
বিশেষ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১ | প্রিন্ট
কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টিলাকাটার অভিযোগ উঠেছে। ওই চেয়ারম্যান তাঁর নিজ ইউনিয়নের ইসলামনগর এলাকায় পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে একটি বিশাল টিলা অবৈধভাবে কেটে মাটি বিক্রি করছেন প্রকাশ্যে।
এছাড়া ওই টিলার মাটি কেটে একটি প্রাথমিক স্কুল ও রাস্তা নির্মাণ করারও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ওই এলাকায় আরো বেশ কয়েকটি টিলা কাটার সাথে আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। দিনে-রাতে মাটি কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ ও পরিবহনের কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি সবুজ প্রকৃতি বিলিন হতে যাচ্ছে। এদিকে টিলা কাটার ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ এলাকার ৭ জনের বিরুদ্ধে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে ভাটেরার ইসলামনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইসলামনগর মৌজার অধিকাংশ ভূমি টিলা আকৃতির। এ অঞ্চলে পাহাড়ি টিলার মধ্যেঅধিকাংশ বাড়ি-ঘর রয়েছে। ভাটেরা ইউনিয়নের ইসলামনগর এলাকায় আর এস ২৮৬ নং দাগে টিলা বাড়ি ১.৭২ একর ভূমির মধ্যে ০.৯৯ একর ভূমি ৩৫৭ নং খতিয়ানে টিলাটি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম গং এর মালিকানাধীন। সেখানে টিলা কেটে চেয়ারম্যান তাঁর বাবা-মায়ের নামে সৈয়দ সাজিদ পিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল ও এর পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন। টিলার আশপাশে ৪-৫টি বসত বাড়ি রয়েছে। এছাড়া ওই এলাকায় পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে শতকরা প্রায় অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ি টিলা কেটে নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে এলাকার নিজাম মিয়া,সিরাজ মিয়া, মতিন মিয়া, নুরই মিয়া তাদের বসত বাড়ির পাশে টিলাগুলো কেটে মাটি বিক্রি করছেন প্রতিনিয়ত। ফলে এই বর্ষা মৌসুমে যেকোন সময় টিলা ধ্বসে বসতবাড়ির ক্ষতিসহ প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে টিলা কাটার খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা গত ৩১ মার্চ বুধবার সরজমিন টিলা কাটার স্থান পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে তিনি সিলেট অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালকের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠান। পরে বিভাগীয় পরিচালক এমরান হোসেন ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম, ইসলামনগর এলাকার বাসিন্দা নুরুল মিয়ার স্ত্রী বেগুন বেগম, তৈয়ব আলীর ছেলে নুরই মিয়া, নিজাম মিয়া, মতিন মিয়া,শুকুর মিয়া ও সিরাজ মিয়ার নামে নোটিশ পাঠান।
অভিযুক্ত মতিন মিয়া বলেন, তিনি টিলার মাটি কাটেননি। টিলাটি তাঁর রেকর্ডীয় ভূমি। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার শামীম আহমদ রাস্তার মেরামত কাজের জন্য শ্রমিকদের দিয়ে টিলার মাটি কেটেছেন।
মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা মুঠোফোনে বলেন, সরেজমিন পরিদর্শনে অনুমোদন ছাড়া টিলা কাটার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার সাথে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ এলাকার বেশ কয়েকজন জড়িত। টিলা কাটায় ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানসহ ওই এলাকার ৭ জনকে অধিদপ্তর থেকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। আগামী ১১ এপ্রিল সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ে এর শুনানী অনুষ্ঠিত হবে।
ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম টিলা কাটার অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, স্কুল করার জন্য ওই এলাকায় সমতল কোন জমি নেই। তাই এলাকার ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার সুবিধার্থে আমার টিলা কেটে স্কুল ও মসজিদ নির্মাণ করি। তাছাড়া ৩৩ শতাংশ জমিটি শিক্ষা সচিবের নামে রেজিস্ট্রিও করে দিয়েছি। স্কুলের পাশে ছোট্ট একটি কাঁচা রাস্তা ছিল সেটি পাঁকাকরণ করার জন্য গতবছর ওই টিলা থেকে মাটি কেটে দেয়া হয়েছে। টিলা কাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি কোন অনুমতি নেননি। মানুষের প্রয়োজনে তিনি এসব কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ওই জমির মালিক নন বলে জানান।
সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, টিলা কাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৭জনের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। শুনানীতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, কোন অবস্থাতেই টিলা-পাহাড় কাটা যাবেনা। যারা পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, টিলা কাটার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সরেজমিন তদন্তপূর্বক পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কুলাউড়ায় টিলা-পাহাড় কাটার বিষয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
Posted ৫:৪২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.