
কুলাউড়া সংবাদদাতা :: | শনিবার, ১২ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি যুগীটিলা এলাকার গৃহীন পাহাড়ের চূড়ায় একটি বাড়িতে নতুন জঙ্গি সংগঠন “ইমাম মাহমুদের কাফেলার” আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। ১১ আগষ্ট শুক্রবার রাত থেকে ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর ১২ আগষ্ট শনিবার সকালে অপারেশন “হিল সাইড” নাম দিয়ে অভিযান শুরু কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট( সিটিটিসি) পুলিশ। সাড়ে ৫ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেনেড তৈরীর ৫০ টি ডেটোনেটর,বিপুল পরিমাণ বিস্ফোর দ্রব্য, নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার, ৫০টি ডেটোনেটর, আড়াই কেজি বিস্ফোরক, প্রশিক্ষণ সামগ্রী ও বিপুল পরিমান জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের মজুতদকৃত অনেক খাদ্যদ্রব্যও পাওয়া গেছে। এই অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ অঙ্কুরে ধ্বংসের ও দাবি করে পুলিশ।
অভিযানে ৪ পুরুষ ও ৬ নারী জঙ্গি সহ ৩ শিশুকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন: সাতক্ষীরা জেলার নলতা উপজেলার ওমর আলীর ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪০), কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার আবুল কাসেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা উপজেলার নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২৩), সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ইসলাম (২২), খায়রুল ইসলামের স্ত্রী মেঘনা বেগম (১৭),খায়রুল ইসলামের ছেলে ১২ মাস বয়সী কন্যা আবিদা, পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২) ও তার দুই কন্যা (১৮) মাস বয়সী জুবেদা আক্তার এবং ৬ বছরের হুজাইফা আক্তার, নাটোর জেলার সাইদুল ইসলামের মেয়ে মাইশা ইসলাম (২০), বগুড়া জেলার শরিয়াকান্দি উপজেলার আব্দুল জলিলের মেয়ে সানজিদা খাতুন (১৮), সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার জলমত খানের মেয়ে আমিনা বেগম (৪০) ও আমিনা খাতুনের মেয়ে মোছাঃ হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০) ।
প্রায় ৫ ঘন্টার এক রুদ্ধশ্বাস অভিযানে ‘ ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামক নতুন ওই জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করার দাবি করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট( সিটিটিসি)। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও সোয়াটের অভিযান শেষে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান যুগ্ম কমিশনার আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে গণমাধ্যম কর্মীদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, তাদের কাছে এধরণের তথ্য আসে গত ৮-১০ দিন আগে। এর আলোকে আমাদের অভিযান শুরু হয়। এক জঙ্গি শুক্রবার পরিবারের লোকদের আনতে ঢাকায় গেলে আমরা তাকে গ্রেফতার করি। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে ‘ ইমাম মাহমুদের কাফেলা ‘ নামক নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তার পরপরই তাদের বিভিন্ন ইউনিট বাড়িটি ঘিরে রাখে। পরে পুলিশের জঙ্গি বিরোধী ইউনিট সোয়াত এই অভিযানে যোগ দেয়। আজ ভোর সাড়ে ৬ টায় অভিযান শুরু করলে কোনো বলপ্রয়োগ ছাড়াই সকাল সাড়ে ১০ টায় ‘অপারেশন হিল সাইড’ নামক আমাদের এই অভিযান শেষ হয় ।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জান আরো বলেন, অভিযান কালে সেখান থেকে ১০ জন জঙ্গিকে আটক ও তাদের সাথে ৩ টি শিশুকে ও আটক করা রয়েছে। সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান দাবি করেন আটক জঙ্গিদের ভাষ্য এবং আমাদের তথ্য মতে তারা এই জমি কিনে প্রায় দেড়মাস আগে এখানে আস্থানা গড়ে তুলে । এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান করার পরিকল্পনা নিয়েছিলো এই জঙ্গি সংগঠন। তিনি এই জঙ্গি সংগঠন অঙ্কুরে বিনষ্ট করতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,তাদের কাছে এখানে কারা আসতো এবং তাদের সহযোগীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযানে অংশ নেন যুগ্ম কমিশনার কামরুজ্জামান, সিটিটিসির নাজমুল ইসলাম, সোয়াট কামান্ডার এডিসি জাহিদ, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. মঞ্জুর রহমান পিপিএম ও কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুছ ছালেক প্রমুখ সহ স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে কর্মধা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মাহমুদা আক্তার জানান, যে বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে ওই বাড়ির বাসিন্দা এরা নয়। কয়েকদিন থেকে এরা এখানে বসতি গেড়েছে। এলাকার কারো সাথে খুব একটা মিশতো না। চলাচল ছিলো সন্দেহজনক।
কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানান, তার ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রাামের বাইশালী বাড়ি নামক পাহাড়ী এলাকা এরা বসতি শুরু করে। কিভাবে এখানে এসেছে তা নিশ্চিত নয়। বসতি খুব বেশি দিন না হওয়ায় জানাজানিও হয়নি।
Posted ৩:১৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১২ আগস্ট ২০২৩
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.