
স্টাফ রিপোর্টার,সংবাদমেইল২৪.কম | শনিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২১ | প্রিন্ট
শীতকাল এলেই চা-বাগানগুলোতে চা পাতা উত্তোলন কয়েকমাস বন্ধ থাকে। এসময় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ও চৈত্রের আগমনী গরমে চা-গাছগুলো শুকিয়ে পাতা শূন্য হয়ে পড়ে। তখন অনেক বাগানে চা গাছগুলোকে সতেজ রাখার জন্য পানির পাম্প দিয়ে পানি সেচের ব্যবস্থা করা হয়। বৃষ্টির জন্য অনেক বাগানের শ্রমিকরা তখন পুজো অর্চনা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার চৈত্রের দাবদাহ গরম শুরুর আগেই গত কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হওয়ায় চা বাগানগুলো জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আগাম বৃষ্টি। কুলাউড়ার বিভিন্ন চা-বাগানে এবারের প্রথম বৃষ্টিতে চা গাছে গজিয়েছে নতুন কুঁড়ি পাতা। এ কারণে উপজেলার ছোট বড় ২৬ টি চা বাগানে এবার চায়ের ফলন দ্বিগুন মাত্রা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। ইতি মধ্যে বিভিন্ন চা-বাগানে চা চয়ন উৎসব শুরু করেছেন বাগান কতৃপক্ষ ও চা শ্রমিকরা। আনন্দঘন উৎসব মূখর পরিবেশে নারী চা শ্রমিকরা চা পাতা উত্তোলনের জন্য সকাল থেকেই দল বেঁধে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তোলার জন্য চা বাগানের বিভিন্ন টিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাতা উত্তোলন শেষে চায়ের নতুন কুঁড়ি কাপড়ে বেঁধে মাথায় করে লাইন ধরে টিলা বাবুর কাছে জমা দিতে দেখা যায়।
বাগান-সংশ্লিষ্টদের আশা, সামনের দিনগুলো আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল চায়ের চাহিদা এবং দাম সারা দেশে ও বিদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বাগান কর্তৃপক্ষ নতুন বাগান সৃজনের পাশাপাশি কারখানার পরিধিও বৃদ্ধি করেছে।
হাজিনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, শীতের শুরু থেকেই চা বাগান গুলোতে পাতা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমরা চা-গাছগুলোকে পরিপূর্ন রাখতে পানির উৎস তৈরি করে উচু পাহাড়ি টিলায় অনেক কষ্ট করে পানি তুলে গাছে দিয়ে সতেজ
রাখার চেষ্টা করি। এরপর সময়মতো বৃষ্টি না হলে আমাদের নতুন চা পাতা তুলতে এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন আগাম বৃষ্টি হওয়ায় আমরা গত সপ্তাহে চা চয়ন উৎসব শুরু করে দিয়েছি।
ক্লিভডন-দিলদারপুর চা বাগানের ম্যানেজার আব্দুল হাছিব জানান, এই সময়ে অনান্য বছর চায়ের গাছে পানি সরবরাহের জন্য গভীর নলকূপ নতুবা পানির উৎস তৈরি করে পানির পাম্পের মাধ্যমে পাইপ দিয়ে চায়ের গাছে গুড়ায় পানি দিতে বাগান কর্তৃপক্ষকে নানা হিমশিম পোহাতে হতো। এতে ব্যয় হয় প্রচুর। কিন্তু এবার গত কয়েকদিন আগাম বৃষ্টির কারনে আমাদের পানি সরবরাহের বেগ তেমন পেতে হয়নি। বৃষ্টির ফলে চা বাগানে নতুন কুঁড়ির অভাবনীয় সাফল্য দেখা দিয়েছে। ফলে এখন কুলাউড়ার পাশাপাশি সারা দেশে চায়ের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে। বৃষ্টির কারণে চায়ের গুণগত মানসহ চা চাষের পরিধি বৃদ্ধির জন্য পতিত এলাকায় নতুন চারা গাছ রোপণের কাজ চলছে। এই বৃষ্টি বাগানের জন্য অনেক উপকারী,বিশেষ করে নতুন চা গাছের জন্য।
লোহাইউনি-হলিছড়া চা বাগানের জিএম মোঃ মাবুদ আলী বলেন, এবার আগাম বৃষ্টি হওয়ায় ইতিমধ্যে আমরা শ্রমিকদের দিয়ে চা পাতা উত্তোলন করে প্রথমধাপে চা-পাতা বিক্রি করেছি। এই বৃষ্টি চা বাগানের জন্য অনেক আর্শিবাদ। তবে গত কয়েকদিন থেকে টানা প্রকর রৌদ্র থাকায় আবার খরার ভয়ও আমরা করছি।
সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য বছর অনেকসময় বৃষ্টিপাত দেরিতে হওয়ায় আবহাওয়াজনিত কারণে সিলেটে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ১০ ভাগ কম হতে দেখা গেছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বেশি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন চা শ্রমিকরা। এবার ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে মেঘের আগমন ঘটায় এবার ভাগ্য প্রসন্ন বলেই মনে করছেন তারা। যার ফলে বাগান চা শ্রমিকরা অনেক বেশি খুশি। মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য শুভ লক্ষণ। মনে করেন চা-বাগান মালিকরা। এই বৃষ্টির পরশে চা-গাছে গজিয়েছে নতুন কুঁড়ি। চা-উৎপাদন বৃদ্ধিতে বেশ উপকারী’ বলে অভিহিত করেছেন চা-বাগান সংশ্লিষ্টরা।
শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) এর পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, এই বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা আল্লাহর একেকটি রহমত। চা গাছের জন্য আগাম এই বৃষ্টি অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে যে ভাবে রৌদ্রের খরা চলছে এভাবে অব্যাহত থাকলে চা গাছের নীচের মাটির রস শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে ফলে চা পাতার গ্রীণ মশ্চেয়ার কমে যাবে। তবে ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হলে এবার চা উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে দিগুন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Posted ৭:১২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২১
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.