প্রদান করি। আজ সোমবার (২৫ জুন) তারা অতিরিক্ত সচিব ও শ্রম অধিদপ্তরের মহা পরিচালক এবং এই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব শিবনাথ রায় বরাবর উপজেলা প্রশসানের মাধ্যমে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছে। আমি তা ফরোয়ার্ড করে দিব।
উল্লেখ্য, সারাদেশে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৪ জুন বুধবার। পঞ্চায়েত, ভ্যালি এবং কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ এই তিনটি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় এই নির্বাচন। নির্বাচনে দেশের ২২৮টি চা বাগানের (ফাঁড়ি বাগানসহ) মোট ৯৭ হাজার ৬৪৬ জন চা শ্রমিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে । সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২২৮টি কেন্দ্রে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তিন স্তরের এই নির্বাচনের প্রথম স্তরে প্রাথমিক কার্যকরী পরিষদ, দ্বিতীয় স্তরে ভ্যালি কার্যকরী পরিষদ এবং তৃতীয় স্তরে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদমেইল২৪.কম/এনআই
Posted ৯:০৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৫ জুন ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.