
বিশেষ প্রতিনিধি :: | সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২ | প্রিন্ট
কুলাউড়ার বরমচাল রেল স্টেশনে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। প্রতিদিন ঢাকাগামী উপবন (৭৪০), সিলেটগামী উপবন (৭৩৯) ও চট্টগ্রাম অভিমূখী উদয়ন (৭২৪) এবং সিলেটগামী পাহাড়িকা (৭১৯) এক্সপ্রেস সহ চারটি আন্ত:নগর ট্রেনের স্টপেজ থাকলেও যাত্রীদের বাড়েনি কোনো আধুনিক সেবার মান। মান্দাতার আমলের সেই পুরনো লোকাল ট্রেনের মতো পরিষেবা নিয়েই যাত্রী ও কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্টেশনটি ব্যবহার করছেন। সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের মধ্যে একসময় বরমচাল রেলস্টেশনটিতে শুধুমাত্র লোকাল ট্রেনের স্টপেজ ছিলো সেই সময় কাঠ ব্যবসায়ী ও টিকেটবিহীন যাত্রীদের দখলে ছিলো লোকাল ট্রেন গুলো। কিন্তু ২০১৯ সালের ২৪ জুন রাতে ঢাকাগামী উপবন ট্রেন ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়লে আন্ত:নগর ট্রেনের স্টপেজের ভাগ্য খোলে বরমচাল রেল স্টেশনের। বদলে যায় চিরচেনা লোকাল ট্রেনের সেই দৃশ্যপট। সেই সময় রেল দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে চারজন যাত্রী নিহত হলে সারাদেশে সেই দুর্ঘটনায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। ঘটনার দুদিন পর ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরমচাল রেলস্টেশনে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বর্তমান রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দীন আহমদ।
এসময় স্থানীয়রা মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপির মাধ্যমে জোর দাবি জানান, বরমচাল স্টেশনে অন্তত দুটি আন্ত:নগর ট্রেনের স্টপেজ ও স্টেশনে আধুনিকায়নের। সভাস্থলেই মন্ত্রী স্থানীয়দের দাবি পূরণের আশ্বাস প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে সুফলও পেয়ে যায় বরমচালবাসী। ২০২১ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামগামী ৪টি আন্ত:নগর ট্রেন প্রতিদিন বরমচাল রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি শুরু করে। এতে আনন্দের ঢল নামে বরমচাল স্টেশনসহ স্থানীয়দের মধ্যে। কিন্তু প্রায় দেড় বছর থেকে আন্ত:নগর ট্রেনগুলো এ স্টেশনে যাত্রাবিরতি শুরু করে যাত্রীদের বহন করলেও বাড়েনি স্টেশনের আধুনিকায়ন ও যাত্রীদের সেবার মান। স্টেশন মাস্টারের রুমসহ বিভিন্ন রুমে টিনের চাল দিয়ে বৃষ্টির সময় পানি পড়ে। যাত্রীদের বসার কোনো স্থান নেই। নেই কোনো মানসম্মত বিশ্রামাগার। বিশুদ্ধ পানির জন্য নেই কোনো টিউবওয়েল। যাত্রীদের জন্য বাথরুম থাকলেও সেটিতে নেই কোনো পানির ব্যবস্থা। স্টেশনের অদূরে ঝোঁপ-জঙ্গলে ভরে গেছে। নিরাপত্তাহীনভাবে আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রীরা যাতায়াত করছেন প্রতিনিয়ত। জনবল সংকটেও ধুকছে বরমচাল রেল স্টেশনটি। কর্তব্যরত তিন স্টেশন মাস্টারের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন, তাও একজন চুক্তিভিত্তিক। পয়েন্টমেন্ট ৬ জনের স্থলে আছেন মাত্র ৩ জন। ২জন পিয়ন থাকার কথা থাকলেও নেই কোনো পিয়ন । এছাড়াও স্টেশনের টয়লেট পরিষ্কারের জন্য স্থায়ীভাবে নেই কোনো সুইপার। এ যেনো মরার উপর খড়ার গা। স্টেশনটি দেখলে বুঝার উপায় নেই যে এখানে প্রতিদিন ঢাকা এবং চট্টগ্রামগামী চারটি আন্তনগর ট্রেন যাত্রা বিরতি করে।
সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের যাত্রী আব্দুল মোক্তাদির, দেলোয়ার হোসেন, হনুফা বেগম, ছাত্র আশরাফ হোসেন জানান, স্টেশনে যাত্রীদের বসার কোনো স্থান নেই। টয়লেট থাকলেও তাতে পানি নেই। প্লাটফর্ম না থাকায় ট্রেন স্টেশনে ঢুকলে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে উঠতে হয় যাত্রীদের। মাত্র ৫টি টিকেট বরাদ্দ থাকায় অনেক যাত্রীরা বিনা টিকেটে রেলে ভ্রমণ করতে বাধ্য হন।
বরমচাল রেল স্টেশনে কর্তব্যরত মাস্টার শফিকুল ইসলাম কাজল স্টেশনের নানা দুরবস্থার কথা স্বীকার করে জানান, স্টেশনে একসময় শুধু লোকাল কয়েকটি ট্রেন যাত্রাবিরতি করতো। কিন্তু মন্ত্রীর ঘোষণার পর আন্ত:নগর ট্রেন যাত্রাবিরতি করায় প্রচুর সংখ্যক যাত্রী প্রতিদিন ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেটে যাতায়াত করছেন। প্রতিটি ট্রেনে মাত্র পাচটি টিকেট বরাদ্দ থাকলেও যাত্রীর চাহিদা দ্বিগুণ। অনেকের কাছে সীট বিহীন টিকেট বিক্রি করতে হয়। এছাড়াও স্টেশনে প্লাটফর্ম ও শেড না থাকায় যাত্রীরা ঝড় বৃষ্টির সময় ভিজে ট্রেনের কামরায় উঠতে হয়। বিশুদ্ধ পানির জন্য কোনো টিউবওয়েল বা সাপ্লাই না থাকায় টয়লেট ব্যবহারেও কোনো পানির ব্যবস্থা নেই।
এব্যাপারে উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী কার্য, বাংলাদেশ রেলওয়ে কুলাউড়ায় কর্মরত জুয়েল হোসাইন বলেন, সারাদেশে স্টেশনগুলোতে যেভাবে সংস্কার হচ্ছে সেই ধারাবাহিকতায় বরমচাল স্টেশনের আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। শিঘ্রই টয়লেটের পানির ব্যবস্থাসহ কাজ শুরু করা হবে।
Posted ৩:১৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.